Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আবারও ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চায় হল-মার্ক, জেলে বসেই স্বামী-স্ত্রীর আবেদন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০৫:৫৫ PM
আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০৫:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


স্মরণকালের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে গত মে মাসে ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মাত্র ২ শতাংশ এককালীন নগদ জমা (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট বা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধের বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন খেলাপিরা। এ সুবিধার আওতায় নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে হল-মার্ক গ্রুপ! অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আর্থিক খাতের অন্যতম এবং বহুল আলোচিত কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়া হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দিয়ে এ সহযোগিতা কামনা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ১১টি মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তারা বর্তমানে কারাবন্দি।

অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের হোটেল শেরাটন কর্পোরেট শাখায় বিদ্যমান দায়-দেনা পরিশোধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল, পাশাপাশি পুনঃতফসিলের কিস্তি পরিশোধের নিমিত্তে ব্যাংকিং সুবিধা তথা নতুন করে ঋণ পাওয়ার সুবিধাসহ সীমিত আকারে কারখানা চালুর লক্ষ্যে সাময়িকভাবে শর্তযুক্ত জামিনে মুক্ত হওয়ার সহযোগিতা কামনা করছি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং হল-মার্ক গ্রুপভুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত প্রায় ১০০ কোটি টাকা বর্তমানে মহামান্য আদালতের আদেশক্রমে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তা অবমুক্ত করে ওই টাকা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালার শর্তানুসারে ঋণস্থিতি অর্থাৎ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃক শুধু ফান্ডেড ঋণের জন্য দায়েরকৃত মামলায় দাবিকৃত দুই হাজার ৬৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার ২ শতাংশ বাবদ ৫৪ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট হিসাবে জমা করার সুযোগ প্রদান করবেন।’

অথচ সাত বছর পার হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংককে এক টাকাও ফেরত দেয়া হয়নি হল-মার্ক গ্রুপ। এ গ্রুপের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতিসহ অন্যান্য ছোট-বড় জালিয়াতির কারণে ধুঁকছে সরকারি সবচেয়ে বড় এ ব্যাংক। জানা গেছে, প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের শর্তে সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ২০১৩ সালের আগস্টে জামিন পান হল-মার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। সে হিসেবে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিনি সময় পেয়েছেন ৭২ মাস। ১০০ কোটি টাকা প্রতি মাসে পরিশোধ করলে হিসাব অনুযায়ী আদায় হতো সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা।

কিন্তু সোনালী ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১২ সালে হল-মার্কের ঋণ জালিয়াতির খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর (মালিকের গ্রেফতারের আগে) সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়া গত ছয় বছরে এক টাকাও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকটি। বন্ধক রাখা সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে বিক্রির অনুমতি পেলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি হচ্ছে না। সূত্র আরও জানায়, জামিনের পর এ গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। পরে জেসমিনের জামিন বাতিল করা হয় এবং পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি কারাগারেই আছেন।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, হল-মার্ক গ্রুপ ২০০৮ সাল থেকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের হোটেল শেরাটন কর্পোরেট শাখার সহযোগিতায় সাভারের হেমায়েতপুর ও গাজীপুরে প্রায় ১০০ একরের অধিক জায়গায় ব্যাংক ও নিজস্ব অর্থায়নে ৬৫টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করে।

‘এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৩টি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্যক্রম চালু করে কাঁচামাল/তৈরি পোশাক স্থানীয় ও বিদেশের বাজারে রফতানি শুরু করে। ৪৩টি প্রতিষ্ঠানে বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অত্যাধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করে ৪০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দেশের জন্য মূলবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছিল।’

চিঠিতে গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি বলেন, ‘পরবর্তীতে কিছু লোকের প্ররোচনায় না বুঝে আমরা দুজন ভুল পথে পরিচালিত হই এবং ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ দায়-দেনায় জড়িয়ে পড়ি ও দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দায়েরকৃত ১১টি মামলায় ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি কারাবন্দি অবস্থায় আছি। আমাদের বন্দিকালীন হল-মার্কের শিল্পকারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় এবং অযত্ন-অবহেলায় যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা প্রায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

