Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

এই ধরেন ভালো লাগে, ঘোরেতে, ঠেলায়

নঈম নিজাম
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:১৯ PM
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:১৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাক্সবন্দী ক্যান্সার নির্ণয়ের মেশিন। আজ থেকে সাত বছর আগে এ মেশিন কেনা হয়। এখন পর্যন্ত ব্যবহারের জন্য খোলা হয়নি। মেশিন কিনতে লেগেছে ২০ কোটি টাকা। তার পরও সে মেশিনের বাক্স খোলা হয়নি। মেশিন নষ্ট না ভালো, তাও কেউ জানে না। বড় অদ্ভুত আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এ মেশিন কেনার দায় অন্য কোনো সরকারের ওপর চাপানো সম্ভব নয়। কারণ বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে এটি কেনা হয়েছিল। জেনে-শুনে আমাদের মাননীয় মন্ত্রীরা সায় দিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যৌথ প্রযোজনায়। স্বাস্থ্যসেবার নামে সোমনাথ মন্দির লুটের মতো কারবার চলছে। এ কারবার কোনো দিন বন্ধ হবে কিনা কেউ বলতে পারে না। নীতি ও নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে সর্বস্তর থেকে।

একজন মানুষ সবকিছু স্বাভাবিক রাখার লড়াই আর কত করবেন তাও বুঝি না। আজকাল চারপাশে তাকালে অনেক কিছুই জটিল লাগে। সবখানেই সবাই ঘোরে দিন কাটাচ্ছে। সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। স্বপ্নরা হারিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে সমাজের সর্বস্তরে। সেদিন এক বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম, কেমন আছো? জবাবে বলল, এই তো আছি, ধর খুশিতে ঘোরেতে, ঠেলায়। এ কথাগুলো কোথা থেকে আবিষ্কার করল জানতে চাইলাম। বলল, বিগত সংসদ নির্বাচন চলাকালে বরিশালে এক ভোটার ভোট দিয়ে আবার লাইনে দাঁড়াল। তার হাতে রয়েছে কালির দাগ। বিষয়টি চোখে পড়ে একজন টিভি সাংবাদিকের। সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক প্রশ্ন করল, আপনার হাতে কালির দাগ। একবার ভোট দিয়েছেন আবার কেন লাইনে? জবাবে সেই নারী ভোটার বলল, ‘এই ধরেন ভালো লাগে, ঘোরেতে, ঠেলায়’। এর মাঝে আমাদের একজন নায়ক গেলেন ভারতে। তিনি গিয়ে নামলেন ভোটের প্রচারণায়। এক দেশের নাগরিক অন্য দেশের ভোটের প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। তারপর কেন ফেরদৌস এ প্রচারণায় অংশ নিলেন? তিনি মিডিয়াকে বললেন, বেশি আবেগে কাজটি করেছেন। বলা হচ্ছে যা করেছেন, তার চেয়ে বেশি রিঅ্যাকশন হয়েছে। হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। আচ্ছা ধরুন বাংলাদেশের ক্ষমতায় এখন আওয়ামী লীগ। শাহরুখ খান আর সালমান খান ঢাকায় এলেন। তারা বিএনপি অথবা জাতীয় পার্টির পক্ষে প্রচার র‌্যালিতে অংশ নিলেন। বক্তৃতা দিয়ে ভোট চাইলেন ধান অথবা লাঙ্গলে। তারপর বাংলাদেশে কী প্রতিক্রিয়া হবে? শাহরুখ খান বা সালমান, অমিতাভের মতো বিশ্বখ্যাত তারকাকে আমাদের মিডিয়া কি ছেড়ে দেবে? না বিপক্ষ দল ছেড়ে কথা বলবে? আচ্ছা এবার উল্টো করে বলি, আওয়ামী লীগের ভোটের র‌্যালিতে ভারতের বিশাল এই তারকারা অংশ নিলেন। বিএনপি কি তখন বসে চকলেট খাবে? প্রিন্ট আর টিভি মিডিয়া হাততালি দেবে? মোটেও না। সবকিছুর একটি শালীনতা ও পরিমিতিবোধ আছে। আছে সব দেশের নিজস্ব আইন-কানুন, রীতিনীতি। ভোট অথবা রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা একটি দেশের নিজস্ব ব্যাপার। সে বিষয়ে অন্য দেশের নাগরিকরা প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে পারে না। ফেরদৌস যা করেছেন, খুশিতে, আবেগে, ঘোরে অথবা ঠেলাতে করেছেন। এ আবেগ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করেছে। শিষ্টাচার লঙ্ঘন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার এবং আমাদের অন্য তারকাদের অবস্থানও অন্য দেশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আসলে নিজের অবস্থানটা বুঝি না।

সেদিন কুমিল্লার মেঘনা থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করলেন। বললেন, ভাই, সংরক্ষিত আসনের নারী এমপির জ্বালায় আছি। ভোটের আগের দিন নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে মাঠে কাজ করছেন। নির্বাচন কমিশনের আইন-কানুন মানছেন না। বললাম, করতে দিন। সবাই একটা ঘোরে আছে। ঘোর কেটে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কলকাতায় ঘোরে শুধু ফেরদৌস নন, আরেকজন অভিনেতাও জড়িয়েছেন। তাদের দুজনকে কলকাতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সত্যি লজ্জাজনক!

