Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শবে বরাতের রাত আসলে আজও কাঁদে সেই পরিবারগুলো

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:১৭ PM
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:২৯ PM

bdmorning Image Preview


শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা মামলার সুরাহা হয়নি দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেলেও। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই (শবে বরাতের রাতে) সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলাচরে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ছয় কলেজছাত্রকে।

প্রতিবছর শবে বরাত এলেই সাভারের কিছু পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। আজও সেদিনের কথা মনে করে কাঁদে তারা। নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ- ধীরগতিতে সাক্ষ্য গ্রহণের কারণেই আদালতে মামলাটি ঝুলে আছে।

সেদিনের ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাপললিফের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শামীম (১৮), মিরপুর বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ (২০), একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল (২১), উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত (১৬), তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান (১৯) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব (২০)।

সেদিন শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিন বাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলারচরে ঘুরতে এসেছিলেন সিফাত, পলাশ, কান্ত, রহিম, টিপু, ইব্রাহীম ও আল-আমিন নামের ৭ বন্ধু। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ডাকাত সন্দেহে পেটানো হয় তাদেরকে।

সেদিন রাতেই মারা যায় আল-আমিন ছাড়া বাকি ৬ জন। সেদিন ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে ফেরেন আল-আমিন। ৬ বছর পর সে দিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা বলতে গিয়ে এখনো তার চোখে মুখে ফুটে ওঠে আতঙ্কের ছাপ।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আল-আমিন বলেন, আমরা ডাকাত না। বারবার বলেছি, তবু পিটানো ঠেকাতে পারিনি। কোন দিক দিয়ে ঠেকাবো, সামনে দিয়ে ঠেকালে পিছন দিয়ে মারে এবং পিছন দিয়ে ঠেকালে সামনে দিয়ে মারে। সবচেয়ে খারাপ লাগে পোষ্টারগুলোতে তাদের ছবি দেখি। আমাদের পরে ঘটে যাওয়া অনেক শিশু নির্যাতনের বিচার হয়েছে। আমাদের বিচার কেনো হয় না। আমরা কি শিশু ছিলাম না?

৬ কলেজছাত্র হত্যার ঘটনায় ওই সময় ৬০০ গ্রামবাসীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর সিআইডির হাত ধরে মামলা আসে র‌্যাবের হাতে। ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাব ৬০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

মামলার বর্তমান অবস্থা কি- জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাকিলা জিয়াসমিন মিতু জানান, ছয় ছাত্র হত্যা মামলাটির ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। মামলার শেষ দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। তারা সাক্ষ্য দিলে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।

তিনি বলেন, স্বাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম। তাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তিনবার সমন জারি করা হয়েছে। তিনি অবসরে গিয়েছেন। তাই তার কর্মস্থলের ঠিকানায় তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা এখন তার ঢাকার পল্লবীর বাসার ঠিকানায় সমন পাঠিয়েছি।

তার সাক্ষ্য শেষ হলে তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা অথাৎ শেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারি করা হবে। তিনি সাক্ষ্য দিলে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানান শাকিলা জিয়াসমিন মিতু।

মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণে ধীর প্রক্রিয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, মূলত পুলিশ এ মামলায় সহায়তা করছে না। সমন ও ওয়ারেন্ট পেয়েও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন না। তাদের আদালতে আনতে আমাদের দৌড়াতে হচ্ছে, তাদের কাছে যেতে হচ্ছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ-উপরোধ করাসহ নানা রকমের কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা (পুলিশ) মামলাটি ভিন্ন খাতে, অর্থাৎ ডাকাতি সাজাতে চেয়েছিল। এ জন্য সাক্ষীদের আনতেও তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এ মামলায় অনেক আসামিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মূলত ওই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আশা করছি, আসামিদের যথাযথ সাজা দেবেন আদালত।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফাইজুন্নেছার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে। মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Bootstrap Image Preview