সকল ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপদ হবে এমন একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করা ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই করছেন। বঙ্গবন্ধু কণ্যার নেতৃত্বে জীবন দিয়ে হলেও আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে যাব।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মো: আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকার ইনিস্টিটিউট অব ইনঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের সম্মেলকক্ষে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে “সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জীবন মান উন্নয়নে মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা ও মঠ-মন্দির সংস্কার-সরকারের অর্জন” বিষয়ক প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট’ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হিন্দু মঠ-মন্দির-শ্মশান সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য অনুদান প্রদান, হিন্দু অসহায়দের চিকিৎসার জন্য অনুদান, ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশনা ও শিশুদের শিক্ষা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এছাড়া মন্দির ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। অধিকন্ত, এ কার্যক্রম হিন্দু ধর্মীয় উপসনালয়গুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ এবং সমাজের দুর্নীতি, অপরাধ, হিংসা, জঙ্গিবাদ, নাসকতা দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অন্যান্য সম্প্রদায়ের ন্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কল্যাণে অসংখ্য কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মূলধন ২১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাম্বলীদের জন্য সারাদেশে ১৮১২ টি মঠ/মন্দির/শ্মশান সংস্কারের জন্য ২২৮কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ৩টি কর্মসূচির অধীনে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় মোট ১৯৯টি মঠ/মন্দির/শ্মশান সংস্কারের জন্য ২৩ কোটি টাকার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে দেশের অভ্যন্তরে চন্দ্রনাথ ও আদিনাথ তীর্থ ভ্রমণ এবং ২০১৯ সালে বহি:বাংলাদেশ (মায়াপুর, গয়া, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, বেলুরমঠ ও আদ্যাপীঠ) তীর্থ ভ্রমণ সম্পন্ন হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাবিষয়ক ২১৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন এবং ২০১৯ সাল সারাদেশে মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পে গীতা শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২০০ থেকে ৪০২ উন্নীত করা হয়েছে । “মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম” প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৫০০ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ১২ লক্ষ ২০ হাজার শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে । ২৫০টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় নেতা তথা পুরোহিত ও সেবাইতদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁদের সম্পৃক্ত করার জন্য ২০১৫ সালে ২৪ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার “আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ” শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ২৫ হাজার ৬০০ পুরোহিত ও সেবাইতকে ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এক বিরাট সমস্যা। এ সমস্যা এখন আর কোন একক দেশের সমস্যা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপরে নৃশংশ হামলা ও অত্যাচার করে দেশ থেকে বিতাড়ন সমস্যা, নিউজিল্যান্ড মসজিদে মুসুল্লিদের উপর সশস্ত্র হামলা এবং সর্বশেষ ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হামলা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই, দেশ নেই। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এবং শ্রীলংকার গীর্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শিশু জায়ান চৌধুরীসহ নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং শোক সন্তোপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ সময়ে তিনি বলেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। এই হোক আজকের দিনের আমাদের শপথ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, এমপি বলেন, জাতির পিতার অসাম্প্রদায়ির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তথা মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা, শ্মশান ও কবরস্থান উন্নয়নে সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করছে।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শ্রী মনোরঞ্জন শীল গোপাল, এমপি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আনিছুর রহমান রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা এর অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, ঢাকা এর সভাপতি শ্রী শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতি.সচিব), শ্রী রঞ্জিত কুমার দাস, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এ্যাড. উজ্জ্বল প্রাসাদ কানু, শ্রী শ্রী সিদ্বেশ্বরী কালি মন্দির, ঢাকা এর সভাপতি শ্রী জয়ন্ত কুমার দেব। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ট্রাস্টি অধ্যক্ষ বিপুল বিহারী হালদার।
বর্ণাঢ্য প্রীতি সভাবেশে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।