Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

খেয়েই চলেছে মেঘনা, আতংকে উপকূলবাসী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০১৯, ০১:২০ PM
আপডেট: ২১ জুন ২০১৯, ০১:২০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙছে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী। মাইলের পর মাইল সম্পদ মেঘনার পেটে। এতে হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন ভেঙে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ভাঙনে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছে কোন না কোন মানুষ। এনিয়ে আতংকে রয়েছে উপকূলবাসী। 

এই ভাঙন কবে ক্ষান্ত হবে? কবে মেঘনা তীরের মানুষগুলো শান্তিতে ঘুমাতে পারবে? আর কত ভাঙনে মেঘনার পেট ভরবে? কবে শান্ত হবে এই মেঘনা? এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক করে নদী ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষগুলোর মনে। তবে তাদের এসব প্রশ্নের অবসান হতে প্রয়োজন নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলাটি ঘিরে রেখেছে দেশের দীর্ঘতম নদী মেঘনা। গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এই মেঘনার ভাঙনে এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। সদরের চররমনী মোহন, রায়পুরের উত্তর চরবংশী, কমলনগরের চর ফলকন, চরকালকিনি, লুধুয়া, পাটারিরহাট, সাহেবের হাট, রামগতির চর আবদুল্লাহ, চর আলেকজান্ডারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও বিস্তীর্ণ জনপদ ভাঙন কবলিত। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এসব এলাকার মানুষগুলো বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছে। থামছে না মেঘনার ভাঙন। ধ্বংস হচ্ছে মানুষের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাশ হয়। প্রথম পর্যায়ে রামগতিতে সাড়ে চার এবং কমলনগর উপজেলায় ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। গত মার্চ মাসে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগ) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এক সভায় জানিয়েছেন, রামগতি-কমলনগর রক্ষার পূর্ব প্রকল্পটি গত ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল তারিখে বাতিল করা হয়েছে। এই তথ্যটি জানার পর থেকেই স্থানীয় মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য এই দুই উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের ভিটে-বাড়ি রক্ষায় সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ বছরে নদীর ভাঙনে ৩১টি বড় হাট-বাজার, ৩৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩০টি সাইক্লোন শেন্টার, ৫২টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার, ৪০০ কিলেমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার একর ফসলি জমি ও ৪৫ হাজার ঘরবাড়িসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

ভাঙন কবলিত কয়েকজনের জানায়, প্রতিনিয়তই মেঘনা ভাঙছে। বর্তমানে রামগতি-কমলনগর উপজেলার ৩২ কিলোমিটার এলাকা ভাঙন কবলিত। যেকোন সময় বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় কমলনগরের মাতাব্বরহাটের এক কিলোমিটার বাঁধে গত দেড় বছরে ১০ বারেরও বেশি ধ্স নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে ও দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু না হলে রামগতি-কমলনগর মানচিত্রে আর দেখা যাবে না।

কমলনগরের চরকালকিনি গ্রামের বাসিন্দা আবু সাইয়েদ মিয়া জানান, উপজেলার মতিরহাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটর দূরে নদী ছিল। এরমধ্যে দুটি বড় বাজারও ছিল। সব ভেঙে নদী মতিরহাট বাজারেও আঘাত হানে কয়েক বছর হয়েছে। পরে বাঁধ নির্মাণ করলে ভাঙন বন্ধ হয়। এই ভাঙনে তার পুরনো বাড়ির মাত্র একটি গাছ ছাড়া আর কিছুই নেই। পরে নদীর তীরেই আবার বাড়ি করতে হয়েছে তাকে।

পাটারিরহাট ইউনিয়নের আবদুল জব্বার জানান, ভাঙনে তার বাড়ি দুইবার ভেঙেছে। তিনি এখনো ওই ইউনিয়নের থাকলেও তার প্রতিবেশি অনেকেই নেই। প্রতিবেশিরা সবকিছু হারিয়ে রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের ও বিভিন্ন বেড়িবাঁধের পাশে গিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু মেঘনার ভাঙন এখনো বন্ধ হয়নি। ক্রমান্বয়ে ভাঙন বেড়েই চলেছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, অনেক আগেই  প্রথম পর্যায়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য কাজও শুরু করা যায়নি। ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।

Bootstrap Image Preview