বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফের অভিযুক্ত হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে কোনো আদেশ পায়নি রিটকারী আইনজীবী।
রবিবার (৩০ জুন) হাইকোর্টের দু’টি বেঞ্চে গিয়েও মামলাটির শুনানি করতে পারেনি তিনি। অন্যদিকে জরিমানার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
এ বিষয়ে ইউনুছ আলী আকন্দ জানান, রবিবার (৩০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ রিটের শুনানির জন্য উপস্থাপন করার পর আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন। দেখি গ্রেফতারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় আইন-শৃংখলা বাহিনী।
এরপর তিনি ওই কোর্ট থেকে ফেরত এসে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি করতে যান। সেখানে আদালত আইনজীবী বলেন, এখানে জনস্বার্থের অনেক মামলা পেন্ডিং (অপেক্ষামাণ) আছে, আপনি হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে যেতে পারেন।
পরবর্তীতে, তিনি হাইকোর্টের ২৫নং বেঞ্চের সামনে দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকলে ২৫নং কোর্টে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’টি কোর্টে গেলাম রিটের বিষয়ে শুনানি করেনি। আদালত রিটের শুনানি না করে যদি জরিমানা করে দেন।
এছাড়াও তিনি জানান, এ সপ্তাহেরই যেকোনো দিন কোর্টের অন্য বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি করতে যাবেন তিনি।
অপরদিকে, রবিবার সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় করা এ রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাবের ডিজি, বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি), বরিশাল বিভাগীয় পুলিশের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিবাদী করা হয়েছে। একই সঙ্গে খুনিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে দেশের সব বন্দরে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
এছাড়াও হাইকোর্ট থেকে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কেন আবার রিট করা হয়েছে জানতে চাইলে ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, এর আগে হাইকোর্ট থেকে মৌখিক আদেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মৌখিক আদেশ দেওয়া হয়েছে আমরা এখন একটি লিখিত আদেশ চাই। তাই এ রিট করেছি। রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তিন-চার দিন অতিবাহিত হচ্ছে তারপরও খুনের পরিকল্পনাকারী এবং মূল আসামিদের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
রেড অ্যালার্ট জারির জন্য স্থল, বিমান ও নৌবন্দরে যাতে পাহারা বসানো হয় তার জন্য লিখিত আদেশ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৭ জুন রিফাত শরীফের হত্যাকারীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে দেশের সব থানায় অ্যালার্ট জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত।
ওইদিন সকালে বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করার ঘটনা দেশের বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতের নজরে আনেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ জানানোর নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন (বুধবার) সকালে স্ত্রী আয়েশাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় তারা। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে, উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসারত অবস্থায় রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।