মানব সভ্যতার জন্য চাঁদে অভিযান ছিল উল্লেখযোগ্য এক পদক্ষেপ। পৃথিবীর একমাত্র এই প্রাকৃতিক উপগ্রহটিতে ১৯৫৯ সালে প্রথম বারের মতো নভোযান পাঠায় রাশিয়া।
প্রথম বারের চন্দ্রাভিযানে মানুষ না গেলেও ১৯৬৯ সালে নভোযান অ্যাপোলো ১১-তে তিন নভোচারীকে পাঠায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সে বছরেরই ২১ জুলাই চাঁদের পিঠে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখার গৌরব অর্যন করেন মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং।
তার ২০ মিনিট পর চাঁদের বুকে পা রাখেন তারই সহযোগী নভোচারী এডউইন ইউগিন বাজ অলড্রিন। কিন্তু কোনো নারীর পক্ষেই আজ পর্যন্ত সেই গৌরব অর্জনের সুযোগ হয়ে ওঠে নি। এবার নারীদের সেই স্বপ্নও পূরণ হতে চলেছে। আর যুগান্তকারী এ ঘটনাটি ঘটলে 'সাফল্যের অগ্রযাত্রায় পৃথিবীসহ কেঁপে উঠবে চাঁদের মাটিও' বলে ঘটার গুরুত্ব প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
প্রথম চন্দ্রবিজয়ের ঘটনার প্রায় ৫০ বছর পর শিগগিরিই নতুন করে চাঁদে অভিযানের পরিকল্পনা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
মঙ্গলগ্রহে অভিযানের আগেই আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে নতুন প্রজন্মের মহাকাশ যানের মাধ্যমে চন্দ্রাভিযানে নামবে সংস্থাটি। গ্রিক মিথোলজি থেকে এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘আর্টেমিস’। এ প্রকল্পেই প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে চাঁদে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে নাসা কর্তৃপক্ষ।
তা হলে কারা হচ্ছেন সেই ভাগ্যবতী নারী? নাসা জানিয়েছে, এর জন্য বর্তমানে কর্মরত এমন ১২ জন নারীকে বাছাই করা হবে। তাদের সবার বয়স ৪০ থেকে ৫৩। তাদের কেউ সাবেক সামরিক পাইলট, কেউ ডাক্তার আবার কেউ বিজ্ঞানী। ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে জমা পড়া কয়েক হাজার আবেদনের মধ্য থেকে তাদের বাছাই করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ২০১৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত নাসার ২১তম ব্যাচে রয়েছে সম্ভাব্য চার নারী অভিযাত্রী। এছাড়াও তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন তারা।
বয়স ৪০ ও ৪১ বছরের মধ্যে এই নারীরা প্রথমবারের মতো আগামী বছরের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মহাকাশে পাড়ি জমাবেন। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন অ্যানা ম্যাককেইন।
সেনাবাহিনী সাবেক নারী সেনা একজন হেলিকপ্টার পাইলট। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাবেন তিনি। তালিকায় রয়েছেন প্রকৌশলী ও প্রতিশ্রুতিশীল পর্বতারোহী ক্রিস্টিনা কচ। ইতিমধ্যে গত ১১ মাস ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছেন তিনি।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল স্পেস সোসাইটির পরিচালক ও মহাকাশবিষয়ক উপস্থাপক জ্যানেট আইভি বলেন, আমি মনে করি, চন্দ্রাভিযানের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ক্রিস্টিনা কচ ও অ্যানা ম্যাককেইন।
একই ব্যাচে তাদের আরও নারী সহকর্মীর নামও রয়েছে তালিকায়। এই দু’জন হচ্ছেন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী জেসিকা মীর ও সাবেক এফএ ১৮ যুদ্ধবিমান পাইলট নিকোল ম্যান।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার লক্ষ্যে এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী ৫ বছরে আবারও চাঁদে পা রাখবে আমেরিকা।
এছাড়াও তিনি আরও জানান, একজন মার্কিন নাগরিকই হবেন চাঁদে পা-রাখা বিশ্বের প্রথম মহিলা।