Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাণীনগরে একাধিক প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুট

এম এ ইউসুফ, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০১৯, ০৭:৩৩ PM
আপডেট: ১৬ মে ২০১৯, ০৭:৩৩ PM

bdmorning Image Preview


নওগাঁর রাণীনগরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ নিয়ে হরিলুটের মহোৎসবের অভিযোগ উঠেছে। কাবিখা, টিআর, কাবিটাসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।

দায়সাড়া লোক দেখানো কাজ করে বরাদ্দের বেশিরভাগই আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প সভাপতিরা। প্রতিটি প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ না করেই বরাদ্দ আত্মসাৎ এর বিষয়গুলো নিয়ে এলাকার জনসাধারণদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা সুধীজনরা ক্ষোভ ও আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে ঝড়-বৃষ্টি মৌসুম চলছে বলে উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের সভাপতিরা বেজায় খুশিতে খোসমেজাজে রয়েছেন। চলতি ঝড়-বৃষ্টি মৌসুমে যত বেশি বৃষ্টি নামবে ততই তাদের প্রকল্পের কাজগুলো জায়েজ হবে। আর মাত্র ২ মাস পরেই চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের হিসাব-নিকাশের ইতি টানা হবে। যার ফলে অনেকেই দায়মুক্তির জন্য বুকভরা আশা নিয়ে জুন মাসের প্রহর গুণছেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের অনুকূলে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পে  ১৩৩ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার অনুকূলে ১৭টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) প্রকল্পে ৩৯ লক্ষ ৯২ হাজার ৭ শ’ ৪৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার অনুকূলে ৩৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

বরাদ্দকৃত অর্থ মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, কবর স্থান, শ্মশান সংস্কার ও উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কার, স্ট্রীট লাইট ও সোলার প্যানেল বসানোর কাজে স্ব-স্ব এলাকার প্রকল্প সভাপতির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। কিন্তু এসব উন্নয়ন বরাদ্দের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা তো দূরের কথা প্রকল্প সভাপতিরা লোক দেখানো দায়সাড়া কাজ করে বরাদ্দ হরিলুট করছে।

প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে কি ধরণের লুটপাটের প্রতিযোগীতা হয়েছে তা উপজেলার ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ প্রাচীরে গেলেই দেখা যায় যে, উক্ত বিদ্যালয়ের দক্ষিণ প্রাচীর হতে উত্তর দিকে পাকা রাস্তা পর্যন্ত সংস্কার কাজের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্পে সাড়ে ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার সরকার নির্ধারিত প্রতি মেট্রিক টন চালের বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার ২'শ ৭০ টাকা। সেই হিসেবে সাড়ে ৩ মেট্রিক চালের দাম প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৪'শ ৪৫ টাকা।

বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে থেকে মাত্র ৩ ট্রলি মাটি ভরাটের কাজ করেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও প্রকল্প সভাপতি মুনজুর রশিদ। ৩ ট্রলি মাটি ভরাটের কাজে আনুমানিক খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। বাকি ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪'শ ৪৫ টাকায় হরিলুট করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি মুনজুর রশিদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলার ৮ নং মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা মজিবুরের বাড়ি হতে মহিদুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) প্রকল্প থেকে সাড়ে ৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। যার সরকার নির্ধারিত প্রতি মেট্রিক টন চালের বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার ২'শ ৭০ টাকা। সেই হিসেবে সাড়ে ৬ মেট্রিক টন চালের সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্য হয় প্রায় ২ লক্ষ ৮১ হাজার ২'শ ৫৫ টাকা। এই রাস্তা সংস্কারে ৪'শ ৫০ ফিট মাটির কাজ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে কাজ পরিবর্তন করে ২'শ ২০ ফিট রাস্তায় ৪ হাজার ৪'শ ইট বিছিয়ে সিংগেল ইট সোলিং এর কাজ করা হয়।

কিন্তু কয় নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে তার সদুত্তোর দেননি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মেহেদী হাসান। তবে এখানে ১ নং ইটও যদি ব্যবহার করে থাকে তাহলে প্রতি হাজার ইটের মূল্য ৮ হাজার টাকা হিসেবে ৪ হাজার ৪'শ ইটের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ হাজার ২'শ টাকা। কিন্তু সেই রাস্তার সংস্কার কাজের নামে বরাদ্দ আত্মসাৎ করেন প্রকল্পের সভাপতি আসাদুজ্জামান তোতা।

তবে প্রকল্পের সভাপতি আসাদুজ্জামান তোতা মেম্বার দাবি করেন, জনগণের স্বার্থে কাজ, প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে স্থানীয় জনগণের সামনেই সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। এই কাজে কোন প্রকার অনিয়ম হয়নি। বরাদ্দ আত্মসাৎ এর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

এব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো: মেহেদি হাসান বলেন, এসব তথ্য নিয়ে কি করবেন। এলাকাবাসী উন্নয়নের বিষয়ে জানে। কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। ১ম পর্যায়ের অধিকাংশ কাজ শেষের দিকে। ৩০ জুন পর্যন্ত কাজ বুঝে নেওয়ার সময় আছে। তবে ক্রটি বিচ্যুতি থাকলে সেগুলো ঠিক করে নেওয়া হবে। 

 

Bootstrap Image Preview