দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল সকালে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা দরে। দুপুরের পরে চার টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৪৬ টাকায়। গত রবিবার বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকায়। অর্থাৎ তিনদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ২০ টাকা।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দেশি মৌসুম শেষ হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে আমদানি পেঁয়াজের। আর এটিকে পুঁজি করে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে জড়িত একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারতে লরি ধর্মঘট ও দাম বৃদ্ধি, ঈদের ছুটিতে সীমান্তে এক সপ্তাহ বাণিজ্য বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের ঘাটতি এবং বিগত সময়ে লোকসানে আমদানির কারণে দাম বেড়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, অধিক মুনাফা করতেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়েছে।
খাতুনগঞ্জে কাঁচা পণ্যের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমদানিকৃত পেঁয়াজের মধ্যে বাজারে নাসিক, পাটনা ও বেলেডাঙ্গা জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে ভারতের নাসিক জাতের পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পেঁয়াজ নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই মসলা পণ্যটি।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে নাসিকের ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩-২৪ টাকা। মাঝারি মানের পেঁয়াজ ২০-২২ এবং ছোট আকারের নাসিক পেঁয়াজ ১৯-২০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত বাজারে ভালো মানের নাসিক পেঁয়াজ ১৭-১৮ টাকা এবং মাঝারি ও ছোট আকারের পেঁয়াজ ১৫-১৬ বিক্রি হতো।
খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্যের বাজার হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আমাদের সময়কে বলেন, লোকসানের কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কোরবানির ঈদের কারণে প্রায় ১০ দিন পেঁয়াজ ঢুকতে পারেনি।
আগামীতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করে তিনি জানান, গতকাল বুধবার খাতুনগঞ্জে ৪৬ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও সীমান্তে ৪৮ টাকা কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আজ বৃহস্পতিবার ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক বলাই কুমার পোদ্দার আমাদের সময়কে বলেন, ভারতে লরি ধর্মঘট চলছে। এজন্য আমরা সীমান্তে যাদের কাছ থেকে পণ্য কিনি তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। মূলত বেশি দামে কেনার কারণে দাম বেড়েছে। দেশে পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে। ফলে চাহিদা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া মিয়ানমার অথবা পাকিস্তান থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। তাই ভারতে দাম না কমলে এখানেও কমবে না। অন্য দেশে থেকে আমদানি করতেও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতীয় বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে। আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও এখন সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ২৫ ট্রাকে।
এদিকে পাইকারিতে যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাঁচা বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে বর্তমানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা দামে, যা এক সপ্তাহ আগে সর্বোচ্চ ৩০-৩২ টাকা দামে বিক্রি হতো।
ক্যাবের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা পণ্যের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন সংকট ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। চাহিদা স্বাভাবিক থাকার পরও ভারতীয় বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়িয়েছে। সরকারের কঠোর নজরদারি না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।
এক ব্যবসায়ী জানান, দেশের পেঁয়াজের পুরো বাজার নির্ভর করছে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানির ওপর। দেশি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসার পর থেকে গত দুই থেকে তিন মাস পেঁয়াজের বাজার নিম্নমুখী ছিল। মৌসুমের পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়তে থাকে।