Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কী ভয়ংকর! ডিআইজি মিজান নাকি দুদক পরিচালককে ৪০ লাখ ‘ঘুষ’ দিয়েছেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০১৯, ০৯:১২ PM
আপডেট: ১২ জুন ২০১৯, ০৯:১২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ডিএমপি কমিশনারের অফিসকক্ষে একবার দেখা হয়েছিল ডিআইজি মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তখন তিনি অতিরিক্ত কমিশনার। আলাপ হয়নি। কিন্তু তার সম্পর্কে তখনও সমান আগ্রহ আমার। কারণ যাকে সরিয়ে ডিআইজি মিজানকে ডিএমপিতে আনা হয় সেই মারুফ হাসান পুলিশ ও পুলিশের বাইরে দুর্দান্ত এক অফিসার হিসেবে খ্যাত। সৎ, স্মার্ট, ডায়নামিক। হলি আর্টিজান, মিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় হানা, মতিঝিলে হেফাজত ডেরায় দুর্দান্ত অপারেশনসহ অনেক কার্যকরী অভিযানের অন্যতম নায়ক মারুফ হাসানকে বরিশাল রেঞ্জে পাঠিয়ে ডিএমপিতে আনা হয় আজকের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানকে। তাই তাকে নিয়ে আমার কৌতূহল ছিল।

কেমন অফিসার তিনি? পুলিশে কি মারুফ হাসানের চেয়েও তার সুনাম বেশি? জঙ্গি দমন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তার ভূমিকা কি ডিএমপিতে আরও বেশি কার্যকর হবে? এই প্রশ্ন আমার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। পুলিশের ঘনিষ্ঠদের কাছে জানতে চাই। সরাসরি উত্তর না দিয়ে ঘুরপথে আকারে-ইঙ্গিতে কথা বলেন অনেকে। ঢাকার পুলিশ সুপার থাকতে তার লাইফ স্টাইলের খোঁজখবর নিন। অনেক কিছু জেনে যাবেন, বুঝে যাবেন। কেমন? পদস্থ একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকার পুলিশ সুপার থাকাকালে মিজানুর রহমানের পরিবার থাকতো উত্তরাতে। কিন্তু বেইলি রোডে ঢাকার পুলিশ সুপারের সরকারি বাসভবনে রোজ সন্ধ্যায় জমজমাট আড্ডা বসতো। সেটি পুলিশের প্রফেশনাল কোনো কাজ নয়। বরং বিশেষ ধরনের ‘আড্ডা’। যা আইন সমর্থন করে না। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কখনো ‘টু’ শব্দটিও তখন করতে পারেনি। কারণ এমন একটি প্রভাব বলয় নিয়ে তাদের চলাচল যে ছিল যে, কারও কিছু বলার ছিল না।

তবে কি ঢাকার পুলিশ সুপার থেকে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি এবং সবশেষে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার পদে মিজানের পদায়নেও ওই প্রভাব বলয়ের বিশেষ ভূমিকা ছিল? প্রশ্ন এখন জোরেশোরেই আসছে। মারুফ হাসানের মতো একজন ‘ক্লিনম্যান’ অফিসারকে সরিয়ে মিজানতে ডিএমপিতে নিয়ে আসা যে ভুল ছিল সেটি এখন প্রমাণিত। যেই পুলিশ কর্মকর্তা গোটা বাহিনীর ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন সেই মিজানুর রহমানের হয়ে কি এখনো এক বা একাধিক প্রভাব বলয় কাজ করছে পুলিশে? আড়ালে, আবডালে পুলিশের ভেতরেই এই প্রশ্নটি হচ্ছে। কেন হচ্ছে? দ্বিতীয় বিয়ে কিংবা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কই শুধু নয়, দিনের পর দিন কার্যত ঘোষণা দিয়ে একজন নারী সাংবাদিকের জীবন বিষিয়ে দিয়ে ডিআইজি মিজান গত দেড় বছর ধরে প্রকাশ্যেই এক বিতর্কিত চরিত্রের নাম। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক এর অনুসন্ধান সেটিও বিতর্কের আরেক দিক। কিন্তু তিনি কি পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কার্যত আনুকূল্য পাচ্ছেন?

এই প্রশ্ন উঠছে এই কারণে যে, একজন নারী গণমাধ্যম কর্মীকে ভয়ভীতি দেখানো, নানা রকমের হেনস্থা করা, আবার দ্বিতীয় বিয়ে করে সেটি গোপন রাখতে বাধ্য করার জন্য নানামুখি চাপ প্রয়োগসহ ফৌজদারি অপরাধ হয় এমন কর্মকাণ্ড করার পরও পুলিশ কার্যত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। শুধু তাকে ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর সব অভিযোগ সুরাহার বিষয়ে কেন পুলিশের দেড় বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে? এটি কিসের আলামত? দেড় বছর ধরে চলতে থাকা বিতর্ক তো আরও নতুন করে উস্কে দিলেন ডিআইজি মিজান নিজেই। এ যেন ‘ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না’র মতো।

কী ভয়ংকর! রবিবার (৯ জুন ২০১৯) সারাদিন বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচার হলো, ডিআইজি মিজান নাকি দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালককে ৪০ লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দিয়েছেন। যা তিনি নিজেই বলেছেন। বিষয়টি সত্য না-কি সেটি প্রমাণের জন্য দুদক তদন্ত করছে। ধন্যবাদ জানাই দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে। তিনি সংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করেছেন। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর এবং তারা সেভাবেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই অপরাধ। প্রমাণসাপেক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই নেবেন বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান। দুদক এবং এর চেয়ারম্যানের এই তৎপরতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

এবার প্রশ্ন আইজিপির কাছে। একজন ডিআইজি নিজ মুখে বলেছেন তিনি ৪০ লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দিয়েছেন। ফৌজদারি এই অপরাধ করার পর পুলিশ প্রশাসনের কি নিশ্চুপ থাকার কোনো সুযোগ আছে? অপরাধী নিজ মুখে অপরাধ স্বীকার করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কী? এটি জানতে চাই আইজিপির কাছে। একজন সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে ইতিমধ্যে সব মহলের কাছে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর সুনাম আছে। সেই সুনামের প্রতি তিনি সুবিচার করে ডিআইজি মিজান ইস্যুতে ত্বরিত সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন এটা কি বাড়তি কোনো প্রত্যাশা?

ডিআইজি মিজান পুলিশে কীসের প্রতীক? তাঁর কর্মকাণ্ডে কি পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে? নাকি তিনি লজ্জায় ফেলছেন বাহিনীকেই? দুদক চেয়ারম্যান তার পরিচালককে বরখাস্ত করে বলেছেন, ব্যক্তির অপকর্মের দায় সংস্থা নেবে না। এই অবস্থান প্রশংসনীয়ই নয়, অনুকরণীয়ও বটে।

আইজিপিকে তো এর চেয়েও কঠোর অবস্থানে আমরা দেখতে চাই। দেশে ১৬ কোটি মানুষের মানুষের অভ্যন্তরীণ আইশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যে পুলিশ বাহিনী সেই বাহিনীর সেই বাহিনীর একজন ডিআইজিই যখন একের পর এক ফৌজদারি অপরাধের কারণ হয়ে ওঠেন প্রকাশ্যে তখন তা আরও বেশি স্পর্শকাতর। পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির স্বার্থেই জিআইজি মিজানের বিষয়ে ত্বরিৎ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াই কাম্য। কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?

লেখক:আরিফুর রহমান দোলন, সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস২৪ ডটকম ও সাপ্তাহিক এই সময়।

Bootstrap Image Preview