Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘কেয়ারটেকার গুলি খেয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০১৯, ০৬:০৯ PM
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯, ০৯:১৮ PM

bdmorning Image Preview


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও আবাসিক ভবনগুলোতে মানুষের কি অবস্থা ছিল। হামলার ক্ষয়ক্ষতি কেন ছিল ইত্যাদি বিষয়ে সেখানে অবস্থানরত অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ বিডিমর্নিংকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ৯ মার্চ ২০১৭ সালে বিডিমর্নিং এর হেড অব নিউজ ফারুক আহমাদ আরিফ সাক্ষাৎকারটি নেন। ক্যামেরায় ছিলেন ইমরান হোসেন।

ফারুক আহমাদ আরিফ: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও আবাসিক ভবনগুলোতে কি অবস্থা বিরাজ করছিল?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: এলাকায় থম থম ভাব ছিল। বাবা বাহির থেকে খাবার কিনে এনে বললেন 'দেশের অবস্থা ভালো না'। পুরাতন ঢাকার আমাদের এক দুলাভাই এসে বললেন 'আমরা জানতে পেরেছি এখানে খুব খারাপ অবস্থা হবে। চল আমাদের বাসায় চল'। আমার ভাই তাবলিগ করতো, সে কাকরাইল মসজিদে গেছে। তাকে রেখে মা যাবে না জানিয়ে দিল। দুলাভাই মন খারাপ করে চলে গেলেন। আব্বা দরজায় আলমারি রেখে দিল। কিছুক্ষণ পর কারেন্ট চলে গেল। গোলাগুলি শুরু হলো। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ। আমাদের বেডরুমের দরজা বন্ধ। অনেকবার কড়াঘাত করে বেয়নট দিয়ে মেইন গেইট খুলে ফেললো। ভিতরের দরজাও আমরা খুলে দিতে বাধ্য হলাম। তারা আমার ভাইকে ধরে বারান্দায় নিয়ে যায়। সাথে বাবাকেও। তারা ভাইকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় যে কায়েদে আজম কলেজে পড়ে। এ কথা শুনে ছেড়ে দিল তাকে। আব্বার হাতে কোরআন, মুখে ফেনা। তিনি ভয় করছেন এবার তো মেরেই ফেলবে। তখন একজন মেজর বললো ডো'ন্ট টাচ। তারা বাবাকে ছেড়ে দিল। আমার ছোট বোন বেহুশ হয়ে পড়ে ভয়ে। আর্মিরা আমাদের ঘর সার্চ করতে চাচ্ছে এ কথা বলে যে এখানে স্টুডেন্ট আছে। কিন্তু আম্মা উর্দুতে বিষয়টি নাকচ করে দেয়। পাশে দেখি ফজলুর রহমান চাচাকে হত্যা করে রেখে গেছে। সাথে তার ভাগ্নে কাঞ্চন ভাইকেও। তিনি মৃত্তিকা বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। একজন কেয়ারটেকার গুলি খেয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল কিন্তু আমরা পশুর মতো নিজের জান নিয়ে পালিয়ে গেছি। গুলিবিদ্ধ লোকটাকে আমরা সাহায্য করতে পারলাম না, বিষয়টি তখন কত কঠিন ছিল! বেরিয়ে এসে দেখি সিঁড়িতে রক্তের বন্যা। উপরে লাশ আর লাশ। ২৩ নম্বর আবাসিক ভবনেই শতাধিক লাশ। পাশের বস্তিতে লাশ, জহুরুল হলে লাশ। তিনি বলেন, পাশের একটি বস্তির মধ্যে দেখি মৃত মায়ের লাশের পাশে একটি শিশু কান্না করছে। পরদিন দেখি জহুরুল হলের সামনে অনেক লাশ, কতগুলো গর্তে ফেলা হচ্ছে। আর্মি আর আর্মি।

ফারুক আহমাদ আরিফ: ঢাবির নিরাপত্তা কর্মীদের কি অবস্থা ছিল?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: তারা হয়তো বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা হবে। তারা সরে গিয়েছিল।

ফারুক আহমাদ আরিফ: ঢাবিতে ২ মার্চের পতাকা উত্তলনের কথা মনে পড়ে?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: আমি ছোট ছিলাম রাজনীতি বেশি বুঝতাম না। তবে রব ভাই, মাখন ভাই, এরা যাতায়াত করতো।

ফারুক আহমাদ আরিফ: আপনি বলছেন ২৫ মার্চ রাত ৯টায় ঢাবিতে হামলা হয়েছে। ২৬ তারিখও কি হয়েছে?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: হ্যাঁ। ২৬ তারিখ ঢাকায় কারফিউ ছিল। আমরা ২৭ মার্চ সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হই। ২৫ রাত থেকে চলা গোলাগুলি চলছেন। এখানে-সেখানে গুলি হচ্ছে। বোমা ফোঁটানো হচ্ছে।
 
ফারুক আহমাদ আরিফ: ঢাবিতে শহিদ সংখ্যা কত হতে পারে?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার হবে। কেননা আবাসিক ভবনের ছাদে লাশ, জগন্নাথ হলে মৃহদেহ। যেন ঝড় বয়ে গেছে। রোকেয়া হলের করুণ অবস্থা। মেয়ের লাশ। অনেকেই হয়তো বাঁচার জন্য চেষ্টা করছিল সেসব মুষ্ঠিবদ্ধ হাত। অনেকেই যখম হয়ে পড়ে আছে। বিশাল বস্তি জ্বালিয়ে দিয়েছে।  ড. মনিরুজ্জামানকে মারা হয়েছে। পিসি দেব, গুহঠাকুরতা তাদের ধরে এনে সিঁড়ির নীচে বসিয়ে গুলি করে। তিনি বলেন, আমাদের বাসাটি হলের পাশে ছিল সে জন্য হামলা করে। কিন্তু শহিদ মিনারের পাশে তাদের বাসায় কেন হামলা করা হলো। নাকি তাদেরকে লিস্ট করে করে হত্যা করা হলো। অবশ্য এর মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল পরে মারা যায়।  

ফারুক আহমাদ আরিফ: ঢাবিতে ছাত্ররা কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: প্রতিরোধ হয়তো গড়ে তোলেছিল। বন্দুক দিয়ে কি আর লাইফেলস, মর্টার, মেশিনগানকে প্রতিরোধ করা যাবে? হয়তো ক্ষুদ্র প্রতিরোধ তারা করেছিল।  

ফারুক আহমাদ আরিফ: বুয়েটে কোন হামলা হয়নি?
অধ্যাপক জিনাত আরা পারমিজ: না, তাদের টার্গেট ছিল ঢাবি। 

Bootstrap Image Preview