Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এতিমখানায় ছাত্রকে বলাৎকারের পর হত্যা, শিক্ষক গ্রেফতার

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০১৯, ০৯:০৬ PM
আপডেট: ১২ জুন ২০১৯, ০৯:০৬ PM

bdmorning Image Preview


যশোরের বেনাপোল কাগজ পুকুর খেদাপাড়া হিফজুল কোরআন এতিমখানা মাদ্রাসার ছাত্র শাহ পরাণ (১২) হত্যা মামলার প্রধান আসামি একই মাদ্রাসার শিক্ষক ও মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদের ইমাম হাফেজ হাফিজুর রহমানকে (৩৫) ১০ দিন পর গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের পর থেকে পলাতক ছিল হাফিজুর রহমান। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার একটি কওমি মাদ্রাসা থেকে দিঘলিয়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করে শার্শা থানার এস আই মামুনূর রশিদ।

বলাৎকারের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে জানান পুলিশ। গত ২ জুন বিকালে শার্শা উপজেলার গোগা গাজীপাড়া গ্রামের হাফেজ হাফিজুর রহমানের বাড়ির খাটের নিচ থেকে মাদ্রাসা ছাত্রের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আটক হাফেজ হাফিজুর রহমান গোগা গ্রামের মৃত মজিদ মোল্যার ছেলে। বুধবার দুপুরে আটক হাফিজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যশোর আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিহত মাদ্রাসা ছাত্রের পিতা কাগজপুকুর গ্রামের শাহাজান আলী হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় যশোরের নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান শার্শা থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসা ছাত্র শাহ পরাণের হত্যার পর থেকে শিক্ষক হাফিজুর রহমান কর্মস্থলে না এসে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে মাদ্রাসা শিক্ষক হাফিজুর রহমান জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করলেও সে বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামির স্বীকারোক্তি হতে জানা যায়, রমজান শুরু হওয়ার ৩/৪ দিন আগে রাতে আসামি তার মাথা টিপে দেওয়ার জন্য শাহ-পরাণকে তার কক্ষে ডাকে। শাহ পরাণ তার কক্ষে গিয়ে মাথা টিপতে টিপতে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। ওই রাতে আসামি শাহ পরাণকে বলাৎকার করে হাফিজুর। বিষয়টি শাহ পরাণ পরের দিন তার সহপাঠী এবং মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির কাছে বলাৎকারের কথা প্রকাশ করে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে হাফিজুর রহমান কৌশলে মাদ্রাসা থেকে শাহ পরাণকে গোগা গাজীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়া যায়। সেখানে শাহ-পরাণকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ঘরের চৌকির নিচে রেখে পালিয়ে যায়।

এদিকে হত্যাকান্ডের পর পরই শার্শা থানার পুলিশ আসামি হাফিজুর রহমানের গ্রেপ্তারে তদন্তের নামে নিরীহ নারী পুরুষদের বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে ৩ দিন আটকের পর ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন প্রধান আসামি হাফিজুর রহমানের ভগ্নিপতি শার্শার ডুবপাড়া গ্রামের মসজিদের ইমাম হেদায়েত উল্লাহ (৫০)। ভুক্তভোগী আত্মীয়রা জানান, ওয়াহেদের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার চুক্তি হয়। ৩ লাখ টাকা ঈদের দিন দিলে শার্শা থানা তাদেরকে রাতে ছেড়ে দেয়। নগদ ৩ লাখ ও বাকী ৩ লাখ টাকা ঈদের পরে দেওয়া হবে এই মর্মে একটি ইসলামী ব্যাংকের চেকও নেওয়া হয়।

হেদায়েত উল্লাহসহ তার বাড়ির ৩ জন গৃহবধূ জানান, ২ জুন প্রধান আসামিকে ধরার জন্য তাদের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী রেশমা খাতুন (৩৫), মুক্তাসুন বিল্লাহের স্ত্রী চায়না বেগম (২৫), হাফিজুর রহমানের স্ত্রী হাসিনা বেগম (২৮) সহ চারজন ও যশোর চৌগাছা থেকে মোনাইম (৪৫) নামে আরো একজনকে শার্শা থানা পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। তারপর থেকে তদন্তের নামে তাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে প্রধান আসামির অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এভাবে দুইদিন অতিবাহিত হলে আমাদের এই হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে ছেড়ে দেওয়ার টালবাহানা করতে থাকে পুলিশ। পাশাপাশি চলে অর্থের মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়টি।

হেদায়েত উল্লাহ বলেন, তার ভগ্নিপতি ওয়াহেদ ডুবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ওসমান ও ইসরাফিলের কাছ থেকে মাঠের জমি বিক্রির অগ্রীম নগদ ৩ লাখ টাকা এনে শার্শা থানার দালাল সৈয়দ আলীর (সৈয়দা) মাধ্যমে শার্শা থানার এসআই মামুনের নিকট ৩ লাখ টাকা দিলে ঈদের দিন বিকালে তিনজন মহিলা ও ঈদের দিন রাতে এশার নামাজের পর আমাদের দুইজনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। ঈদের পর আরও ৩ লাখ টাকা শার্শা থানায় দিতে হবে ও আসামি হাফিজুরের অবস্থান যদি তারা জানতে পারে সেই তথ্য থানাকে দিতে হবে এই শর্তে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

হেদায়েত উল্লাহর ভগ্নিপতি ওয়াহেদের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ওসমান ও ইসরাফিলের কাছ থেকে হেদায়েত উল্লাহসহ ৫ জন আটকের দিনে নগদ ৩ লাখ টাকা ও ঈদের পর রোববার আরও ৩ লাখ টাকার ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দিয়ে আসি।

শিক্ষক হাফিজুর রহমানকে আটকের আগে তার আত্মীয়স্বজনকে আটক করে পুলিশের অর্থ বাণিজ্য হয়েছে এ রকম গুঞ্জন রয়েছে এলাকায়। এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারি পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বলেন, আমিও শুনেছি। কিন্তু যাদের নিকট থেকে অর্থ বাণিজ্য হয়েছে তাদের আমি ডেকে জিজ্ঞাসা করলে এর কোন সত্যতা মেলেনি।

Bootstrap Image Preview