Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাহাড়ের টিলায় হচ্ছে ব্যাপক নাগা চাষ

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০১৯, ০৫:০৯ PM
আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯, ০৫:০৯ PM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নাগা মরিচের কম-বেশি চাষ হলেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশিরভাগ নাগা মরিচই উৎপাদন হচ্ছে শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জ এই দুই উপজেলায়। পাহাড়ি টিলায় এক বাগানেই লেবু গাছের নিচে উৎপাদন হচ্ছে নাগা মরিচসহ নানা জাতের লেবু।

উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ এই দুই উপজেলার উৎপাদিত ‘নাগা’ মরিচের বাৎসরিক বিক্রিমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ মরিচের ঝাল, ঘ্রাণ আর রং যে কাউকেই আকৃষ্ট করে। সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় ‘নাগা’ মরিচের ঘ্রাণ আর সাতকরা কিংবা আদা লেবুর স্বাদে অনন্য।

পাহাড়ি এ অঞ্চলে নানা জাতের লেবুর মধ্যে সাতকরা আর আদা এ দুই জাতের লেবুই স্থান করে নিয়েছে স্বাদ ও ঘ্রাণের অনন্য গুণে। একইভাবে এখানকার নানা জাতের মরিচের মধ্যে ‘নাগা’ ঘ্রাণ আর রং গৃহিণীদের পছন্দের বস্তু। ভোজন রসিকদের। নাগা মরিচ শুধু ঝাল মুড়ি, ভর্তা, চাটনি, শাক, সবজি কিংবা শুঁটকির তরকারিতে নয়।

এখন নাগা মরিচের আচারও ব্যাপক জনপ্রিয়। দেশের নামি দামি কোম্পানিগুলোও তৈরি করছে নাগা মরিচের আচার, জেলি ও সস। ফলে স্থানীয়ভাবে বাড়ছে এর উৎপাদনও। অল্প খরচে স্বল্প জায়গায় কম পরিশ্রমে অধিক লাভজন এ ফসল চাষে এখন ঝুঁকছেন স্থানীয় চাষিরা। নাগা মরিচ দেশ ছেড়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। জেলার ৭টি উপজেলার পাহাড়ি টিলায় দিন দিন নতুন করে বিস্তৃত হচ্ছে নাগা মরিচের চাষ।

সখের বশে বাড়ির আঙ্গিনা আর ক্ষেতের আইলের চাষকৃত নাগা মরিচ এখন পাহাড়ি টিলার বিশাল এলাকাজুড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে। কুলাউড়া, জুড়ী বড়লেখাসহ অন্যান্য উপজেলাতে কম বেশি নাগা মরিচ চাষ হচ্ছে। তবে ব্যাপক পরিসরে চাষ হচ্ছে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে। কমলগঞ্জের লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম পাশের পাহাড়ি এলাকায় ১৫-২০টি লেবু বাগানের সঙ্গে চাষ হচ্ছে নাগা মরিচ।

এখানকার চাষি নিয়ামুল হক তরফদারসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, লেবু বাগানের সঙ্গে তারা চাষ করছেন নাগা মরিচ। প্রতিটি বাগানে ১ হাজার থেকে শুরু করে ১৫-২০ হাজার গাছও লাগানো হয়েছে। লেবু গাছের গোড়া ঠাণ্ডা রাখতে লেবু গাছের গোড়ার পাশেই রোপণ করা হয় নাগা মরিচের গাছ। মরিচ গাছের পাতা ও ডালপালা রোদের আলো থেকে রক্ষা করে ঠাণ্ডা রাখে লেবু গাছ। আর লেবু গাছের গোড়ায় দেয়া সার গোবর থেকে খাদ্য পায় মরিচ গাছ। তাই উভয় ফসলই একে অপরের উপকারী হয়ে ভালো ফলন দেয়। ফলের লেবুর পাশাপাশি বাড়তি আয় হচ্ছে নাগা মরিচ দিয়ে।

শ্রীমঙ্গলের রাধানগরের কাজী জাহাঙ্গীর, তাহের মিয়া ও বিক্রমপাশী জানান, তাদের এলাকায় কম-বেশি নাগা মরিচের চাষ হলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক পরিসরে শতাধিক লেবু বাগানের সঙ্গে নাগা মরিচের চাষ হচ্চে শ্রীমঙ্গলের রাধানগর, বিষামনি, মহাজিরাবাদ, ডলুবাড়ি, ইস্পাহানীতে।

চাষিরা জানালেন, প্রাকৃতিক অবস্থা অনুকূলে থাকলে বছরে প্রতি একর জমিতে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে উৎপাদিত নাগা মরিচ বিক্রি করে সব খরচ শেষে ৮০ থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।

জেলার মধ্যে নাগা মরিচের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্রীমঙ্গল। এই বাজারের কয়েকজন আড়তদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালের দিকে লেবু বিক্রি শুরু হয়। আর তারপর দুপুর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ক্রেতাদের কাছে পাইকারি বিক্রি শুরু হয় নাগা মরিচের।

আড়ৎদার শফিক মিয়া জানান, হাজার বা বস্তা হিসেবে তারা নাগা মরিচ ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন। প্রতিদিন শ্রীমঙ্গল বাজারে ৩-৪ লাখ টাকার নাগা মরিচ বিক্রি হয়। এ ছাড়াও নাগা মরিচ ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এ মরিচের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাগা মরিচের সদস্যারা হলো সোলানেসি, জাত-ক্যাপসিকাম এবং প্রজাতি-ক্যাপসিকাম চাইনিজ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় আরো অধিক পরিমাণে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাগা মরিচ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড় টিলা বেষ্টিত এ জেলা নাগা মরিচ চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী।

Bootstrap Image Preview