Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ব্যয় বাড়ায় অস্থির পোশাক শিল্প

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৩:২০ PM
আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০৩:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


অসম অসুস্থ প্রতিযোগিতায় রপ্তানিমূল্যও প্রতিনিয়ত কমছেএসব কারণে রপ্তানিবাণিজ্যে ৮৪ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী সম্ভাবনাময় তৈরী পোশাক শিল্প খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছেআয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন কারখানাগত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১৩০০ কারখানাবাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাই অসন্তোষস্বল্পসংখ্যক বড় কারখানার কথা বাদ দিলে বেশির ভাগ কারখানার জন্য কোনো সুসংবাদ নেই আগামী দিনের রপ্তানি আদেশেও

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বিগত তিন মাসের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে তৈরী পোশাকের নিট ও ওভেন উভয় খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও প্রবৃদ্ধি কোনোটাই অর্জিত হয়নি। পোশাক খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। এ ছাড়া প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১০ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়, সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স, পৌরকর এবং বন্দর খরচ; অন্য দিকে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছ ৫১ শতাংশ। কিন্তু পণ্যের দাম সে তুলনায় বাড়েনি, উল্টো কমেছে। অন্য দিকে কমেছে রপ্তানিরও।

গত আগস্ট মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৬৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ সময় আয় হয়েছে ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ডলার। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের এ সময় আয় হয়েছিল ৬৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। একই সাথে ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরী পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ০.৩৩ শতাংশ। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলার, আয় হয়েছে ৫৭১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ কম।

এ সময় নিট পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩১৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। আর আয় হয়েছে ২৯২ কোটি ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। ওভেন পোশাকে আয় হয়েছে ২৮৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪.৪৬ শতাংশ কম। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩২৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে বিশ্বে পোশাক রপ্তানি ছিল ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৪ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে, যা মূল্যভিত্তিক বাজার প্রতিযোগিতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। রপ্তানি বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকা, দীর্ঘ লিড টাইম এবং শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম থাকায় প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে।

আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মজুরি বেড়েছে ৫১ শতাংশ। মনে করেন, একটি ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের মাসিক বেতন আসে এক কোটি টাকা। নতুন কাঠামো অনুযায়ী ওই মালিককে এখন বেতন দিতে হবে এক কোটি ৫১ লাখ টাকা। তাহলে কি ওই ফ্যাক্টরি বিগত দিনে মাসে ৫১ লাখ টাকা হারে লাভ করেছে? অসম্ভব! তাহলে এই বাড়তি টাকাটা আসবে কোত্থেকে? জায়গা একটাই, বায়ারদের কাছ থেকে ফিনিশড পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিতে হবে। অথবা অন্য খরচ কমাতে হবে। যদিও এটা অনেক কঠিন। কারণ এ দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সবকিছুরই বিল দিনে দিনে বাড়ছে।

বায়াররা দাম না বাড়ানোর কারণে এক সিজন অর্ডার ফিরিয়ে দেয়ায় তার কোম্পানির রপ্তস্নি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কিন্তু খরচ তো আর কমেনি, মাস শেষে শ্রমিকের বেতনসহ ফ্যাক্টরির যাবতীয় খরচ, ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ, কোনো কিছুই কিন্তু থেমে থাকেনি। গত এক বছরেও সে ধকল কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, তৈরী পোশাকের উৎপাদন খরচ প্রতি বছর গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। বিপরীতে উৎপাদিত পণ্যের দাম না বেড়ে প্রতিনিয়ত কমছে।

Bootstrap Image Preview