Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মসজিদের ইমামদের দিয়ে অফিস সহকারী এখন ৩০০ কোটি টাকার মালিক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯, ০৭:৪০ PM
আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ০৭:৪০ PM

bdmorning Image Preview


বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ দুই জনের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন। মামলার অপর আসামি হলেন বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড় জামে মসজিদের ইমাম নিউ ও বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান।

এদিকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জানা যায়, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান না হয়েও পুঁজি সংগ্রহের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাচার করেছেন বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের এমডি আব্দুল মান্নান ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান।

দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মান্নান তালুকদার স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। পাশাপাশি বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড় জামে মসজিদের ইমাম আনিসুর রহমানকে তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয়।

এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর গ্রাহকদের প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার প্রলোভন দেখান আব্দুল মান্নান। পাশাপাশি বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন, যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থী।

সেইসঙ্গে গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি অ্যাকাউন্টে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন তিনি। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেন আব্দুল মান্নান। এসব টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে তা জানতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

দুদকের প্রাথমিক তদন্তে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে দুদক।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. শাওন মিয়া বলেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে নেমে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে নানা অনিয়মের সত্যতা পায় দুদক।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কমিশনের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত ও মামলা করার অনুমতি চাওয়া হয়। কমিশন অনুমতি দেয়ায় মামলা করা হয়।

পরে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ (২), ৪ (৩) ও ৪ (৪) ধারায় বাগেরহাট সদর মডেল থানায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা পাচারের মামলা করা হয়।

বাগেরহাট সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাতাব উদ্দীন বলেন, দুদকের মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ মামলাটি তদন্ত করবে দুদক।

বাগেরহাট সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, আমি চার বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যাই। অবসরে যাওয়ার পর চাকরি জীবনে অর্জিত ২০ লাখ টাকা নিউ বসুন্ধরা লিমিটেডে জমা রাখি। নিউ বসুন্ধরা আমাকে প্রতি লাখে মাসে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল। গত ১০ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি আমাকে কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আমি এখন লভ্যাংশ ছেড়ে আমার মূলধন ফেরত চেয়েও পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, নিউ বসুন্ধরা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্নান তালুকদার খুবই চতুর। বাগেরহাটের ধনী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের কাজে লাগিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার গ্রাহক আজ সর্বস্বান্ত। আমার মতো যারা তার এই ফাঁদে পা দিয়েছেন তারা আদৌ তাদের মূলধন ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।

Bootstrap Image Preview