Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঐতিহ্যবাহী মির্জাপুর শাহী মসজিদ

আবু নাঈম, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১০ মে ২০১৯, ০৭:৪২ PM
আপডেট: ১০ মে ২০১৯, ০৭:৪২ PM

bdmorning Image Preview


পঞ্চগড় জেলার একমাত্র মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নিদর্শন মির্জাপুর শাহী মসজিদ। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের পর্যটন শিল্পের একটি অন্যতম উপাদান এই মসজিদটি। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদের নির্দিষ্ট কোন নির্মাণকাল না থাকলেও বিভিন্ন ঐতিহাসিকবীদ ও পূর্ব পুরুষদের মুখে জানা যায় এর বয়স সাড়ে তিনশত বছরের অধিক।

ঐতিহাসিক মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে অবস্থিত মসজিদের সাথে অনেকটা মিল পাওয়া যায়। 
ইতিহ্যবাহী এই মসজিদের নকশা খচিত কারুপণ্য, ঐতিহ্য ও মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটক, দেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ ছুটে আসে প্রতিনিয়ত।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মির্জাপুর শাহী মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ২৫ ফুট। এক সাড়িতে মসজিদের নির্মাণ শৈলীর নিপুণতা ও কারুকাজ থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত দর্শনার্থীদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। মসজিদের মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত একটি ফলক রয়েছে, সে ফলকের ভাষা ও লিপি থেকে ধারণা পাওয়া যায় মোঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এটার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।

অনেকের ধারণা মসজিদটি ষোড়শ শতকের শেষের দিকে নির্মিত, অনেকেই অনুমানে করেন এ মসজিদটি ১৬৭৯ খ্রিষ্টাব্দে (সম্ভাব্য) নির্মিত হয়েছে। কারণ মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে অবস্থিত মসজিদের সাথে মিল থাকায় ধারণা করা হয় তৎকালিন সময়ে এ মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। তবে মসজিদের দেয়াল থেকে কিছু উদ্ধারকৃত শিলালিপি থেকে অনুমান করা হয় ১৬৫৬ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি।

ভারত সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার শাসনামলে শাহী মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, মির্জাপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মালিক উদ্দীন শাহী মসজিদ নির্মাণের এই মহান কাজটি করেছেন। তবে দোস্ত মোহাম্মদ শাহী মসজিদ নির্মাণের শেষ কাজটি সমাপ্ত করেন বলে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী মির্জাপুর শাহী মসজিদের সামনে একটি উন্মুক্ত খোলা জায়গা আছে যার এক পাশে সুসজ্জিত পাকা তোরণসহ মসজিদের উভয় পাশে নকশা ও খাজ করা স্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভগুলোর মাঝে চ্যাপ্টা গম্বুজ, তোরণকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। আর সুসজ্জিত গম্বুজের ওপরে মুদ্রা আকৃতির চূড়া দর্শনার্থীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করে। প্রাচীন এ মসজিদটি কয়েকশ বছরের পুুুুরনো হলেও কোন ক্ষতি হয়নি ফলে মসজিদের ইটের গাঁথুনি, দেয়াল, প্লাস্টার ও নকশাসহ সকল কারুকাজ শক্ত ও মজবুতভাবে দাড়িয়ে আছে।

মোগল স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্যে ভরপুর সুসজ্জিত মির্জাপুর শাহী মসজিদের গম্বুজের শীর্ষবিন্দু ক্রমহ্রাসমান বেল্ট দ্বারা যুক্ত। মসজিদের দেওয়ালের টেরাকোট ফুল এবং লতাপাতার বিভিন্ন খোদাই করা নকশা আছে যা সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। এ মসজিদের গম্বুুজের চার কোণায় চারটি মিনার আছে৷ সামনের দেয়ালের দরজার দু'পাশে গম্বুজের সাথে মিল রেখে দুটি মিনার দৃশ্যমান।

মসজিদের দেয়ালে ব্যবহার করা ইটসমূহ চিকন, রক্তবর্ণ ও বিভিন্ন ভাবে অলঙ্কৃত এবং দেয়ালের চারপাশ ইসলামী টেরাকোটা ফুল ও লতাপাতার নকশায় পরিপূর্ণ। বিশেষ করে মসজিদের মধ্যবর্তী দরজায় ফারসি লিপি খচিত মুদ্রার কালো ফলক, ফলকের লিপি ও ভাষা থেকে অনুমান করা যায় এ মসজিদটি মোগল সম্রাট শাহ আলমের শাসনমালে নির্মিত। মসজিদটি তিনটি বড় দরজা আছে, মসজিদের দেয়ালে কারুকার্য ও বিভিন্ন আকৃতির নকশা করা। মসজিদের ভেতরের দেয়ালে খোদাই করা কারুকার্য বিভিন্ন রঙের এবং বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা সহ কুরআনের সংবলিত ক্যালিগ্রাফি তুলির ছোঁয়ায় সুসজ্জিত করা যা মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের।

মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানায়, অনেকে আগে এক প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। তখন মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মালিক উদ্দীন মসজিদটি পুনঃসংস্কারের জন্য সুদূর ইরান থেকে কারিগর নিয়ে আসেন। সেই কারিগর তখন শাহী মসজিদটি সংস্কার করেন। তখন থেকে আর কোনো প্রকার সংস্কারের কাজ করা হয়নি।

এবিষয়ে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সককারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশিদ মামুন জানান, শাহী মসজিদ আমাদের ঐতিহ্য, স্থানীয় জনগণের দেখাশুনার পাশাপাশি যদি সরকারের সুদৃষ্টি থাকে তাহলে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে আমি মনে করি।

আটোয়ারী উপজেলা পরিষদ'র চেয়ারম্যান মোঃ তহিদুল ইসলাম জানান!শাহী মসজিদটি আমাদের অতি প্রাচীন। মসজিদটিকালের ঐতিহ্য হওয়ায় দেশ বিদেশ থেকে মানুষ দেখতে আসে। মসজিদ সংষ্কার ও সৌন্দর্য ধরে রাখে বহুবিধ কাজ করে যাচ্ছি আমরা। 

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, মসজিদটি পঞ্চগড়ের এক অন্যতম নিদর্শন। মসজিদ সংরক্ষণ ও সংষ্কার করার বিষয়ে আমরা আরো নতুন উদ্যোগ নিয়েছি। 


 

Bootstrap Image Preview