Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সিংড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌন হয়রানীর অভিযোগ

আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩৬ PM
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


নাটোরের সিংড়ায় বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের গণিত বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে বেরিয়ে এসেছে অন্তরালের খবর। একজন সিনিয়র, ভালো দক্ষ শিক্ষককে বলির পাঠা বানানোর জন্য কয়েকটি মহলের ষড়যন্ত্র প্রকাশ পেয়েছে। একজন ভালো শিক্ষককে এভাবে লাঞ্চিত করায় ক্ষোভ বিরাজ করছে অভিভাবক মহলে। 

জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের গণিত বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণীর ১৩ জন শিক্ষার্থী ও ১১ জন অভিভাবক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দেয়া হয়। এতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়।

এনিয়ে দু'একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এবিষয়ে সহকারী কমিশনার ভূমিকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে অনুসন্ধানে স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের সাথে কথা বলে বেরিয়ে আসে ঘটনার রহস্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত। প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী প্রায় ৮০০ জন। অভিযুক্ত ফজলুর রহমান ২০০৯ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি যোগদানের পর স্কুলের নিয়ম শৃংখলা, পড়ার মান সুন্দর এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করার দিকে নজর দেন। 

সম্প্রতি সিংড়া পৌরসভার মাদরাসা মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে দ্বিমিক কোচিং সেন্টার। সরকারিভাবে কোচিং বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে সেখানে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। পৌরসভার বিভিন্ন সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করেন। কোচিং সেন্টারের পরিচালক মারুফ ওলি তিলক এর নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক এটি পরিচালনা করে আসছে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ এই কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়েন। ক্লাস চলাকালীন সময়েও বিয়াম স্কুলের সেই শিক্ষার্থীরা কোচিং এ পড়েন এমন অভিযোগও রয়েছে।

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ড্রাফট এখানের পরিচালকের পরামর্শে করা হয় এবং তিনিই নিজের কোচিং সেন্টারের স্বার্থে একজন সুনামধন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ লিখে দেন। এখানেই অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। এদিকে বিয়ামের পাশেই অবস্থিত রেনেসাঁ অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুল এর অধ্যক্ষ সাংবাদিক সাইফুলের সাথে গোপন বৈঠক করে সংবাদটি রং মাখিয়ে প্রকাশ করা হয়। 

শনিবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিনে পৌর এলাকার মাদরাসা মোড়ে ওই দ্বিমিক কোচিং সেন্টারে গিয়ে বিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়তে দেখা যায়। এসময় কোচিং এর পরিচালক তিলককে কয়েকটি প্রশ্ন করা হলে তিনি তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। উপরন্ত সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরন করেন।

বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার বিয়াম স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে সহকারী কমিশনার ভূমি বিষয়টির তদন্তে গেলে সেখানে ওই কোচিং সেন্টার এর পরিচালক তিলক বিয়ামে উপস্থিত হয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে নেন এবং শিক্ষক ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু তিনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকও নন, আবার কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকও নন।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, দীর্ঘদিন থেকে দ্বিমিক কোচিং সেন্টারের পরিচালক তিলক তার কোচিং সেন্টারে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ (টাকা দিতে হবে না, তোমরা পড়ে এসো) করে আসছে। তার কোচিং সেন্টারে পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাদের টার্গেট বিয়ামের সুনামধন্য শিক্ষকদের উপর। কারণ বিয়ামের মান ক্ষুন্ন হলে শিক্ষকদের কাছে না পড়ে একদিকে কোচিং এ আকৃষ্ট হবে, অপরদিকে পাশে রেনেসাঁর দিকে ঝুঁকবে শিক্ষার্থীরা।

কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক ও অভিভাবকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ফজলুর রহমান একজন ভালো মানের শিক্ষক, তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ তাদের কেউ দেয়নি। অভিযোগ প্রদানকারী কয়েক শিক্ষার্থীর চলাফেরা আপত্তিকর ছিল। এবিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগও দেয়া আছে। তবে হঠাৎ করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ এমন অভিযোগগুলো তাদের কাছে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তারা বলেন, মূলত কোচিং বাণিজ্য এবং পার্শ্বে অবস্থিত একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, গত ৬ এপ্রিল স্কুলের নবম শ্রেণির ক্লাস পরীক্ষা শুরুর সময় কিছু শিক্ষার্থীদের আচরণ  দৃষ্টিগোচর হয়। এক সাইডের ৭টি ব্রেঞ্চ পরিপূর্ণ অন্য সাইডে দুটি বেঞ্চ পরিপূর্ণ ছিলো, আমি শুধুমাত্র পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য পিছনের দু'ব্রেঞ্চের শিক্ষার্থীদের অপর সাইডে আসতে বলি। কিন্তু তারা না এসে তর্কে জড়িয়ে পড়ে।

পরে পাশের রুমের দায়িত্বরত ম্যাডামকে ডেকে নিয়ে আসি, ম্যাডাম তাদেরকে অনুরোধ করলে তারা বসে কিন্তু ১০ মিনিট পর সাদা খাতা জমা দিয়ে চলে যেতে চায়। এতে আমি পরীক্ষার নীতি বহির্ভূত বলে তাদের বারণ করলেও তারা আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। মূলত এর বেশি কিছু ঘটেনি। পরে শুনলাম ওই শিক্ষার্থীরাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে হলুদ সাংবাদিকতা করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান এবং নির্দোষ কেউ যাতে অপরাধী না হয় সেবিষয়ে বিনয়ের সাথে সাংবাদিকদের সংবাদ পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

দ্বিমিক কোচিং সেন্টারের পরিচালক মারুফ ওলি তিলকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন একটা ভুল হচ্ছে। আমি শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ। পরে কথা বলবো। 

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আজিজুল ইসলাম জানান, এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়। এর বেশি কিছু জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। 

রেনেসা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সিংড়া প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদ ছাপানো হয়েছে। তবে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কোন প্রমাণ (কল রেকডিং বা প্রকাশ্যে) তার কাছে নেই।  

সহকারী কমিশনার ভূমি বিপুল কুমার জানান, এবিষয়ে গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। আশাকরি এ ঘটনার সত্যটা বেড়িয়ে আসবে।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, সহকারী কমিশনার ভূমিকে কঠোরভাবে বলা আছে। তদন্ত শেষে দোষী বা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   



 

Bootstrap Image Preview