ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অবহেলা ও গাফিলতির দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
সোমবার (১৩ মে) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পুলিশ লাইনস্থ অডিটরিয়ামে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নতুন এসপি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন থানার ওসিরা বক্তব্য রাখেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। একই সঙ্গে ফেনীর সুধীমহলও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সকালে জেলা পুলিশ প্রশাসনের ফেসবুক আইডিতে ফেনীর সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার মহোদয়ের বিদায় সংবর্ধনা শিরোনামে একটি ব্যানারের ছবি পোস্ট করা হয়। ব্যানারটি মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে জেলা পুলিশের ফেসবুক আইডিতে নিন্দার ঝড় উঠে।
ওই পোস্টের কমেন্টস বক্সে ঈমন নামে একজন মন্তব্য করেন, আফসোস, এ জন্যই দেশটার আজ এ অবস্থা। একজন কলুষিত অফিসার, যে কিনা একটি হত্যাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার দায়ে শাস্তি স্বরূপ ফেনী ছাড়ছেন, তাকেই দিচ্ছেন সংবর্ধনা। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন, রেখেছো বাঙ্গালি, মানুষ করোনি।
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের একজন লিখেছেন, ওরে সংবর্ধনা দিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
সামসুল আলম নামে জনৈক ব্যক্তি লিখেছেন, এখনও সুযোগ্য পুলিশ সুপার বলতেছে, এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। এই নিয়ে জেলা পুলিশের ওই আইডিতে ১৩৭ জন ব্যক্তি নানা মন্তব্য করেছেন।
গিয়াস উদ্দিন নামে ফেনীর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, লজ্জা থাকলে বিদায়ী এসপি জাহাঙ্গীর সংবর্ধরা নিতেন না । তিনিতো রাতের আঁধারে পালিয়ে ফেনী ছাড়ার কথা ছিল। যারা তাকে সংবর্ধনা দিলো তারা এসপির দোসর।
সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর শেখ মামুন বলেন, যেখানে খোদ পুলিশ বিভাগ নুসরাত হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির দায়ে তাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দিয়েছে, সেখানে ফেনী পুলিশের এই সংবর্ধনা আয়োজন দেশবাসীকে কী বার্তা দিচ্ছে, তারা কি অভিযুক্তদের পক্ষে আছেন? আমরা সাধারণ মানুষের অযোগ্য আর অভিযুক্তরা, শাস্তি প্রাপ্তরা সুযোগ্য? ধিক সে সব মানুষদের যারা দেশ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যঙ্গ করছেন। আইনের লোক হয়েও আইনকে অসম্মান করছেন।
এ বিষয়ে ফেনীর নতুন এসপি কাজী মনিরুজ্জামানের বলেন, ফেনীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে প্রায় দু’বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। এর মধ্যে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাই। রীতি হিসাবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্যারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এটি তেমন কোনও বড় ঘটনা না। স্যারের সহকর্মী সুলভ আচরণে আমরা জেলা পুলিশ সন্তুষ্ট ও উনার কাছে কৃতজ্ঞ।