Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডাকসুর জন্য নিয়ম না মেনেই এমফিলে ভর্তি হন গোলাম রাব্বানী!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৪৬ PM
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক ও জিএস গোলাম রাব্বানীর ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান নিয়ম না মেনে রাব্বানীর ভর্তিতে সহযোগিতা করেন।

এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিলে এমফিল শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। চলতি বছরের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, ২০০৭-২০০৮ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১১ সালে স্নাতক সম্পন্ন করা গোলাম রাব্বানী এ নির্বাচনে অংশ নিতে নিয়ম না মেনে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের এমফিলের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে তিনি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমানের আনুকূল্য পান বলে অভিযোগ ওঠে।

রেজিস্ট্রার ভবন সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ২০১৮-১৯ সেশনে এমফিলে ভর্তির জন্য আবেদন আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় কর্তৃপক্ষ। ১০ অক্টোবর ছিল দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ তারিখ।

নিয়ম অনুযায়ী, যেসব আবেদন জমা পড়ে তা থেকে চূড়ান্তভাবে কয়েকটি বেছে নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিভিন্ন অনুষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি বিভাগ। এ অনুষদের সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ জানুয়ারি।

তবে সে সভায় অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো এমফিল প্রস্তাবনা উপস্থাপিত হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সভা অনুষ্ঠিত হয় ২২ জানুয়ারি। আর ২৪ জানুয়ারি হয় একাডেমিক কাউন্সিলের সভা।

১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদগুলোর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী ১১ মার্চ ডাকসুর ভোট সম্পন্ন হয়। বহুল বিতর্কিত ভোটে জিএস পদে নির্বাচিত হন রাব্বানী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রত্যেক থিসিস প্রস্তাবনা পাঁচটি ধাপে অনুমোদিত হওয়ার পর প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল গবেষক হিসেবে ভর্তির সুযোগ পান।

যার শুরু হয় নির্দিষ্ট বিভাগের সব শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে। এরপর তা সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের সভাপতিত্বে সব বিভাগের চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপকদের সমন্বয়ে অনুষদ সভায় উত্থাপিত হয়। সেখানে পাস হলে প্রস্তাবনাটি বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজে পাঠানো হয়। এ বোর্ডে উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরা থাকেন।

এরপর তা পাঠানো হয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে। উপাচার্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, সব বিভাগের চেয়ারম্যান, ডিন, পরিচালক এবং অধ্যাপকরা এ কাউন্সিলের সদস্য। কাউন্সিলে প্রস্তাবনাটি পাস হলে তা পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে।

এ পাঁচ ধাপের মধ্যে থিসিস প্রস্তাবনার খুঁটিনাটি যাচাইয়ে প্রধান ভূমিকা রাখে অনুষদ সভা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সূত্রগুলো বলছে, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের বৈঠকের সময় এবং আলোচ্য বিষয়সূচি বৈঠকের আগের দিনই চূড়ান্ত হয়। জানুয়ারি মাসে বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের যে বৈঠক হয়, সেখানে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনো এমফিল প্রস্তাবনা ছিল না।

ওই বৈঠকের দুদিন পর বিকেল ৩টায় একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শুরু হলে উপাচার্য একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে ডেকে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাঠানো তথ্য বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে যোগ করে নিতে বলেন।

সূত্র বলছে, এরপর ওই কর্মকর্তা অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাঠানো আবেদন নিয়ে আসেন। সেখানে এমফিল ভর্তিচ্ছুক হিসেবে গোলাম রাব্বানী এবং আরো তিনজনের নাম লেখা ছিল। এরপর উপাচার্য বৈঠকে প্রস্তাবনাটি পাস করে দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জামাল আহমেদ বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একটি ডকুমেন্ট আসে। আমাদের বলা হয়, এর এক কপি প্রিন্ট দিয়ে তা সভার আলোচ্য সূচির সঙ্গে যুক্ত করে দিতে। যেভাবে বলা হয়েছিল, আমরা সেভাবেই করেছি’।

সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, গোলাম রাব্বানীর কোনো থিসিস প্রস্তাবনা অনুষদের সভায় আসেনি। ওই বিভাগের চেয়ারম্যান এবং এই অনুষদ সভার সদস্য। কিন্তু তিনি সেটা এখানে ওঠাননি’। অনুষদ সভায় উত্থাপিত না হলে কোনো থিসিস প্রস্তাবনারই অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। এটা হয়ত টেবিল এজেন্ডার মাধ্যমে হয়েছে’।

অনুষদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যাপার’।

এই ভর্তি প্রক্রিয়া কীভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ভালোভাবে বলতে পারবেন’।

তবে রাব্বানীর ভর্তির ক্ষেত্রে যাবতীয় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি। সবকিছু নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে সব হয়েছে’।

যেহেতু অভিযোগ উঠেছে কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেননি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

অপরাধ বিজ্ঞার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে ফোনে কথা বলবেন না বলে জানান। তিনি দু’দিন পর অফিসে এসে দেখা করে কথা বলতে বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ (প্রশাসন) জানান, আমি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না এমন হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত। উপাচার্যের যেহেতু এখতিয়ার আছে তাহলে উপাচার্যকে এ বিষয়ে তদন্ত করা উচিত।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমেদ বলেন, ‘এ এটা তো আশ্চর্যের বিষয়। কয়েকজনের জন্য তো আমরা ভর্তি প্রক্রিয়া নষ্ট করতে পারি না’।

এ বিষয়ে জানতে গোলাম রাব্বানীকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Bootstrap Image Preview