Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুরাদনগরে গভীর রাতে কবর থেকে লাশ চুরি, ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আবুল কালাম আজাদ, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৯, ০৬:৫২ PM
আপডেট: ০২ মে ২০১৯, ০৬:৫২ PM

bdmorning Image Preview


কবরস্থান থেকে গভীর রাতে লাশ চুরি করতে গিয়ে এক লাশের পরিবর্তে অন্য মহিলার লাশ চুরি করে আধা কিলোমিটার দূরে অন্যত্র কবরস্থ করে মাজার তৈরির চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনায় বুধবার মুরাদনগর থানায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। 

সরেজমিনে গিয়ে মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কুমিল্লা জেলা মুরাদনগর উপজেলার আলীচর গ্রামের কামাল মিয়া। জীবিত থাকাকালীন তাবিজ কবর ও প্রতিনিয়ত গাঁজা আসর বসানো ছিল যার পেশা। গত দুই মাস পূর্বে মারা যায় সে। মারা যাওয়ার পর কিছু ভণ্ড কামালকে পীর সাজিয়ে ভণ্ডামি ও গাঁজার আসর বসানোর লক্ষ্যে তার লাশকে কবরস্থান ব্যতীত অন্যস্থানে কবর দিয়ে মাজার করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু এলাকাসামীর চাপে তা সম্ভব হয়নি।

পরে কামাল মিয়ার মাজার সৃষ্টি লক্ষ্যে সোমবার গভীর রাতে আলীরচর গ্রামের শাহ আলম, আ: সাত্তার, জলিলসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র গ্রামের কবরস্থান থেকে কামাল মিয়ার লাশ ভেবে পাশের কবর থেকে ৬ মাস পূর্বে মারা যাওয়া একই গ্রামের সরাফত আলীর স্ত্রী আরুজা বেগমের লাশ তুলে নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মাটিচাপা দেয়।

পরদিন সকালে এলাকাবাসী কবরস্থান থেকে লাশ চুরির হওয়া ও নতুন কবর স্থাপন করার বিষয়ে জানাজানি হলে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় অরুজা বেগমের ছেলে আ: কুদ্দুস বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হল- আলীরচর গ্রামের ধনু ফকিরের ছেলে শাহ আলম, মফিজ উদ্দিনের ছেলে আ: সাত্তার, শাহেব আলীর ছেলে কামাল মিয়া, আনু মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া, জলিল, ধামঘর গ্রামের বাচ্চু, ঢাকার মোসলেমসহ অজ্ঞাত ৮/১০জন।

আলীরচর গ্রামের শাহ আলম জানান, শাহ আলম গংরা আমাকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার জায়গাতে লাশটি মাটিচাপা দেয়। আমি তাদেরকে বাঁধা দিলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা প্রতিনিয়ত আমার বাড়িতে গাঁজা ও জুয়ার আসব বসায়। আমি তাদেরকে বাঁধা দিতে পারি না। 

আলীরচর গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল বারেক জানান, আলীরচর গ্রামের শাহ আলমসহ একটি চক্র অনেকদিন যাবত এলাকায় গাঁজার আসরসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ করে আসছে। আমরা সামাজিকভাবে তাদের বিভিন্ন সময় বাঁধা দিলেও তারা আমাদের কথা শুনেনি। কামাল মিয়া মারা যাবার পর থেকে তারা তাকে পীর সাজিয়ে মাজার বানিয়ে গাঁজা ও জুয়ার আসর বানাতে লিপ্ত রয়েছে।

এলাকাবাসীর চাপে এতদিন তারা এ কাজ না করতে পেরে গভীর রাতে কামালের লাশ চুরি করতে গিয়ে আরুজা বেগমের লাশ চুরি করে। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। আমরা এর কঠিন বিচার চাই।

আলীরচর গ্রামের শতশত গ্রামবাসী জানানা, শাহ আলমকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে মাজারে জন্য নির্ধারিত জায়গাটি নির্ধারণ করে চক্রটি। মাজারের নামে যেন কোন প্রকার ভন্ডামী বা অশ্লীলতা সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করি।

মামলার বাদী আ: কুদ্দুস জানান, আমার মা ৬ মাস পূর্বে মারা গেছে। তারা গভীর রাতে আমার মায়ের লাশ চুরি করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চেয়ে মামলা করেছি। আশা করি সুষ্ঠ বিচার পাব।

মামলাটি তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুলতান জানান, রাতে ওই গ্রামে গিয়েছি। আসামিরা পালাতক রয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নাহিদ আহম্মেদ জানান, এ ঘটনায় আ: কুদ্দুস বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আইন উদ্দিন আল আইনী জানান, ধর্মকে পুজি করে কিছু লোক ব্যবসার জন্য এসমস্ত  কাজ করে থাকে। ইসলামে মৃত্যু ব্যক্তির মাজার বানিয়ে এ সমস্থ্য কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা লাশ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা হারাম কাজ করেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামকে পুজি করে কোন অসাধু ব্যক্তি যেন মাজারে নামে গাঁজার আসর ও ব্যবসা করতে না করতে পারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয়রা।   


 

Bootstrap Image Preview