শহীদ কারা, শহীদের পরিচয় ‘শহীদ’ আরবি ভাষার শব্দ। এ শব্দটি গোড়ার দিকে অর্থাৎ কুরআন নাজিলের আগ পর্যন্ত ‘শোহাদা’ হিসেবে সাক্ষ্যদাতা অর্থে আরবি ভাষায় ব্যবহৃত হতো। কুরআন নাজিলের পর শব্দটি ব্যাপকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে ওঠে এবং এটি একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মৃত্যু, যার দাফনও সম্পন্ন হয়ে থাকে বিশেষ পরিপন্থার মধ্য দিয়ে। এ শব্দের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ,পরিধি-সীমানা, মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য কেবল আল্লাহই নির্ণয় করেছেন।
কে, কিভাবে মৃত্যুবরণ করলে শহীদ হয় এবং মৃত্যুর পর সে কিভাবে কতটুকু মর্যাদা ভোগ করবে সেটাও বলে দেয়া হয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে। কাজেই শহীদের মর্যাদা পেতে হলে প্রথমে তাকে আল্লাহ, নবী-রাসূল, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, পুলসিরাত, আসমানি কিতাব, কিয়ামত ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে পরিপূর্ণ মুসলিম হতে হবে। কেননা ‘শহীদ’ এর ধারণাটি দুনিয়ার কোনো সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, আইনস্টাইন, লেলিন, কার্ল মার্কস, মাও সেতুং রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী কিংবা বিশেষ গুণসম্পন্ন বছরের শ্রেষ্ঠ কোনো বাঙালির কাছ থেকেও আসেনি। এটি এসেছে স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা ইমরানের ১৬৯ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন- ‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয় তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে কোরো না বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।’ সূরা মুহাম্মদের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যারা আল্লাহর পথে শহিদ হয় আল্লাহ কখনোই তাদের কর্ম বিনষ্ট করেন না।’
আবার সূরা আলে ইমরানের ১৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আল্লাহ অত্যাচারীকে ভালোবাসেন না।’
হযরত জাবের ইবনে আতীক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের নিকট শাহাদাৎ কি ? তারা বলল, আল্লাহর রাস্তায় মারা যাওয়া। তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় মারা যাওয়া ছাড়াও সাত প্রকার শাহাদাৎ রয়েছে:
১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
২. পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৩. ফুসফুসে রোগাক্রান্ত মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৪. পেটের রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৫. আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৬. ধ্বংস স্তুপের নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ;
৭. আর যে নারী পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায় সেও শহীদ। –মুসনাদে আহমদ : (২৩৮০৪), আবূ দাউদ : (৩১১১), নাসায়ী : (১৮৪৬)