Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মোবাইল কলরেট থেকে ক্যানসার ও কিডনি রোগ চিকিৎসায় স্বাস্থ্যবীমার প্রস্তাব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৩৭ PM
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৩৭ PM

bdmorning Image Preview


মোবাইল ফোনের কলরেটে ও সারচার্জ বা লেভি যুক্ত করে দেশের ক্যানসার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যবীমা চালুর সুপারিশ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস এবং জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট। 

বর্তমানে দেশে ২৫ হাজার মানুষ ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর কিডনি রোগে আক্রান্ত ৬০ হাজার রোগীর সপ্তাহে তিন ডোজ ডায়ালাইসিস নিতে হয়। তবে যে সক্ষমতা আছে তাতে ১৫ হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া যায়। প্রস্তাবিত এই স্বাস্থ্যবীমা চালু হলে বিপুলসংখ্যক রোগী উপকৃত হবেন।

তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এই সারচার্জ বীমার প্রিমিয়াম হিসেবে গণ্য হবে। একজন গ্রাহক ক্যানসার বা কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নির্দিষ্ট বয়স থেকে ক্যানসার স্ক্রিনিং ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবেন।

এ বিষয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীমার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্যের একটি ট্রাস্ট, অন্যটি সলিডারিটি। ট্রাস্ট হচ্ছে কোনও ব্যক্তি যে টাকাটা দিচ্ছেন, যে উদ্দেশ্যে দিচ্ছেন, সে ধরনের কোনো ঘটনা যদি তার নিজের ক্ষেত্রে ঘটে, তাহলে সেটা থেকে তিনিও উপকার পাবেন। আর সলিডারিটি হলো একে অপরের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে অংশীদার হওয়া। একজন প্রিমিয়াম দিলেন, তাকে মনে করতে হবে অসুস্থ হলে তখন তিনি পাবেন, এখন অন্যের কাজে লাগছেন।

এই স্বাস্থ্যবীমার প্রস্তাবক ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, প্রতিবছর ক্যানসার ও কিডনি রোগীর সংখ্যা দেশে বাড়ছে। এসব রোগের চিকিৎসায় প্রচুর খরচ। ইনডিভিজ্যুয়াল ইন্স্যুরেন্স দিয়ে এই রোগে কাজ হবে না। যদি গ্রুপ ধরা যায়, তাহলে উপকার হবে। তখন আমরা চিন্তা করলাম, বাংলাদেশে বাইডিফল্ট একটি বড় গ্রুপ আছে মোবাইল সাবস্ক্রাইবার। প্রায় ১৫ কোটি মোবাইল ফোন সাবস্ক্রাইবারের কলরেটের ওপর একটা টাকা নির্ধারণ করে দিলে বিশাল একটা তহবিল গড়ে উঠতে পারে। সেই টাকা আদায়ে কোনও খরচও হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ইন্স্যুরেন্স করতে গেলে গ্রুপ হতে হবে এবং কম খরচে কীভাবে টাকাটা আদায় করা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। আমরা ১৫ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ১০ কোটিকে ইফেক্টিভ ধরেছি। ১০ কোটি ইউজারের কাছ থেকে যদি মাসে ২২ টাকা করে এটা নেওয়া হয় তাহলে বছরে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আসে। এই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের ক্যানসার এবং কিডনি হাসপাতাল থেকে যারা চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে বছরে দেওয়া যায়।

এ ব্যাপারে ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বীমার যেন একটা স্বচ্ছতা থাকে। টাকাটা কোনোভাবেই রোগীর মাধ্যমে দেওয়া যাবে না, সার্ভিস প্রোভাইডারদের মাধ্যমে দিতে হবে। তারপর প্রোভাইডার যখন ক্লেম করবেন তখন টাকাটা পাবেন। যদি ২২ টাকা করে সবার ওপরে ধার্য করা হয় তাহলে যারা গরিব তাদের ওপর বেশি চাপ পড়ে যাবে।’

বীমার মাধ্যমে চিকিৎসা পাওয়া বিষয় সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের দেশে এখন ২৫ হাজার মানুষ ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা চিকিৎসার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন। এই বীমা চালু হলে আমরা কমপক্ষে প্রত্যেক রোগীর পেছনে পাঁচ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে পারব, যারা বীমার আওতায় অপারেশন, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ও অন্যান্য ওষুধ পাবেন।

তিনি বলেন, দেশে ৬০ হাজার কিডনি রোগী চিকিৎসা নেন। তাদের প্রতি সপ্তাহে তিন ডোজ ডায়ালাইসিস নিতে হয়। এখন দেশের যে সক্ষমতা তাতে ১৫ হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া যায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় সিস্টেমগুলো দাঁড় করাতে হবে।

রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হসপিটালে যখন রোগী আসবেন তার রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। এটি বায়োমেট্রিক্স বা কার্ড হবে। তিনি হাসপাতালে সেবা নিয়ে যাবেন। তার সার্ভারে তথ্য চলে যাবে। বীমার মাধ্যমে হাসপাতালকে অর্থ দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যবীমার আরেক প্রস্তাবক জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্যবীমাটি এমনভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে এতে রোগী সরাসরি অর্থ পাবেন না, একইভাবে চিকিৎসার মূল্য পরিশোধ করবেন না। এতে রোগীকে কোনও হয়রানির শিকার হতে হবে না। এই বীমা চালু হলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পথে একটি ধাপ এগিয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ক্যানসার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্র (সিসিপিআর) আয়োজিত জাতীয় ক্যানসার সম্মেলনে স্বাস্থ্যবীমার ধারণাটি তোলা হয়। ওই সেশনে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত বিষয়টি খুবই পছন্দ করেন। পরে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে একটি চিঠি পাঠান তিনি। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবনাটি তৈরি করা হয়েছে।

মূল প্রস্তাবনাটি লিখেছেন ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ এবং সহযোগিতা করেছেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

Bootstrap Image Preview