মনিষিরা বলেছেন 'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'। আমাদের সমাজে বাস করা এমন কিছু মানুষ আছে যারা সকলের অগোচরে নীরবে নিভূতে কাজ করে যাচ্ছেন। আর পাখির প্রতি এমন ভালবাসা থেকেই বাথরুম ছেড়ে দিয়েছিলেন মুলতান হোসেন নামে এক কর্মকতা। তিনি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
কবুতরের মত দেখতে কিছুটা ছোট আকৃতির পাখি ঘুঘু। এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। বিগত কয়েক বছর আগে বনে জঙ্গলে, হাট-বাজারে, রাস্তা-ঘাটে চোখে পড়লেও এখন তেমন দেখা যায় না। পাখি শিকারীদের কারণে এসব পাখি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে বৈচিত্রময় এ জগতের জীবদের প্রতি ভালোবাসা এক অনন্য। নীরবে অনেকে জীবদের ভালবেসে যান।
যুগে যুগে মানবজাতীর কতই না আগ্রহ, উৎসাহ, উদ্দীপনা রয়েছে। আবার কারো মধ্যে অদ্ভুত ধরণের মোহ বা ভালোবাসার জাগ্রত হয়। যা সবার মধ্যে হয়ে উঠে না। ভালোবাসার গভীরতা কারো প্রতি কারো অনেকাংশে বেশিই ধরা দেয়। এই ভালোবাসার গভীরতা ঈশ্বরের অবদান বললে ভুল হবে না বৈকি। পশুপাখির প্রতি এমন কিছু মানুষ নীরবে গভীরভাবে ভালোবেসে যায় তা আমাদের অজা না। আর পাখির প্রতি এমন সুখের পরশ বুলিয়ে দিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন।
জানা গেছে, গত ২০১৪ সালের আগষ্টে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগদান করেন মুলতান হোসেন। যোগদানের পর থেকে গত কয়েক বছর থেকে ওই অফিসের পিআইও’র ব্যক্তিগত বাথরুমের ভিতরে ভেন্টিলেটরে বাস করত একজোড়া ঘুঘু পাখি। ভেন্টিলেটরে ডিম দিয়ে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বড় হওয়ার পর আবার প্রকৃতির কোলে ফিরে যেত। কিন্তু গত দুই দিন অফিস বন্ধ থাকায় ঘুঘু পাখিটি ডিম পাড়তে ভেন্টিলেটর থেকে বেসিনের উপর এসে বাসা বানিয়ে ডিম দেয়।
গত ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে মুলতান হোসেন অফিস শেষে বাড়ি চলে যান। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় অফিস বন্ধ ছিল। ৭ এপ্রিল রবিবার অফিসে এসে বাথরুমে তিনি গিয়ে দেখেন এই দুই দিন অফিস বন্ধ থাকার মাঝেই ওই ঘুঘু দম্পতি ভেন্টিলেটর থেকে নেমে এসে তার বেসিনের কাঁচে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়ে দিব্বি বসে থেকে ডিমে তা দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে তিনি অত্যন্ত আশ্চর্য হন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন বলেন, উপজেলায় যোগদানের কিছুদিন পর হঠাৎ দেখি আমার বাথরুমের ভেন্টিলেটরে একজোড়া ঘুঘু দম্পতি বাসা বেধেছে। এরপর থেকে প্রতিবার প্রজনন কালে বাসা বেধে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর পর আবার প্রকৃতিতে চলে যায়।
গত বছর বর্ষাকালে তিনি দেখেন, ডিমে তা দেয়ারত ঘুঘু দম্পতি বৃষ্টির ছিটা পানিতে ভিজে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে তাদের গায়ে পানি যেন না পড়ে তার জন্য ভেন্টিলেটরের একটি অংশ ঢেকে দেন। এরই প্রেক্ষিতে গত চার বছর যাবৎ ঘুঘু দম্পতি তাদের নিরাপদ এই আশ্রয়ে থেকে নির্বিঘ্নে বংশ বিস্তারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি আরো বলেন, গত ৪ এপ্রিল অফিস শেষে বিকেলে বাড়ি চলে যায়। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় অফিস বন্ধ ছিল। ৭ এপ্রিল অফিসে এসে দেখি ঘুঘু দম্পতি ভেন্টিলেটর থেকে নেমে এসে বেসিনের কাঁচে বাসা বানিয়ে ডিম দিয়ে তা দিচ্ছে। এ দৃশ্য দেখার পর ঘুঘু পাখির সুবিধার্থে আমি এ অফিসের অন্য বাথরুম ব্যবহার শুরু করি।
পাখিদের একটু নিরিবিলি পরিবেশ করে দিতে বাথরুমের দরজায় প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কসটেপ দিয়ে আটকিয়ে দেয়, যাতে ভুল করেও কেউ ওই ঘুঘুজোড়ার বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। বাচ্চা বড় হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘুঘু দম্পতিকে আর দেখা যাচ্ছেনা বলেও জানান তিনি।
মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজী নাজমুল হোসেন বলেন, পাখি সংরক্ষণ ও শিকার না করার বিষয়ে আমাদের প্রচার ও প্রচারণায় মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় ও বেড়ে উঠতে একটা সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। আর ঘুঘু দম্পতিকে ডিম ও বাচ্চা ফুটাতে সহযোগিতা করায় নিঃসন্দেহ একটা ভাল উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি। আর জীব ও পাখি প্রেম ভালবাসা থেকেই সৃষ্টি হয়।