বাংলাদেশে একেক সময় একেকটি গ্রুপ বেরিয়ে আসে। এ গ্রুপগুলোর ঘোর চারপাশে হুলুস্থূল বাধিয়ে দেয়। অতি উৎসাহীরা চারপাশের সর্বনাশ করে ছাড়ে। কারও কারও এ সার্কাসি আচরণের খেসারত দল-দেশকে দিতে হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন টের পাচ্ছেন তার দলের অনেক নেতা-কর্মীর ২০০১ সালের পরের আচরণের খেসারত। শুধু তাই নয়, এখন তার অনেক সহযোদ্ধার নানামুখী আঁতাতের খেসারতও বেগম জিয়াকে দিতে হচ্ছে। যে কোনো দলেরই সাহসী কর্মীরা অনেক সময় বুকভরা আর্তনাদ নিয়ে দুঃখ-বেদনাকে হজম করেন। তবু তারা সাফল্য চান দলের। আজকাল সব দলেরই রাজনীতির স্বাভাবিক সংস্কৃতি সাধারণ মানুষের কাছে অস্পষ্ট। নানা কিসিমের মানুষের কিচিরমিচির রাজনীতির স্বাভাবিকতা নষ্ট করছে। আর রাজনীতির নেতিবাচক অবস্থান সামাজিক অবক্ষয় তৈরি করছে। মানুষের মাঝে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের হতাশা। দেশের স্বাভাবিকতার জন্য এ হতাশা বুঝতে হবে নীতিনির্ধারকদের। বাস্তবতাকে আড়াল করা যাবে না। নীতি ও নৈতিকতা এখন সমাজের সর্বস্তরে নির্বাসিত। কারও একার দোষ দিয়ে লাভ নেই। ক্ষমতার উগ্রতা জনজীবনে চলার নানা গলিপথে নীরব ঘাতকের মতো হৃদরোগ তৈরি করছে। সব মানুষকে একটি দলের সমর্থক হতে দেখলে ভালো-খারাপ বোঝার সুযোগ থাকে না। শুনি বিএনপির ভিতরেও এখন আওয়ামী লীগের ছড়াছড়ি। বিএনপির অনেক নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার গভীর সখ্য তলে তলে সরকারের সঙ্গে। এ হতাশা-বঞ্চনার কথা বিএনপি নেতারাই আবার প্রকাশ্যে বলেন। সেদিন বিএনপির এক নেতা দলের ভিতরে সৎ নেতার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাজনীতির এ নেতিবাচক অবস্থান সব দলেই রয়েছে।

রাজনীতির স্বাভাবিক স্রোতে কখনই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা নেই। কিছু অস্বাভাবিকতা সমস্যা তৈরি করে। নীতি-নৈতিকতা-বিবর্জিত করে রাজনীতিকে। কিন্তু কোনো বাড়াবাড়িই ভালো কিছু বয়ে আনে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আমরা অন্য দশটা দলের সঙ্গে মেলাতে চাই না। যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ প্রত্যাশাকে আহত করলেই বুকের ভিতরে তীর বিদ্ধ হবে, রক্তের জমাট সৃষ্টি করবে। রবীন্দ্রনাথকে আমরা সুখী কবিই মনে করি। কিন্তু জীবনের বড় সময়েই রবীন্দ্রনাথকে থাকতে হয়েছে কষ্টের দহনে। প্রিয়জনকে হারানোর কষ্টগুলো রবীন্দ্রনাথকে বিদ্ধ করে রাখত সবসময়। অন্যদিকে কবি নজরুল ছিলেন চিরদুঃখী। ছোটবেলা থেকে কষ্টের সমুদ্রে সাঁতার কেটে তার বেড়ে ওঠা। কবি নজরুল ১৯৩০ সালের ৭ মে পুত্র বুলবুলকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে যান। বসন্ত রোগের তখন চিকিৎসা ছিল না। কবিও ছিলেন অর্থকষ্টে। রোগে ভারাক্রান্ত পুত্রের পাশে বসে কবি ফারসি ভাষা থেকে রুবাইয়াৎ বাংলায় অনুবাদ করেন। এ সময় কবির যাপিত জীবনের মাঝে এক ধরনের আধ্যাত্মিকতা ভর করে। পুত্রের পাশে বসে থেকে লিখেছিলেন, ‘আমি দ্বার খুলে আর রাখব না পালিয়ে যাবে গো।’ কবি নজরুলের জীবনের আরেক বিপর্যয় প্রিয়তমা পত্নী প্রমীলা দেবীর চিরতরে চলে যাওয়া। মৃত্যুর আগে প্রমীলা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর বেদনায় বিদ্রোহ ও প্রেমের এই কবি লিখেছিলেন- ‘যদি আর বাঁশী না বাজে, আমি কবি বলে বলছি না, আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি, আপনারা আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, আমি প্রেম পেতে এসেছিলাম, কিন্তু সে প্রেম পেলাম না বলে, এই নীরস পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’ আহারে কত আকুতি এ লাইনগুলোতে। হৃদয়কে নাড়া দেয়। কবি নজরুলের আরেকটি লাইন বুকের ভিতরে আমার সব সময় বাজে। কবি লিখেছেন-

‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,

অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় খুঁজবে আমায় খুঁজবে’

রাজনীতি নিয়ে অনেক বলেছি। লিখেছি। কিন্তু নিজের ভিতরের ছাইচাপা আগুন ভুলে যাই অতীতকে মনে করে। মানুষের এক জীবনে অনেক কাহিনি বেরিয়ে আসে। স্বপ্নচারী মানুষও বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাস করেন। হৃদয়ের অতলে লুকিয়ে থাকা সেই কষ্ট সহজে কাউকে জানান দিতে কারও ভালো লাগে না। আমাদের রাজনীতির পদে পদে বঞ্চনার কাহিনি কিছু মানুষ পাথরচাপা দিয়ে রাখে। আবার অতি উৎসাহীদের বাড়াবাড়ি দেখে বেদনার নীল রঙের মাঝে নিজেকে আড়ালেও রাখে। থাকুক রাজনীতি। কথা বলছিলাম রবীন্দ্রনাথের বেদনার কথাগুলো নিয়ে। আমরা আনন্দের ঢেউয়ে ভেসে বেড়ানো কবি হিসেবে কল্পনা করি রবীন্দ্রনাথকে? ‘আজি জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’- গানকে রোমান্টিক সংগীত হিসেবে ধরে আপ্লুত হই। সব সৃষ্টির আড়ালেই বেদনা লুকিয়ে থাকে। এ গানটি কবি লিখেছিলেন, পুত্র শমীর মৃত্যুর কষ্টকে চাপা দিতে গিয়ে। বার বার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখে রবীন্দ্রনাথ বেদনায় সৃষ্টির ঝড় তুলতেন। বড় অদ্ভুত এ জীবন। রবীন্দ্রনাথের জীবনে প্রথম মৃত্যুর খবর মা সারদা দেবী। কিন্তু মৃত্যুর কষ্ট অনুভবের বয়স তখনো তার হয়নি। তাই এ নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কী হইয়াছে ভালো করিয়া বুঝিতেই পারিলাম না! প্রভাতে উঠিয়া যখন মার মৃত্যু সংবাদ শুনিলাম তখনো সে কথাটার অর্থ ভালো করিয়া বুঝিতেই পারিলাম না! বাইরের বারান্দায় আসিয়া দেখিলাম, তাহার সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে খাটের উপরে শয়ান! কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর সে দেহে তাহার কোনো প্রমাণ ছিল না, সেদিন প্রভাতের আলোকে মৃত্যুর যে রূপ দেখিলাম তাহা সুখ প্রাপ্তির মতোই প্রশান্ত ও মনোহর।’ রবীন্দ্রনাথ এরপর হারালেন প্রিয় বৌঠানকে। শোকের নিবিড় অন্ধকার রূপ রবীন্দ্রনাথ দেখতে পান বৌঠান কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুতে। কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। এ আত্মহত্যা ঠাকুরবাড়িকে নাড়িয়ে দেয়। কবি জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলেন, মৃত্যুশোকের তীব্র যন্ত্রণা। কবির বয়স তখন ২৪ বছর। বৌদির সঙ্গে কবির ছিল গভীর বন্ধুত্ব, ছোটবেলার খেলার সাথী, অনেক কিছু। এ মৃত্যু সামলাতে কবিকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। কবি তখনো জানতেন না এরপর আরও অনেক মৃত্যু অপেক্ষা করছে। নিয়তির নিষ্ঠুরতা বলে কথা। মেজ মেয়ে রেণুকার চিকিৎসার ত্র“টি ছিল না। এ মেয়ের জামাতাকে রবীন্দ্রনাথ লন্ডন পাঠিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়তে। জামাতা ডাক্তারি শেষ না করেই ফিরে আসেন। মেয়ের সঙ্গে পিতার সম্পর্কটা ছিল অন্য মাত্রার। এ নিয়ে রেণুকার মনে কষ্ট ছিল। রেণুকার মৃত্যুর দেড় বছরের মাথায় কবি হারালেন পিতা দেবেন্দ্রনাথকে। তখনো রেণুকার মৃত্যুর রেশ কাটেনি। এর পরই মারা যান কবিপুত্র শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি আদর করে ডাকতেন শমী। শমী বেড়াতে গিয়েছিল বাবার বন্ধুর ছেলে ভোলার সঙ্গে। কলেরায় আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় এক দিনের মধ্যে।

