কুমিরের নাম শুনলেই ভয় লাগে। হিংস্র এই প্রাণীর কাছাকাছি গেলেই নিশ্চিত বিপদ। শুধু কি মানুষ, কুমিরকে ভয় পায় অন্যান্য প্রাণিরাও। কারণ, মুখের কাছে যা পায় তাই গিলে খায় সে। তবে প্লোভার নামের পাখি একদমই ভয় পায় না কুমিরকে। তার মুখের ভেতর গিয়ে খুশি মনে বেরিয়ে আসে। কি অদ্ভুত না?
এই পাখিকে কুমিরের একমাত্র বন্ধু বলা যায়। সম্প্রতি কুমিরের মুখের ভেতর বসে থাকা একটি প্লোভারের ছবি ভাইরাল হওয়ার পরই নতুন করে আলোচনায় আসে এই পাখি। জানা যায় কুমির ও প্লোভারের বন্ধুত্বের কথা প্রায় ৮০০ বছর আগের ‘আজাইবুল মাখলুকাত’ কিতাবেও বলা হয়েছিল।
এই জাতের পাখিগুলো নিশ্চিন্ত মনে কুমিরের মুখ থেকে ঘুরে আসতে পারে। মূলত কুমিরের দাঁতের ভেতর একরকম কীট জন্মে, যা তাদের দাঁতে জ্বালা সৃষ্টি করে। এর ফলে দাঁতের গোড়া ফুলে যায় এবং কুমির কষ্ট পায়। অন্যদিকে এই কীটই প্লোভার পাখির আহার।
দাঁতের যন্ত্রণা বেড়ে গেলে কুমির হা করে বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানায়। আশেপাশে প্লোভার পাখি থাকলে কোনো রকম চিন্তা ছাড়াই প্রবেশ করে কুমিরের মুখে। কখনো একটি কখনো তার চেয়ে বেশি পাখি চলে যায় হিংস্র এই পাখির মুখে। এরপর দাঁতে লেগে থাকা খাদ্যকণাগুলো খুটে খুটে খায়। সেসঙ্গে বের করে আনে ভেতরের পোকা-মাকড়ও।
এ সময় কুমির মুখ বন্ধ করলেই পাখিগুলো উদরসাৎ হয়ে যাবে! কিন্তু যারা তাদের দাঁতের ব্যথা দূর করছে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ কখনোই করে না তারা। আর তাই পুরো সময় মুখ খুলেই রাখে কুমির।
ওপরের ছবিটি ইমাম আবু আব্দুল্লাহ বিন জাকারিয়া বিন মুহাম্মাদ আল কোযয়িনী এর লিখিত কিতাব ‘আজাইবুল মাখলুকাত’ থেকে সংগৃহীত করা হয়েছে। এই কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, এমন এক জাতের পাখি আছে যারা কুমিরের দাঁতের মধ্যে নিজের খাবার খুঁজবে; এতে কুমিরও শান্তি পাবে।
পশ্চিম আলাস্কা ও দক্ষিণ-পূর্ব সাইবেরিয়ার পাখি প্লোভার। তবে এরা প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে শীত কাটায়। শত শত বছর ধরে আফ্রিকান কুমিরদের দাঁত রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে প্লোভার পাখিরা। বিনিময়ে পাচ্ছে নিজেদের আহার। কখনো বিপদের আভাস পেলে চিৎকার জুড়ে দেয় পাখিগুলো। আর সেই চিৎকার শুনে কুমিরগুলো দ্রুত চলে যায় নিরাপদ দূরত্বে। সত্যিই দারুণ বন্ধুত্ব এদের।