Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

লক্ষ্মীছড়িতে সাওতালদের শ্মশানহ ২০ একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

গুইমারা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৯, ০৭:৫০ PM
আপডেট: ২৭ মে ২০১৯, ০৭:৫০ PM

bdmorning Image Preview


খাগড়াছড়ির লক্ষিছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকা ২২০নং ময়ুরখীল মৌজায় সাওতালদের শ্মশানসহ ২০ একর ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: রেজাউল করিমসহ ভূমিখেকো একটি চক্রের বিরুদ্ধে এসব ভূমি দখলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে ভূমিখেকো চক্রটির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে উপজেলার ময়ুরখীল মৌজার মহিষকাটা, সাওতালপাড়া, মোল্লাপাড়া এবং ছমুরপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বারবার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। প্রশ্ন উঠেছে ভূমি খেকো রেজাউল করিম (মেম্বার) তার সহযোগী জাকির হোসেনের খুটির জোর কোথায়?

গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো কেউ চক্রটির বিরুদ্ধে কথা বললে কখনো নারী দিয়ে শ্লীলতাহানী, কখনো নিজের শরীর নিজে রক্তাক্ত করে অন্যের নামে থানায় মামলা দায়ের করে ভূমিখেকো চক্রটি। এছাড়ও স্থানীয়দের নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অন্যের ভূমি জবরদখল করা হয়। কেউ বাধা দিলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে মিথ্যা-ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে সহজ-সরল লোকদের জেল-হাজতে পাঠানোসহ নানাভাবে হয়রানী করে অতিষ্ট করে তুলেছে চক্রটি।

অভিযোগও রয়েছে, বাঙালি, সাওতাল ও উপজাতীয় লোকদের জায়গা থেকে জোরপূর্বক গাছ কেটে বিক্রিসহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারী এই ভূমিখেকো চক্রটির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে জিবনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।

স্থানীয় মৃত রঞ্জন ভীমের ছেলে বাবুল ভীম ও নিলকন্টের ছেলে পবন ভীম (কার্বারী) অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পূর্বে থেকে সাওতালদের ৫০টি পরিবার তাদের দখলীয় ২০ একর সম্পত্তি ভোগ করে আসছে। জন্মের পর থেকে তারা লক্ষ্মীছড়ির ২২০নং ময়ুরখীল মৌজায় বিভিন্ন স্থানে খাস জমি দখলদার হিসাবে দীর্ঘদিন ভোগ দখল করে আসছে। এই ভূমিতে তাদের পিতা মাতাকে সমাধি করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ভুমি খেকো চক্রের হাত থেকে এই শশ্বানটিও রক্ষা করা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, ২২০নং ময়ুরখীল মৌজার ৫১, ৫২ ও ৫৩ নং হোল্ডিং এর বর্তমান মালিক দাবিদারগণ কোনদিনও ওই এলাকায় অবস্থান করেনি। কিন্তু মো: রেজাউল করিম মেম্বারসহ একদল ভূমিখেকো দফায়-দফায় আঞ্চলিক দলিল ও এভিডিভিট হলফনামা মূলে বিভিন্ন জনকে মালিক সাজিয়ে সাওতালদের দখলিয় সম্পত্তি বেচা-বিক্রি করছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের সুনামধন্য কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এসব জমি ক্রয় করার উদ্দ্যোগ নিলে চক্রটি লোভে পড়ে এসব জমি বিক্রয়ের জন্য মালিকানা পরিবর্তন করে নিতে অসহায় সাওতালদের উপর যার-যার পেশিশক্তি প্রয়োগ করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে নানা হয়রানিমূলক বিভিন্ন ধরনের মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে সাওতালদের। গাছ কাটা, মারধর ও অস্ত্র মামলাসহ নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয়দের।

সাওতালরা বলছেন, আমরা মামলা দিয়ে হেরে যাই। আমাদের নিকট কোন প্রকার কাগজ-পত্র নাই। আমরা উক্ত জমি দীর্ঘদিন ভোগ দখল সূত্রে আবাদ করে আসছি।

অসহায় সাওতালদের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলার গুইমারা, মানিকছড়ি এবং লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, রেজাউল মেম্বার ও তার সহযোগি জাকির গংদের অত্যচার থেকে বাঁচতে বিচারের দাবিতে মাঠে নেমে সংবাদকর্মীদের সহায়তা কামনা করেন ঐ গ্রামের শত শত নারী-পরুষ।

এদিকে প্রশাসনের অসহযোগিতায় ক্ষুব্ধ এই মানুষগুলোর অভিযোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দুর্নীতি ও জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থান থাকলেও লক্ষ্মীছড়ির ময়ুরখীলে ঘটছে তার উল্টোটা। প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় প্রশাসন কি তাহলে ভূমিখেকো চক্রটির কাছে অসহায়। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ রেজাউল মেম্বার ও জাকির গংদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

ঘটনায় অভিযুক্ত রেজাউল মেম্বার ও জাকির হোসেন তাদের বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সাজানো লোকদের ধারা দ্বারা বিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে চাচ্ছে সরকারদলীয় লোকজন।

রেজাউল মেম্বার আরও জানান, আমি ক্রয় সূত্রে ৫১, ৫২, ৫৩ নং হোল্ডিং এর মালিক। আমি সাওতালদের নামে উচ্ছেদ মামলা দিয়েছি তারা আদালতে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।

অভিযুক্ত জাকির হোসেন জানান, অভিযোগকারীরা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-দমকি এবং আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের দিয়ে জিবননাশের চেষ্টা করছে একাধিকবার।

এসময় নিজের কানে গুলির চিহ্ন দেখিয়ে জাকির বলেন, আমাকে জীবনে শেষ করে দেওয়ার জন্য বাড়ি যাওয়া পথে গত বছর গুলি করা হয়। ভাগ্যগুণে কানের পাশে গুলি লাগে। অনেক রক্তক্ষরণের পরও কোনরকমে বেঁচে আছি।

লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী জানান, সাওতালদের জমি ও শ্মশান দখলের বিষয়টি নিয়ে অনেক আগ থেকে বিরোধ চলছে। বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য উপজেলা প্রসাশন ও স্থানীয়দের নিয়ে অনেক বার মীমাংসার জন্য বসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু কোন এক অপশক্তির কারণে বসা হচ্ছে না।

লক্ষীছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল জব্বার জানান, জমিজমাকে কেন্দ্র করে সাওতালের সাথে অন্য একটি পক্ষের বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। বিষয়টি একাধিক মামলার কারনে আদালতে বিচারাধীন।

উল্লেখ্য, ২২০ নং ময়ুলখীল মৌজায় মহিষকাটায় ভূমি সংত্রান্ত বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে বহু আগে থেকে। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এবং মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কয়েকটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক আকার ধারন করছে। যে কোন মহুর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

Bootstrap Image Preview