অতি আদুরে মেয়ে মাধুরীলতা বেলার বিয়ে দেন আনন্দে উচ্ছ্বাসে ব্যারিস্টার জামাতার সঙ্গে। জামাতার সঙ্গে কবির সম্পর্কের অবনতির পর কন্যা মাধুরীলতা চলে যান শ্বশুরবাড়ি। সেখানে অসুস্থ হয়ে ওঠেন। অসুস্থ কন্যাকে দেখতে কবি নিয়মিত যেতেন জামাতার বাড়িতে। একদিন জামাতা শ্বশুরকে দেখে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। টেবিলে পা তুলে সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকেন। এ অপমান সহ্য করেই কবি যেতেন কন্যার কাছে। এর মাঝে একদিন যাওয়ার পথে শুনলেন প্রিয় কন্যাটি বাবাকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে। কবি আর গেলেন না। ফিরে এলেন। কবি তার আরেক মেয়ে মীরার জামাই নগেন্দ্রকে পাঠান আমেরিকায় পড়তে। সেই জামাইকে নিয়েও কবি শান্তিতে ছিলেন না। শ্বশুরকে জ্বালাতেন টাকার জন্য। মীরা বেশিদিন স্বামীর সান্নিধ্য পাননি। নগেন্দ্র আমেরিকা থেকে ফেরার কিছুদিন পরই মারা গেলেন মীরা। মীরার ছেলে নিতুকে অল্প সময়ে হারালেন কবি। এসব বলার কারণ, মাঝে মাঝে আমরাও সবাই নানা সুখ-দুঃখে জীবন অতিবাহিত করি। নিজের ভিতরটা আড়াল করে রাখি। চারদিকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মানিয়ে নিয়ে আদর্শকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু একজন সত্যিকারের রাজনৈতিক কর্মীর বঞ্চনার আঘাত রবীন্দ্র- নজরুলের মতোই। তিল তিল শ্রম, ঘাম, মেধা, মননে একজন সত্যিকারের কর্মী জীবন উৎসর্গ করে। বিরোধী দলের রাজনীতিতে ঝুঁকি নেয়। কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতি সেই কর্মীদের বাদ দিয়ে আগাছা-পরগাছাদের মূল্যায়ন করলে ভিতরটা জ্বলতে থাকাই স্বাভাবিক। চাটুকাররা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে না। খন্দকার মোশতাককে পাস করাতে ব্যালট বাক্স ঢাকায় আনতে হয়েছিল। আজ অনেক মোশতাক দেখি চারদিকে। মোগল সম্রাটের মতো নবরত্ন- রাজনীতির এ যুগে পাওয়া যাবে না। কিন্তু দক্ষ মানুষদের অবস্থান না থাকলে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হয় না। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব সবসময় একরকম হয় না। অনেক কিছুই বাস্তবতার নিরিখে তৈরি। আর সাধারণ মানুষও হিসাব-নিকাশ বুঝে নেয় অন্যভাবে। অবশ্যই মানুষ পদ্মা সেতু চায়, রূপপুর প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল চায়। কিন্তু সবার আগে চায় আইনের শাসন। একটি দেশের পরিপূর্ণতা আইনের শাসন ছাড়া আসতে পারে না। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা। তার কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হলেও আওয়ামী লীগের আসন থাকত দুই শতাধিক। এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। বিএনপির এবার ভোট করার মতো প্রস্তুতি ছিল না। মানুষের আস্থাও সেভাবে ছিল না। উন্নয়নের প্রতি মানুষের সমর্থন ছিল, আছে। তার পরও অতি উৎসাহীরা কেন ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করল? যা-ই হয়েছে কথা বলে আর লাভ নেই। এখন সবার আগে আইনের শাসন দিতে হবে। স্বচ্ছ রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। আইনের শাসন কার্যকর না হলে আগামীতে রাজনীতিতে গভীর শূন্যতা তৈরি হবে। আমরা তা চাই না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই সুন্দর আগামীর জন্য সবসময় দেখতে চাই।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Bootstrap Image Preview