ভূল তারিখে পবিত্র শবে বরাতের তারিখ ঘোষণার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির পদত্যাগ করা উচিত। তারা দেশের কোটি কোটি মুসলমানদের বিশ্বাস রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনি অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল সভাপতি আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান।
তিনি বলেন, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটিতে রুইয়াতিল হিলাল মজলিশ থেকে অথবা দেশের সুন্নী কোন আলেম উলামাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। বরং একতরফাভাবে একটি বিশেষ মতাদর্শী গোষ্ঠীর উলামাদের দিয়ে একটি বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। যা গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে শামসি ও হিজরী ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কারণ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষিত তারিখের উপর ভিত্তি করে এদেশের দ্বীনদার মুসলমানগণ পবিত্র শবে বরাত, শবে ক্বদর, দুই ঈদ, পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ইত্যাদি পালন করে থাকেন। কিন্তু এবার ২৯ রজবুল হারাম শরীফ বাদ মাগরিব দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র শা’বান মাসের চাঁদ দেখা দেখা গেলেও তারা সেটাকে আমলে না নিয়ে দ্বীনদার মুসলমানগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন এবং এখনো তাদের ভূল সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। যা সুস্পষ্ট সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী সিদ্ধান্ত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মুফতিয়ে আ’যম আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ এবং মুন্সিগঞ্জ ও খাগড়াছড়ি জেলা থেকে আগত চাঁদ দেখার প্রত্যক্ষদর্শী মুসূল্লীগণ।
সংবাদ সম্মেলনে আলোচকগণ বলেন, সাধারণভাবে চাঁদ দেখার জন্য দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বলা হচ্ছে ডিসি না বললে সেই স্বাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য না।
চাঁদ দেখার মিটিং এর আগে কেন ঘোষণা দেয়া হয়, “বাংলাদেশে কোথাও চাঁদ দেখা গেলে, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৯৬৪৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭ নম্বরে ফোন করে সে খবর জানাতে অনুরোধ হলো।” এই নাম্বার গুলো না দিয়ে ডিসি সাহেবদের জানানোর কি কোন নাম্বার দেয়া হয়েছিলো?
আলোচকগণ বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা ২৯ রজবুল হারাম শরীফ দিবাগত রাতে খাগড়াছড়ি ডিসি সাহেবকে ফোন করলে ডিসি সাহেব প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে নিশ্চিতও হয়েছেন।
কিন্তু রাত ১১টার দিকে ডিসি সাহেব প্রত্যক্ষদর্শীদের আবার ফোন করে বলেছেন, “চাদ দেখার ঘোষণা হয়ে গেছে, চুপ করে যান।” এটা কি শরীয়ত সম্মত কথা? আলোচকগণ বলেন, যেখানে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু ৬:২২ মিনিটে অতঃপর নামায শুরু ৫ মিনিট পর ৬.২৭ মিনিটে (যদিও দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিম ১২-১৩ মিনিটের পার্থক্য) এবং শেষ হতে যদি ৬:৪০ মিনিট হয়, চাঁদ দেখা কমিটির মিটিং শুরু ৬.৪৫ মিনিটে এবং মিডিয়ায় প্রেস রিলিজ পাঠানো হয় ৭:১০ মিনিটে আর ৭:১৯ মিনিটে চাঁদ দেখতে না পাওয়ার সংবাদও মিডিয়াতে চলে আসে। তাহলে প্রশ্ন জাগে এই ৬:৪৫-৭:১০ মিনিট এই ২৫ মিনিটের মধ্যে ৬৪ জেলার চাঁদের রিপোর্ট এতো তাড়াতাড়ি আসলো কি করে? ১ মিনিট লাগলেও তো ৬৪ মিনিট লাগার কথা।
তাহলে পর্যালোচনার সময় গেল কোথায়?
আলোচকগণ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন দ্বীন ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য। প্রতিষ্ঠানটি বহু বছর যাবত সুনামের সাথে চাঁদ দেখার দায়িত্ব পালন করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ভুল সিদ্ধান্ত ও একগুয়েমি আচরণের কারণে এতদিনের প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও বিশ্বাস ক্ষুন্ন হচ্ছে।
আলোচকগণ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যা দেশে বিদেশে সুনাম কুড়াচ্ছে। কিন্তু বর্তমান জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ভুল তারিখে শবে বরাত পালনের সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভে সঞ্চার হয়েছে, কারণ পবিত্র শবে বরাত রাতটি ভাগ্য রজনী। যে দিবসে দ্বীনদার মুসলমানগণ সারা রাত জেগে ঈবাদত বন্দেগী করে এবং দিনের বেলায় রোজা রাখেন।
কিন্তু ভুল তারিখ ঘোষনার কারণে দেশে কোটি কোটি দ্বীনদার মুসলমানগণের পবিত্র শবে বরাত নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
পবিত্র শা’বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখার কতিপয় প্রত্যক্ষদর্শী: খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার হাতীমুড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফিয মুহম্মদ মূইনুল ইসলাম পারভেজ এবং মসজিদের মুসুল্লী হাফিয মুহম্মদ সোহেল,মুহম্মদ আব্দুল মান্নান, মুহম্মদ আবু তাহের, সাইফুল ইসলাম, ইমরান হুসাইন, মুহম্মদ হাসানসহ আরো অনেকে পবিত্র শা’বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখেছেন। উসমানপল্লী গ্রামের মসজিদ কমিটির সভাপতি মুহম্মদ কবীর হুসাইন।
মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জ জেলার মুক্তারপুর পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিরপাথর গ্রামের বাইতুল মামুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব মাওলানা মুহম্মদ মুহিবুল্লাহ স্থানীয় মুসল্লি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহম্মদ জাকির হোসাইন, মুহম্মদ আবু বকর শান্ত, মুহম্মদ দ্বীন ইসলাম সহ আরো অনেকে।