নওগাঁর রাণীনগরে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে নির্ধারিত সেচ মূল্যর দ্বিগুণ টাকা আদায়ের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ নলকূপ মালিকের জরিমানা করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-মামুন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একজনের ২ হাজার টাকা ও ৫ জনের ৩ হাজার টাকা করে মোট ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একইসাথে কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত এবং নির্ধারিত সেচ মূল্যর অতিরিক্ত টাকা কৃষকের কাছ থেকে কখনো আদায় করবেন না মর্মে ষ্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গিকারনামায় নলকূপের মালিকদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের রাণীনগর জোন'র সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান, রাণীনগর থানার প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ফলে দীর্ঘদিনের জিম্মিদশা থেকে কৃষকরা মুক্তি পেতে পারে বলে স্থানীয় চাষিরা জানিয়েছেন। দৃশ্যমান এমন আইনের প্রয়োগ অভিযুক্ত সবগুলো নলকূপে করলে এবছরই নির্ধারিত সেচ মূল্য বাস্তবায়ন, কৃষকের কাছ থেকে দ্বিগুণ সেচ মূল্য আদায় বন্ধ ও অতিরিক্ত সেচ মূল্য ফেরৎ পেতে পারে বলে চাষিরা আশা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করায় নলকূপ মালিকরা চাষিদের হুমকি-ধামকিসহ নানান কায়দায় বিভিন্ন অযুহাতে হয়রানি করছেন।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলায় কৃষকের কাছ থেকে মৌসুম শুরুতেই দ্বিগুণ সেচ মূল্য আদায়ের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা সেচ কমিটি নড়েচড়ে বসে।
এর প্রেক্ষিতে সেচ কমিটি জরুরী বৈঠকের মাধ্যমে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এলাকা ভেদে সর্বোচ্চ সেচ মূল্য ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত সেচ মূল্য মাঠ পর্যায়ের চাষিদের জানানোর জন্য উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে মাইকিংসহ সেচ মূল্য তালিকা লিফলেট আকারে বিতরণ করা হয়। তারপরও গভীর নলকূপ মালিকরা দ্বিগুণ মূল্য হারে মোট টাকার বাকি অংশ আদায়ে চাষিদের নানান কায়দায় চাপ প্রয়োগ করছেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সেচ কমিটি গত ২০ মার্চ ও ২১ মার্চ নলকূপ মালিক ও অপারেটরদের নিয়ে বৈঠক করে নির্ধারিত সেচ মূল্য নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরও নলকূপ মালিকরা অতিরিক্ত পাওনা টাকা আদায়ের জন্য চাষিদেরকে চাপা প্রয়োগসহ নাজেহাল করার চেষ্টা করলে নিরুপায় হয়ে বিক্ষুদ্ধ চাষিরা প্রশাসনকে জানান দিতে গত সোমবার উপজেলা পরিষদ চত্বর ও বরেন্দ্র অফিসে নানান শ্লোগানসহ বিক্ষোভ করেন।
বরেন্দ্র’র রাণীনগর জোন’র সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান নির্ধারিত সেচ মূল্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলে চাষিরা তাদের বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে স্ব-স্ব এলাকায় চলে যান।
এর প্রেক্ষিতে বুধবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে দ্বিগুণ সেচ মূল্য আদায়ের দায়ে উপজেলার সিম্বা, লোহাচূড়া ও দেউলা গ্রামের মাঠে স্থাপিত বরেন্দ্র’র আওতাধীন ৫ জন নলকূপ মালিকের ৩ হাজার টাকা করে ও ব্যক্তি মালিকাধীন একজনের ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মো: আল মামুন।
এছাড়াও অতিরিক্ত টাকা কৃষকদের ফেরতসহ নির্ধারিত সেচ মূল্যর অতিরিক্ত টাকা কৃষকের কাছ থেকে কখনো আদায় করবেন না মর্মে ষ্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গিকারনামায় নলকূপের মালিকদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে জানান, রাণীনগর বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী তিতুমীর রহমান।