Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধর্ষণের পর ভিডিও প্রকাশ, মামলা করায় মেরে ফেলার হুমকি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২২ AM
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২২ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ফরিদপুরের সালথা নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলার পর উল্টো ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

অভিযুক্ত পরিবারের অভিযোগ, মামলা করার পরও তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। উল্টো তাদের বাড়ি ছাড়া করা ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন জড়িতদের স্বজন ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এর সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। 

গতকাল শনিবার সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করে ওই ছাত্রী। ভিডিওতে সে বলে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, তার জন্য আমি কোর্টে মামলা করেছি। কিন্তু মামলা করার পরও আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কোনো বিচার তো করে নাই। এখন তিনি আমাদের বাড়িতেই থাকতে দিচ্ছেন না। আমার ভাইকে বাড়ি ফিরতে দেয় না।’

ওই ছাত্রী আরো বলে, ‘আমাদের ওপর যত ধরনের অন্যায় অত্যাচার তিনি করছেন।’ এ সময় ভিডিওধারণকারী তাকে প্রশ্ন করেন, ‘তোমার কোন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের?’ ওই ছাত্রী বলে, ‘গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু।’

এ সময় ভুক্তভোগী আরও বলে, ‘তিনি কোনো বিচার করেন নাই, বিধায় আপনার (ভিডিওধারণকারী) কাছেও বিচারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আপনাকে বলার পর চেয়ারম্যান আমাদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। আমার ভাইকে মারার জন্য খোঁজে। কাউকে বাড়ি ঘরে থাকতে দিচ্ছেন না।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে করে ওই ছাত্রী আরও বলে, ‘এখন বিষয়টি সমাধানে আপনার কাছে বিচার দাবি করছি। আমার তো বাবা নাই, আমার মা আর পরিবারকে মরতে হবে। এ ছাড়া আর কিছু করার নাই। আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ খোলা নাই। আপনি যদি ন্যায্য বিচার করেন তো পাবো, নয়তো কিছু হবে না। আমাদের পরিবারের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ নাই।’

ভিডিওতে এক সিরাজুল শেখ নিজের সমস্যার কথা জানান। ভিডিওধারণকারী তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি তো ওই মেয়েটির সঙ্গে শুরু থেকেই আছেন। আসলে এই মেয়েটি যা বক্তব্য দিয়েছে, তা কতটুকু সত্য?’ উত্তরে সিরাজ বলেন, ‘হ্যাঁ সত্য। এই মানুষগুলো একদম গরিব। ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলা দায়েরের পর তাদের পাশে দাঁড়ানোয় তারা (চেয়ারম্যান ও ধর্ষণে জড়িতদের স্বজন) আমাকেও ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। গ্রামের মানুষকে আমাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে দিচ্ছে না।’

সিরাজুল আরো বলেন, ‘আমার হাত-পা কেটে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন তারা। গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলুও গ্রামে তার লোকদের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, “সিরাজুলকে যেখানে পাবি তার হাত-পা কেটে ফেলবি।” ভয়ে আমি এখন পালিয়ে আছি।’

একই ভিডিওতে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর বড় ভাই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘লাভলু চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি সিরাজ কাকাকে নিজ হাতে মারবেন। আমাদেরকেও খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ভয়ে আমরা বাড়িছাড়া। প্রায় ১৫ দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে আছি।’

ধর্ষণের এ ঘটনায় শাকিল ফকির (১৯) নামের এক তরুণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে আরেক আসামি জাবের মাতুব্বর (২০) পলাতক রয়েছেন।

গত ৫ এপ্রিল রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নে ধর্ষণ ও ধর্ষণের দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন দুই ধর্ষক। পরে ওই স্কুলছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের যুগীকান্দা লক্ষ্মণদিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাকিল ফকির ও তার বন্ধু জাবের মাতুব্বরকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন।

মামলার পর থেকে তাদের পরিবারকে হত্যা ও বাড়িছাড়া করার হুমকি দিচ্ছিল জড়িতদের পরিবার। এ ঘটনায় গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলুর কাছে বিচার চাইতে গেলেও তিনি কোনো সগযোগিতা করেননি। উল্টো তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

এদিকে অভিযোগের পুরো বিষয়টি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা হয়েছে। আমি নিজেও এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিচার দাবি করেছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য নয়। আমি ভুক্তভোগীর পরিবারকে কোনো হুমকি দেইনি, এমনকি সিরাজকেও মেরে ফেলার হুমকি দেইনি।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ঘটনার পর আমি ওই মেয়েটির বাড়িতে গ্রাম্য পুলিশ মোতায়েন করেছি। তারা আমার কাছে এসেছিল, আমি তাদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছি।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দেলোয়ার হোসেন ধর্ষণের ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় শাকিল ফকির নামের একজনকে গ্রেফতারের পর সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। পরে জেলার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত রিমান্ডের শুনানির তারিখ পরে ধার্য করার আদেশ দিয়ে শাকিলকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তবে হুমকি-ধমকির বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ ওসি পাননি বলে জানান দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘হুমকি-ধমকির কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। আমাদের এসপি ও ডিসি সাহেবরা এসেছিলেন, তাদের কাছেও কোনো অভিযোগ হয়নি। তবে আমরা জানার চেষ্টা করব। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

Bootstrap Image Preview