Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক ভয়ঙ্কর পুত্রবধূর গল্প!

আনিসুর রহমান
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯, ০৫:২৮ PM
আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ০৫:৪৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


গতরাতে ফেসবুকে ঢোকার পরই চোখে পড়লো মাটিতে পোঁতা এক নারীর ছবি। আর এই নিউজের শিরোনাম হলো ‘শাশুড়িকে হত্যা করে আঙিনায় পুঁতে রাখলেন পুত্রবধূ’।

নিউজটি পড়তে লাগলাম। পড়ে যা বুঝলাম তার সারমর্ম হলো- বাড়িতে ধান শুকানোর সময় মুরগি এসে ধান খায়। এ কারণে ঘুমন্ত শাশুড়িকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে বাড়ির আঙিনায় চুলার নিচে গর্ত করে পুঁতে রেখেছেন পুত্রবধূ। এটি পাশের বাড়ির জা’র কাছে গিয়ে বলার পর ঘটনা জানাজানি হয় এবং প্রতিবেশীরা পুত্রবধূকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। সন্ধ্যায় পুলিশ এসে মাটি খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ পূত্রবধূকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।

ঘটনাটি রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রকাশনগর আদর্শ গুচ্ছগ্রামের। গত বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম মোমেনা বেগম। তিনি ওই গ্রামের রমজান আলীর স্ত্রী। আটক পুত্রবধূর নাম সখিনা বেগম। তিনি মোমেনা বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী।

ভাবলাম, যে ধানের দাম ১২ টাকা কেজি। সেই ধান খেয়েছে মুরগি। মুরগি কয় কেজি ধান খেয়েছে- ১ কেজি? দুই কেজি? কয়টাকা দাম এইটুকু ধানের? ১২ কিংবা ২৪টাকা! আর এর জের ধরে একজন ঘুমন্ত মানুষকে এভাবে হত্যা করা যায়? যে কিনা নিজ শাশুড়ি! মানুষের মনুষ্যত্ব এতোই নিচে নেমে গেছে? গল্প শুনতাম এ ধরনের ঘটনা নাকি দেড় হাজার বছর আগে আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে ঘটতো। কিন্তু বিংশ শতকের এ সভ্যতায় এসে আমাদের মনুষ্যত্ব ও মানবতার কেন এই হাল? আপনারা বলতে পারেন অভাব একটা কারণ। কিন্তু এমন অনেক পরিবার আছে, যারা অভাবে জর্জরিত, তবু সামাজিক মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করছেন। তাদের দ্বারা তো কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, কিংবা তারা তো কারো ওপর হামলে পড়ছেন না। তারা নিজেকে কিভাবে পরিচালিত করে, কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে? গিয়ে দেখেন এর পেছনে আছে পারিবারিক সুশিক্ষা, সামাজিক মুল্যবোধ, কিংবা ধর্মীয় শিক্ষা।

কিন্তু যারা সমাজে দিনদিন নৈতিক অধপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তারা কী কারণে হচ্ছে। এই সখিনা বেগম সমাজের অধপতনের একটা উদাহরণ এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি। তার মতো এমন হাজারো পুত্রবধূ আছে যারা এমন চরিত্র ধারণ করে আছেন। তাদের কেউ বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে ভাত খেতে দেন না। কেউবা স্বামীকে মনে করেন ভৃত্য, কেউবা সন্তান হত্যা করছেন আবার কেউ সন্তান হত্যা করে তারপর নিজে আত্মহত্যা করছেন। এর কারণ কী? পূত্রবধু বা কারো ঘরের স্ত্রী এত ভয়ঙ্কর হওয়ার কারণ কী? আসলে কারণ কিন্তু একটা নয়। অনেক কারণ আছে। এর মাঝে ভারতীয় স্টার-জলসা, ঝগড়াঝাটি উসকে দেওয়ার মতো নানা সিরিয়াল, মাদক, পরকীয়া, সাংসারিক অভাব-অনটন, স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির অনাদর, অবহেলা, পুত্রবধূর পারিবারিক সুশিক্ষার অভাবসহ নানা কারণ।

তবে এর সমাধান কী? এক বাক্যে বলা যায়, যতদিন পর্যন্ত সামাজিক মূল্যবোধ, নিজনিজ ধর্ম অনুশীলন, পারিবারিক শিক্ষা, আর্থিক সচ্ছলতা প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন পর্যন্ত সমাজে সখিনা বেগমের মতো ভয়ঙ্কর পুত্রবধূ বা স্ত্রীর সংখ্যাই সমাজে বাড়তেই থাকবে। আর আমরা সুশীলরা শুধু হায় আফসোস করতে থাকবো। এই হায় আফসোস আর সুমিষ্ট বক্তৃতায় মানুষের মনুষ্যত্বের কোনো উন্নয়ন হবে না, সমাজের কোনো পরিবর্তনও আসবে না।

লেখক,

যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি নিউজ

[email protected]

Bootstrap Image Preview