দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশের অনলাইন কেনাকাটা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে প্রতারণা করছে একটি চক্র। প্রতিনিয়ত প্রতারণার অভিযোগ বাড়ছে।
অনলাইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কাছে এ অভিযোগ আসছে। দু’বছরে এ খাত থেকে প্রায় ২ হাজার অভিযোগ এসেছে।
এ ছাড়াও প্রতারিত হয়েও অভিযোগ করছে না- এমন সংখ্যাই বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারণা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়।
জানতে চাইলে ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রতারণার অভিযোগ আসছে। তবে ই-ক্যাবের সদস্য হলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের ৯৪৫ জন সদস্য রয়েছে। এর বাইরেও হাজার হাজার অনলাইন আছে। তবে কেউ প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কাছে অভিযোগ করতে পারে। তবে ই-কমার্সের বিষয়গুলো নজরদারি করার জন্য ক্যাবের প্রস্তুতি নেই বলে জানান তিনি।
তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইন বাজারের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। নিত্যনতুন পণ্যের সমাহার, বিভিন্ন ছাড় ও উপহারের কমতি নেই ভার্চুয়াল এ বাজারে। ফলে ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে বাজার। প্রতিবছর জ্যামিতিক হারে বাড়ছে লেনদেন।
চলতি বছর এ খাতে লেনদেন ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এতে উপকারের পাশাপাশি জালিয়াতিরও অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ভালো সাইট বা পেজের নকল করে জালিয়াতি করছে অনেক চক্র।
গত ৬ জুন একটি ফেসবুক পেজ থেকে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ প্লাস ক্লোন মোবাইল অর্ডার করে ছিলেন বগুড়ার এক ক্রেতা। যার মূল্য ছিল চার হাজার টাকা। উনি তাদের কথামতো প্রথমে একশ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম পরিশোধ করেন।
বাকি টাকা কুরিয়ারে পণ্য পেলেই পরিশোধ করার কথা। এরপর ১১ জুন এসএ পরিবহন বগুড়া শাখা কুরিয়ার থেকে চার্জসহ পুরো টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু ফোনটির প্যাকেট খুলে দেখেন এটি একটি নোকিয়া ফিচার ফোন।
যেটির বাজারমূল্য পাঁচ থেকে সাতশ টাকা। এরপর ওই পেজে বা ফোনে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এভাবে প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ আসছে।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে প্রতারণার অভিযোগ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে যেসব অনলাইনের ঠিকানা রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর যেসব অনলাইনের ঠিকানা নেই অর্থাৎ ভুয়া অনলাইন, সেগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
ই-ক্যাবের তথ্যানুসারে বর্তমানে দেশে তাদের সদস্যভুক্ত অনলাইন বাজারের সংখ্যা ৯৪৫। আগামী মাসেই তা ১ হাজারে পৌঁছাবে। এ ছাড়াও ফেসবুক পেজ রয়েছে আরও ১০ হাজার। এসব মাধ্যমে প্রতিদিন ৪০ হাজার অর্ডার ডেলিভারি হচ্ছে।
আর মাসে ডেলিভারি হচ্ছে ১০ লাখের বেশি। সংস্থাটির মতে, এ খাতে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। তবে প্রতারণায় মানুষের আস্থা কমছে।
প্রতারণা এড়াতে করণীয় : অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা এড়াতে মোট ৯টি পরামর্শ দিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে রয়েছে- কম দামে লোভনীয় অফার এড়িয় চলা, প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ, ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না যাচাই, বিকাশে পেমেন্টের ক্ষেত্রে নম্বর যাচাই, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে রসিদ ও ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য গ্রহণ, ফেসবুকে কেনাকাটায় গ্রুপ বা পেজের রিভিউ দেখে নেয়া, বিশ্বাসযোগ্য পেজ গ্রুপ থেকে অর্ডার করা, পণ্য হাতে পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করা যায় এমন গ্রুপ পেজ থেকে কেনাকাটা এবং সব ধরনের রসিদ সংরক্ষণ করা।
জানা গেছে, অনলাইন নতুন কোনো ব্যবসা নয়। এটি হল গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছানোর মাধ্যম। ইন্টারনেটের সাহায্যে যেখানে যখন খুশি কেনাকাটা করা যায়। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হচ্ছেন।
যানজটের ঝুঁকি এড়ানো, শ্রম এবং সময় বাঁচানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দিন দিন অনলাইনে ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। বিদেশের নামি ব্র্যান্ডের পণ্য অর্ডার দিলেও দেশে বসেই এসব পণ্য পাওয়া যায়।
ওই সব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে। এ কারণে চলতি বছরে অনলাইন বাজারের লেনদেন ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে ই-ক্যাব। ২০১৮ সালে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে যা ছিল ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
আর ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছরই এ খাতের পরিধি বাড়ছে। অনলাইনে সাধারণত দু’ভাবে বেচাকেনা হয়। কিছু কিছু ওয়েব পোর্টালে পণ্যের ছবি, দাম, যোগাযোগের নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে।
আগ্রহী ক্রেতারা বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর কিছু কিছু ওয়েবসাইটে, নিজেরাই পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ করেন। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার কাজ শুধু পণ্য পছন্দ করে অনলাইনে অর্ডার দেয়া।