Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভৈরবে চিকিৎসকদের ভুলের খেসারত দিচ্ছে রোগী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২০ জুন ২০১৯, ০২:৫৩ PM
আপডেট: ২০ জুন ২০১৯, ০২:৫৩ PM

bdmorning Image Preview


ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারের চিকিৎসকদের ভুলের খেসারত দিচ্ছে মোছাঃ তানিয়া (১৯) নামে এক রোগী। 

রবিবার (১৬ জুন) তানিয়ার পিতা মোঃ আক্কাছ মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ মে তানিয়ার পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে নেওয়ার পর হাসপাতালের মালিক ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীর এবং ডা. হাফিজা খাতুন তানিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে ২ দিন রেখে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় তানিয়ার পিত্ত থলিতে পাথর ও গর্ভে ৪ মাসের সন্তান আছে। কিছুটা সুস্থ্য হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তানিয়াকে বাড়ী নিয়ে যায় তার পরিবার।

তারপর গত ২০ মে পুনরায় পেটে ব্যথা শুরু হলে তানিয়াকে আবার ওই হাসপাতারে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা পুণরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, তানিয়ার কিডনী ফুলে গেছে। এ কারনে আবার চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ফলে তানিয়ার শরীরের অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। চিকিৎসকদের পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী দুই রকম কথা বলায় তানিয়ার পরিবারে সন্দেহ হলে চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়াই ঐ হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে গত ২১ মে ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে ভর্তি করে।

ভাগলপুর হাসপাতলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায়, তানিয়ার পিত্ত থলিতে কোন পাথর নেই। এমনকি কিডনী ও ফুলে যায়নি। ভৈরব মেডিল্যাব হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভুল রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসা করেছে। মূলত তানিয়ার এপেন্ডিস সাইটিস হয়েছে। যে কারণে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, রোগী বাঁচান না হয় সন্তান বাঁচান।

চিকিৎসাকালে তানিয়ার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। পরে তানিয়ার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নেওয়ার পর তানিয়ার এপেন্ডিস সাইটিসের অপারেশন করা হয়। হাসপাতালে ২ দিন রাখার পর ইনফেকশন হলে তানিয়ার অবস্থা আশঙ্খা জনক থাকায় পুনরায় অপারেশন করা হয়।

এতেও রোগী সঙ্কামুক্ত না হওয়ায় তাকে আই.সি.ইউ তে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে আই.সি.ইউ তে কোন সিট খালি না থাকায় ঢাকা সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আই.সি.ইউ তে ভর্তি করা হয় তাকে । তানিয়াকে ৯ দিন আই.সি.ইউ তে রাখার পর বর্তমানে সিটে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।

পরিবারের দাবী তানিয়ার এ পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যয় হয়েছে ৭ লক্ষ টাকা এবং প্রতিদিন হাসপাতাল খরচ চালাতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। ভৈরব মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারের মালিক ডাঃ কে এন এম জাহাঙ্গীর ও ডাক্তার হাফিজা খাতুনের অবহেলা ও ভুল রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসার কারণে আজ তানিয়াকে মারাত্মক ভাবে খেসারত দিতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও মানুষিক ভাবে খেসারত দিতে হচ্ছে তানিয়ার পরিবারকেও । তারা ওই চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবী জানান ।

এ ব্যাপারে ডাঃ কে এন এম জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তানিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তানিয়ার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসায় আমাদের কোন গাফলতি বা ভুল ছিলনা।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তানিয়ার বাবার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হচ্ছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Bootstrap Image Preview