বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন খানের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ স্থানীয়দের। এমনকি তার কর্মকাণ্ডে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত (ওসি) শাহিন খানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত বুধবার (২৭ মার্চ) বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম তাকে মেহেন্দিগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন। তবে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ওসি শাহিন খান মেহেন্দিগঞ্জ থানার দায়িত্বভার ছাড়েননি।
এ ব্যাপারে ওসি শাহিন খান বলেন, জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত হওয়ার কোনো আদেশের কপি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। এ কারণে আমি দায়িত্বভার ছাড়েননি।
জানা যায়, আটক করে থানায় নিয়ে উৎকোচ আদায়, ইগলু আইসক্রিমের ডিলারের ফ্রিজ এনে দীর্ঘদিন বাসায় রেখে দেয়া, আড়ৎ থেকে বিনা পয়সায় চালের বস্তা বাসায় নিয়ে যাওয়া, মুদি দোকান থেকে পেঁয়াজ-রসুন ও মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খেয়ে টাকা না দেয়াসহ নানা কারণে ওসি শাহিন খানকে নিয়ে অতিষ্ঠ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পাতারহাট বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গত অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় ওসি শাহিন খান পাতারহাট বাজারে ইগলু আইসক্রিমের ডিলার মো. বাবলুর দোকানের ফ্রিজ নিজের বাসায় নিয়ে যান। পরে অভিযানে জব্দ হওয়া মা ইলিশ ওসির বাসার ফ্রিজে মজুত করেন।
দীর্ঘদিন ফ্রিজ ফেরত না দেয়ায় একপর্যায়ে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান ডিলার বাবলু। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপে প্রায় চার মাস পর ইগলু আইসক্রিমের ডিলার বাবলু ফ্রিজ ফেরত পান।
এক মাস আগে পাতারহাট বন্দরের আব্বাসের চালের আড়ৎ থেকে দুই বস্তা চাল নিয়ে যান ওসি শাহিন খান। এর ১ সপ্তাহ আগে একই বাজারের সুনীল পালের মুদি দোকান থেকে নিয়ে যান পেঁয়াজ-রসুন। একই দিন কাপুড়িয়াপট্টির নন্দী বাবুর দোকান থেকে মিষ্টি খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যান ওসি।
বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট বন্দরের স্বর্ণকারপট্টির আজম হাওলাদারের চা দোকানে চা খেতে যান ওসি শাহিন খান। চায়ের টেবিল অপরিচ্ছন্ন দেখে পরিষ্কার করে দিতে বলেন ওসি। দোকানি আজম কাপড় দিয়ে টেবিল মুছে দেন।
কিন্তু এমন পরিষ্কার ওসির মনমতো হয়নি। দোকানি আজমকে টিস্যু দিয়ে টেবিল মুছে দিতে বলেন ওসি। আজমের দোকানে টিস্যু নেই, তাই টিস্যু কোথায় পাবেন প্রশ্ন রাখেন ওসিকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওসি শাহিন খান চা দোকানি আজমকে মারধর করেন। আজমকে রক্ষা করতে গেলে তাই ভাই আজাদ হাওলাদারকেও মারধর করেন ওসি। পরে দুই ভাইকে থানায় নিয়ে আটকে রাখেন ওসি। পরে বিষয়টি এমপি পংকজ নাথকে জানানো হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা থানায় থাকার পর এমপির নির্দেশে দুই ভাইকে ছেড়ে দেন ওসি।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর রহমান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন দোকানিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন এবং তাদের সাক্ষ্য নেন।