Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

চতুর্থ স্ত্রীর কাছে বিয়ের অনুমতি না পেয়ে ‘বিয়ে পাগল’ স্বামীর ভয়ঙ্কর কাণ্ড!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ মে ২০১৯, ০৯:২৬ PM
আপডেট: ১২ মে ২০১৯, ০৯:২৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


বরগুনায় ষষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায় চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা আক্তারকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে স্বামী নিজাম মাতব্বর। 

শনিবার (১১ মে) দিবাগত রাতে বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামের লেদু মাতুব্বরের ছেলে নিজাম মাতুব্বর গরুর ব্যবসা করেন। ব্যবসার আড়ালে একের পর এক বিয়ে করছেন নিজাম। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহানারা বেগমকে প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। দুই সন্তান রেখেই নিজাম প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়।

এরপরেই খাজিদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় ঘরে তিনটি পুত্র সন্তান রেখে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর মারুফা বেগমকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। তৃতীয় স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে এমন অভিযোগ ছেলে রিয়ন ও চতুর্থ স্ত্রী নাসিমার। পরে ওই স্ত্রীকেও তাড়িয়ে দেয়।

২০০৭ সালে নাসিমা বেগমকে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। নাসিমার ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। এ বছর জানুয়ারি মাসে চতুর্থ স্ত্রী নাসিমাকে না জানিয়ে পঞ্চম স্ত্রী হিসেবে একই এলাকার ১৩ বছরের নিলা নামের এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেন।

বর্তমানে ৬ষ্ঠ বিয়ের জন্য চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ও পঞ্চম স্ত্রী নিলার সম্মতি চান। পঞ্চম স্ত্রী নিলা সম্মতি দিলেও চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ৬ষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি দেয়নি।

পরে বিয়েতে স্বামী নিজামকে বাধা দেয় নাসিমা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম চতুর্থ স্ত্রীকে ঘরের মধ্যে গত ৬ মে আটকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নাসিমার বাহু, কোমর, পিঠে গুরুতর জখম হয়।

স্থানীয়রা নাসিমাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। গত ছয়দিন ধরে নাসিমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নাসিমার বাবা সফেজ খলিফা অন্ধ। মা চলাফেরা করতে পারে না। অর্থের অভাবে নাসিমার চিকিৎসা হচ্ছে না। গত শনিবার রাতে নাসিমা বেগম বাদী হয়ে নিজাম মাতুব্বরকে প্রধান আসামি করে চারজনের নামে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, নাসিমা শরীরের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। তার শরীরে বিভিন্নস্থানে সেলাই করা হয়েছে। নাসিমা শরীরের যন্ত্রনায় চলাফেরা করতে পারছে না।

আহত নাসিমা বেগম কান্না জনিত কণ্ঠে বলেন, বিয়ের ১২ বছর শতাধিক বার মারধর করেছে। ওর নির্যাতনে আমার জীবনটাই শেষ। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর সংসার করছি।

তিনি বলেন, আমার বিয়ের আগে দুই স্ত্রীকে ছেলে সন্তান রেখে তালাক দিয়েছে। একজনকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। এ বছর জানুয়ারী মাসে ১৩ বছরের নিলা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। এখন আবার ষষ্ঠ বিয়ের জন্য আমার সম্মতি চায়। আমি এতে সম্মতি না দেয়ায় আমাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।

বিয়ে পাগল নিজাম মাতুব্বরের প্রথম স্ত্রীর ছেলে রিয়ন জানান , বাবা এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছে। আবারও ষষ্ঠ বিয়ে করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার ষষ্ঠ বিয়েতে আমি বাধা দেয়ায় আমাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। বাবার এ কাজের জন্য আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারি না। আমার সৎ মা নাসিমা বিয়েতে বাধা দেয়ায় তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।

বিয়ে পাগল নিজাম মাতুব্বর মুঠোফোনে একাধিক বিয়ে ও স্ত্রী নাসিমাকে মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার ছেলে এবং স্ত্রী আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়।

এই বিষয়ে আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, নিজাম মাতুব্বর একের পর এক বিয়ে করছে। আবার বিয়ে করতে বাধা দেয়ায় চতুর্থ স্ত্রীকে মারধর করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

 

Bootstrap Image Preview