Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

থমকে গেছে এসি রবিউলের স্বপ্ন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০১৯, ০২:৫৭ PM
আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯, ০২:৫৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আজ থেকে তিন বছর আগে ২০১৬ সালে ১ জুলাই এই দিনে রাজধানীর বনানীর হলি আর্টিসান বেকারি তে জঙ্গি গোষ্ঠী দ্বারা যে হামলা পরিচালিত হয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস হামলা বললে দ্বিমত প্রকাশের কাউকে পাওয়া যাবে না। সেদিনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়েছিলেন। তাদের একজন ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে যোগ দেওয়া রবিউল করিম।

৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে যোগ দেওয়া রবিউল করিম মৃত্যুর সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার ছিলেন।

ছোট থেকে মানব সেবার জন্য নিজ এলাকাসহ গোটা মানিকগঙ্গে তাঁর আলাদা পরিচিত ছিল। আর ধারাবাহিকতায় জেলার সদর উপজেলার নিজ গ্রামে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত বিদ্যালয় ‘ব্লুমস’ গড়ে তুলেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিম। তার স্বপ্ন ছিল এর সঙ্গে হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করবেন। ২০০১ সালে চালুর পর ভালোভাবেই চলছিল বিদ্যালয়টি।

কিন্তু ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার দিনে রবিউল করিম মারা যাওয়ায় থমকে যায় সেই স্বপ্ন। আর বিদ্যালয় পরিচালনায় শুরু হয় নানা সংকট। বর্তমানে অর্থাভাবে খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যালয়টি আবাসিক করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

শনিবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের কাটিগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা পাঠশালায় ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্তমানে সেখানে ৪২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আশপাশের গ্রাম থেকে বাক, শ্রবণ ও অন্যান্য কারণে প্রতিবন্ধিতায় ভোগা শিশুরা এতে পড়াশোনা করে। সপ্তাহে ৪ দিন সকাল ৯টা ২টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। পাশাপাশি খেলাধুলা ও ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা আছে। দুপুরে খাবার দেওয়া হয় স্কুল থেকেই।

রবিউল করিমের ছোট ভাই শামসুজ্জামান (সামস) বলেন, ‘ভাইয়ের স্বপ্নপূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বেঁচে থাকতে তিনিই সব খরচ চালাতেন। এখন ভাইয়ের বন্ধু এবং বিভিন্নজনের সহযোগিতায় চলছে বিদ্যালয়টি। বিদেশি একটি সংস্থা তিন কক্ষের একটি ভবন করে দিলেও আর্থিক সমস্যায় ভুগছে বিদ্যালয়টি।’ বিশেষায়িত বিদ্যালয় ব্লুমস-এর সভাপতি জি আর শওকত আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আসতে ২ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা, ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্ধ রাখতে হয়।’ সড়কটি দ্রুত পাকা করার দাবি করেন তিনি।

রবিউল করিমের স্ত্রী উম্মে সালমা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার পর আর্থিকভাবে ভালোই আছি। কিন্তু রবিউলের স্বপ্নপূরণ হবে তো? হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিদ্যালয় ছিল ওর স্বপ্ন। বিদ্যালয়টি দেখে যেতে পারলেও এখনো আবাসিক করা যায়নি। বর্তমানে ৪২ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চলছে খুব কষ্টে।’

রবিউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা করিমন নেছা ছেলের ছবি বুকে আগলে কান্না করছেন। আর বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার রবিউল মরতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রবিউল বাড়ি এলে সারা দিন থাকত প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয়ে। এখন অর্থের অভাবে স্কুলটি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মাসে ৮০ হাজার টাকা খরচ। সরকার, গ্রামের মানুষ, ওর বন্ধুরা সব খরচ দিচ্ছে। আবাসিক করে স্কুলটি স্বচ্ছভাবে চালাতে পারলে আমার রবিউলের স্বপ্নপূরণ হতো। কিন্তু মৃত্যুর ৩ বছর পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।’

রবিউলের নামে মাদ্রাসার কক্ষ : এদিকে সাটুরিয়া উপজেলার বাছট বৈলতলা মোকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার একটি কক্ষ রবিউলের নামে নামকরণ হয়েছে। মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুল্লাহ মিজান বলেন, ‘মানিকগঞ্জের কৃতী সন্তান রবিউল করিম দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাদ্রাসার একটি কক্ষের নাম তার নামে রাখা হয়েছে।’

Bootstrap Image Preview