‘এসব কারখানা ও যন্ত্রপাতি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা এবং ৪০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দশম জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত ২নং সাব-কমিটি বরাবর হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ২০১৬ সালের ১৭ মে একটি পত্রের মাধ্যমে নিজেকে জামিনে মুক্ত করাসহ বেশকিছু সুবিধার জন্য অনুরোধ জানান।’

‘এগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তফসিলীকরণের বিদ্যমান (২০১৬ সালের) নীতিমালা শিথিলপূর্বক বিশেষ বিবেচনায় এ পর্যন্ত আমাদের কর্তৃক জমাকৃত টাকা ডাউন পেমেন্ট হিসেবে কর্তনপূর্বক হল-মার্ক গ্রুপের ১৯ টি প্রতিষ্ঠানের আরোপিত ও অনারোপিত সুদের ১০০ শতাংশ মওকুফপূর্বক সব ফান্ডেড দায় একীভূত করে তা ২০১৭ সালের জুলাই হতে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে আদায়যোগ্য করে ১২০টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘হল-মার্ক গ্রুপের ৪৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্ভাব্য নিট আয় দ্বারা পুনঃতফসিলকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব।’

হল-মার্কের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা তাদের সব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনক্ষমতা নিরূপণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধাদি প্রদানেরও আবেদন করে। একই সঙ্গে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হল-মার্ক স্পিনিং মিলস লিমিটেডের প্রকল্প ঋণ বিএমআরই’র আওতায় আমদানিকৃত মেশিনারিজ প্রকল্পে স্থাপনপূর্বক প্রতিষ্ঠানটি চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন করা হয়।

পরবর্তীতে হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডিকে শর্তযুক্ত জামিনে মুক্ত করাসহ ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ মে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করা হয়। এছাড়া কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ডেপুটি জেলার সত্যায়িত একটি পত্র চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এতেও সোনালী ব্যাংক থেকে গ্রহণ করা সমুদায় ঋণ শর্ত-সাপেক্ষে পরিশোধের অঙ্গীকার করা হয়।

‘এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, বিধায় আমাদের কারখানাসমূহে স্থাপিত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতিসহ কারখানার স্থাপনাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’- উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

‘এদিকে ব্যাংক খাতে বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ঋণগ্রহীতাদের মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত ঋণসমূহ ঋণস্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট প্রদানপূর্বক দীর্ঘমেয়াদে পুনঃতফসিল করার জন্য চলতি বছরের ১৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করে, যা একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। উক্ত নীতিমালার আওতায় হল-মার্ক গ্রুপের সমুদয় ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এমতাবস্থায় হল-মার্ক গ্রুপের ৪৩টি রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রক্ষার মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সর্বোপরি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে গৃহীত সমুদয় ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত সুবিধা হল-মার্ক গ্রুপকে প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।’

সুবিধাগুলো হচ্ছে- ‘আমার স্ত্রী জেসমিন ইসলাম এবং হল-মার্ক গ্রুপভুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত প্রায় ১০০ কোটি টাকা বর্তমানে মহামান্য আদালতের আদেশক্রমে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তা অবমুক্ত করে উক্ত টাকা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালার শর্তানুসারে ঋণস্থিতির অর্থাৎ সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃক শুধু ফান্ডেড ঋণের জন্য দায়েরকৃত মামলায় দাবিকৃত দুই হাজার ৬৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার ২ শতাংশ বাবদ ৫৪ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জমা করার সুযোগ প্রদান করবেন।

এছাড়া ঋণ পরিশোধের সময়কাল সর্বোচ্চ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ পুণঃতফসিলীকরণের অনুমতি প্রদানে বাধিত করবেন।’

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যারা ফেরত দেন না তাদের বিষয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কারও বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা করব না। তবে আশা করি, নিয়ম অনুযায়ীই সব দুষ্টু ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করে ব্যবসায় আসবেন। যেমন- ইতোমধ্যে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে ব্যবসায় ফিরতে চেয়েছে। জাগো নিউজ

Bootstrap Image Preview