Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ব্যাংক ডাকাতির ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ৪ বছর

নাঈম ইসলাম, সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৫৭ PM
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল, দেশের নৃশংস ইতিহাসের দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন। আজকের এ দিনেই ডাকাতদের ছোড়া অনবরত গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড ও বোমার বিস্ফোরণে আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকা যেন হয়ে উঠেছিল রণক্ষেত্র। এ ঘটনায় ১ জন ডাকাতসহ নিহত হয়েছিলো ৯ জন। ডাকাতির ঘটনা ঘটে সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক শাখায়।

ওই দিন বেপরোয়া অস্ত্রধারী ডাকাতদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ব্যাংকের ম্যানেজার মো. ওয়ালিউল্লাহ, ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী বদরুল আলম, ব্যাংকের গ্রাহক স্থানীয় গ্লোরী নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাবুদ্দিন মোল্লা পলাশ, ক্রোকারিজের দোকানদার মনিরুজ্জামান, ঝালমুড়ি বিক্রেতা নূরুজ্জামান, টেক্সটাইল ব্যবসায়ী জমিরউদ্দিন, চালের দোকানদার নূর মোহাম্মদ ও আইয়ুব আলীসহ আট জন। এছাড়া পালাতে গিয়ে গণপিটুনীতে মারা যায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ডাকাত।

তবে ঘটনাস্থল দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেদিন কি ভয়াবহ তান্ডবটাই না চালিয়েছিল ডাকাতরা। তারপর থেকেই যখনই ব্যাংক ডাকাতির কথা মনে পরে অথবা অন্য কোথাও ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে শুনে তখনই আঁতকে উঠেন নিহতের স্বজনরা, আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ব্যাংকের নিচে সেদিন অস্ত্রধারী ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে ছুড়িকাঘাতে মারাত্মক জখম হয়েছিলেন বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলাম এখন যে জায়গায় ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। ডাকাতরা সেখানেই আরেক ঝালমুড়ি বিক্রেতা নূরুজ্জামানকে হত্যা করেছিল। 

ভয়াবহ সেই দিনের কথা জানতে চাইলে বৃদ্ধ নুরুল দীর্ঘক্ষণ নির্বাক থেকে উত্তর দেন, ৪ বছর পরেও ডাকাতদের হত্যাযজ্ঞ মনে হলে শরিরে কাটা দেয়।

তিনি বলেন, ব্যাংক ডাকাতির দিন দুপুর বেলা আমি মসজিদের মাইকিং শুনে ছুটে এসেছিলাম। খালি হাতে প্রতিরোধ গড়তে দাড়িয়েছিলাম ডাকাতদের সামনে। এসময় এক ডাকাত আমার তলপেটে দুইবার ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়। তারপরও ডাকাতকে ধরতে গেলেে আমার হাতে জখম করে পালিয়ে যায় ঐ ডাকাত। এরপর সজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় নিজেকে খুঁজে পাই।

নুরুল আরো বলেন, সেদিনের কথা মনে হলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন তিনি। ডাকাতরা যেভাবে সেদিন তান্ডব চালিয়েছে তা ভোলার নয়। যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে ও গুলি করেছে। আর ডাকাতদের ছোড়া অনবরত গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড ও বোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকা যেন হয়ে উঠেছিল রণক্ষেত্র।

ঐ দিনের ঘটনায় নিহত অবসরে থাকা বিডিআর সদস্য আইয়ুব আলীর ছেলে শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম শুভ বলেন, ঘটনার দিন তিনি সাভার কলেজে গিয়েছিলেন। দুপুরে ব্যাংকে ডাকাতদের হানায় তার বাবা গুরুতর আহত হয়েছেন শুনে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে তার বাবা আর পৃথিবীতে বেঁচে ছিল না। ডাকাতরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল তার মাথার উপর একমাত্র ছায়া, বাবাকে। আজও তিনি এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি।

ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হোটেল ব্যবসায়ি সামিউল জানান, ঐ দিনের ঘটনা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে। এঘটনার পর অনেকদিন দিনের বেলাতেও এই এলাকা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে ভয় পেত। তবে এখন সব কিছু স্বাভাবিক হলেও যারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের মনে সব সময় কেন জানি একটা আতঙ্ক বিরাজ করে।

এরপর ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য এক জনের জায়গায় অতিরিক্ত আরো এক জন গানম্যান রাখা হয়।

ব্যাংক ম্যানেজার ওয়ালিউল্লাহ নিহতের পর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ফিরোজ আহমেদ। এরপর দীর্ঘদিন ব্যাংক পরিচালনা করেন তিনি।  এখন স্বাভাকিভাবেই তাদের ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান সদ্য ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পাওয়া বিমল কুমার সাহা।

তিনি আরো জানান, প্রতি বছর নিহতদের স্মরণে ব্যাংক কতৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের স্বজন ও এলাকাবাসীদের অংশগ্রহণে দোয়ার আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, এ হত্যার দায়ে ২০১৬ সালে আদালত ১১ আসামির মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২ জনের তিন বছর করে কারাদণ্ড ও জরিমানা এবং বাকী ২ জনকে খালাস দিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview