প্রশাসনের হস্তক্ষেপে যমুনার বালু লুটকারী অবৈধ ড্রেজার বন্ধ হলেও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নে বালু দস্যুদের যমুনার উপর অত্যাচার থামছেই না। যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে কৌশলে বীর দর্পে চরের সাড়া বছর অন্তত অর্ধ শতাধীক কোটি টাকার বালু লুট করতে অব্যাহত থাকছে একটি চক্র।
ড্রেজার বন্ধ হবার পর তারা সুবিশাল ২০টি ট্রলার লাগিয়ে ২ শতাধীক শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে এনায়েতপুর নৌকা ঘাট হতে বিক্রি করছে। এ ছাড়া ড্রেজার দিয়ে উত্তোলিত কোটি টাকার বালু এখনো ঘাটে স্তুপ করে রাখা হলেও জব্দ করতে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সচেতন মহলে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ দিকে যমুনার মাঝ নদীর চর হতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে পানির স্রোতের গতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদীর পশ্চিম পাড়ে আঘাত হানায় এনায়েতপুরের বাক্ষ্মণগ্রাম হতে দক্ষিণে জালালপুরজুড়ে ৫ কিলোমিটারে ভাঙন তীব্রতর আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর এবং স্থল ইউনিয়নের যমুনা নদী থেকে অন্তত ১০টি সংঘবদ্ধ চক্র গত প্রায় ২৫/৩০ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ব্যবসার সাথে জড়িত। থানা পলিশ ও এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে বছরে অন্তত অর্ধশতাধিক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অনেকের এ ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে রুপান্তর হয়েছে।
বর্তমানে এই বালু উত্তোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বালু দস্যুরা। এলাকার মন্টু সরকার ও আশরাফের নেতৃত্বে গত মাস খানেক আগে আনা হয়েছিল সুবিশাল ড্রেজার। এই ড্রেজার দিয়ে যমুনার মাঝ নদী সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের উড়াপাড়া, মৌহালী ও ইজারাপাড়াসহ আশাপাশের এলাকাজুড়ে দিনভর তোলা হয়েছে বালু। কোটি টাকা মূল্যের এই বালু এনায়েতপুর নৌকা ঘাটের কাছে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ড্রেজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাটি উত্তোলনে কৌশল অবলম্বন করেছে চক্রটি। তারা ২ শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত করে ২০টি বিশাল ট্রলারে করে চর থেকে সারাদিন লাখ-লাখ ঘনফুট বালু লুট করে এনে এনায়েতপুর ঘাট হতে অন্তত ২০টি ট্রাকে সাড়া দিন বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমান নদীর মাঝখানে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে স্রোত পশ্চিম তীরে আঘাত হানায় এনায়েতপুরের বাক্ষ্মনগ্রাম হতে দক্ষিণে ভেকা পর্যন্ত ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই কারণে এখানে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ ব্যাহত হতে পারে বলে হতাশায় স্থানীয়রা।
বাক্ষ্মনগ্রামের আব্দুল মালেক, এলাহী হোসেন, আরকান্দির মোকছেদ আলী ও রহমান মিয়া জানান, অব্যাহত নদী ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব প্রায়। বাকি কিছু জমি আছে সেগুলোও আর রক্ষা পাচ্ছে না। যমুনার মাঝ চর থেকে বালু কাটায় স্রোত পরিবর্তন হয়ে আমাদের এলাকায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চাই দ্রুত বালু তোলা বন্ধ করা হোক।
বিষয়টি জানতে যমুনার চর হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত মন্টু সরকারের ব্যবহৃত ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ দিকে বিষয়টি নিয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু তাহির জানান, এর আগে ড্রেজার বন্ধ করে দিয়ে জরিমানা করেছিলাম। আবারো অন্য পন্থায় তা চললে দ্রুত বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।