Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবশেষে সাত ‘খুঁটি’র নাম-পরিচয় জানালেন সম্রাট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪২ AM
আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪২ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই অকপটে সব বলে দিচ্ছেন। 

কাদেরকে তিনি সুবিধা দিতেন এবং বিনিময়ে নির্বিঘ্নে ক্যাসিনো সাম্রাজ্য ও চাঁদাবাজি টিকিয়ে রেখেছিলেন তা জানিয়েছেন সম্রাট। ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো কারবার এবং চাঁদাবাজি চালিয়ে যেতে প্রভাবশালী সংসদ সদস্য, যুবলীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়মিত টাকা দিয়েছেন।

এই সুবিধার বিনিময়ে তিনি কোনো সমস্যায় পড়লে তাঁরা সহযোগিতা করতেন। তিনিও তাঁদের নাম ভাঙিয়ে চলতেন। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা বলেছেন সম্রাট। সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে সাতজনকে ‘খুঁটির জোর’ বলে দাবি করেছেন তিনি।

একাধিক র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, সম্রাট তাঁর খুঁটি হিসেবে যাদের নাম-পরিচয় দিয়েছেন তারা হলেন- গোপালগঞ্জের একজন সংসদ সদস্য (এমপি), যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, বর্তমানের এক এমপি যিনি আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পূর্ব বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এবং মতিঝিল অপরাধ বিভাগের আরেকজন এডিসিকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছেন সম্রাট। তাঁর দাবি, এ সাতজনই ছিলেন ক্যাসিনোসহ তাঁর সব কারবারে খুঁটির জোর।

সম্রাটের অপকর্মের সঙ্গে এই সাত ব্যক্তির সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে সম্রাটের বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্র আরো জানায়, গ্রেপ্তারের পরই সম্রাট তাঁর সাত খুঁটির জোরের কথা বলেছেন। এরপর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেও একই ধরনের দাবি করেছেন। তিনি বলছেন, ‘টাকা তো অনেকে খেয়েছে! আমি একা ফাঁসব কেন?’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা (সাবেক) মাগুরার এক নেতাকে প্রতি মাসে টাকা দিতেন সম্রাট।

ওই ‘ভাইয়ের’ সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে অনেকে তাঁকে সমীহ করত। সম্রাটের দাবি করা সেই ‘বড় ভাই’ এখন এমপি। ক্যাসিনো কারবারে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের টাকার বড় ভাগটি নিতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা কাওছার। তাঁকে সেখান থেকে আয়ের ৩৫ শতাংশ টাকা পকেটে নেওয়ার ব্যবস্থা সম্রাটই করে দেন।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্রাট অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তাঁর অবৈধ আয় থেকে ডোনেশন দিয়েছেন। অনেক ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে এসেছেন। তবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালাতে এবং চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখতে তিনি কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়মিত ১০ লাখ থেকে অর্ধকোটি টাকা পর্যন্ত মাসে ‘নজরানা’ দিয়েছেন। এই তালিকায় সবার ওপরে গোপালগঞ্জের একজন প্রভাবশালী এমপি, যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক আছে প্রকাশ করে প্রভাব দেখাতেন সম্রাট। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর বিভিন্ন প্রয়োজনও মেটাতেন সম্রাট। কর্মী ও ক্যাডার সরবরাহ করার দায়িত্বও ছিল সম্রাটের।

নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে কখনো ‘বস’, কখনো ‘লিডার’ কখনো ‘গুরু’ বলে ডাকতেন সম্রাট। কাকরাইলে তাঁর দখল করা ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের পাঁচতলায় শাওনের জন্য আলিশান অফিস করে দেন সম্রাট। এ ছাড়া চাঁদাবাজিসহ অনেক কাজে শাওনের সহায়তা নেন তিনি। শাওনও বিভিন্ন কাজে সম্রাটকে ব্যবহার করতেন। ভিক্টোরিয়া ক্লাবে কাউন্সিলর সাঈদের মাধ্যমে সংগৃহীত টাকার একটা অংশ যেত শাওনের হাতে।

গত মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত দুই মামলায় সম্রাটের পাঁচ দিন করে ১০ দিন এবং আরমানের এক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই দিন বিকেলেই দুজনকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। বুধবার মামলার তদন্তভার র‌্যাবে হস্তান্তর করা হলে বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-১ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গতকাল ছিল সম্রাট ও আরমানের রিমান্ডের চতুর্থ দিন।

এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের এক মাস পার হয়েছে শুক্রবার। এই অভিযানে ২২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম, কাউন্সিলর রাজীবসহ সুপরিচিত ৯ জন রয়েছেন।

এক মাসের এই অভিযানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক ও অস্ত্র আইনে দায়ের করা ১১টি মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব। মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা ৮টি মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এই অভিযানের মূল দায়িত্বে রয়েছে র‌্যাব। সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এই অভিযান চলমান থাকবে।

 

Bootstrap Image Preview