রাজধানীর চকবাজার এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লেগে নিহত ৭৮ জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসকরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে লাশের ময়নাতদন্ত শুরু করেছে। নিখোঁজ আর নিহতদের খোঁজে স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যালে অপেক্ষা করছে।
তেমনই ভাবে অগ্নিকাণ্ডের পর একই পরিবারের তিন সদস্যের নিখোঁজ হওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে বসে আছেন আলী আহম্মদ। তাঁর ভাই সালেহ, ভাইয়ের স্ত্রী জাহেন ও আট বছরের ভাতিজা আফতাব নিখোঁজ।
আলী আহম্মদের প্রতিবেশী মাসুম জানান, তিনজনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আলী বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। সকাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে এভাবেই বসে আছেন। মর্গে খোঁজ করা হয়েছে কিন্তু কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
মাসুম বলেন, চকবাজারেই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাতিজা থাকেন। আগুন লাগার পর থেকে তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। আদৌ বেঁচে আছেন কি না, তাও জানি না।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাসুম বলেন, আগুন লাগার পর যতই পানি ঢালা হচ্ছিল ততই দাউ দাউ করে লাগছিলে। তীব্র আগুনের তাপে এলাকায় থাকা দায় হয়ে দাঁড়াচ্ছিলে। কেমিক্যালের গোডাউন থেকে ভয়াবহ এ আগুন লেগেছে।
এ বিষয়ে আলী আহম্মদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাকরুদ্ধ অবস্থায় কিছু বলতে পারেননি। অঝোরে কান্না করে যাচ্ছিলেন।
এদিকে, রাজধানীর চকবাজারে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে গঠন করা ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০টার পর রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুরিহাট্টা মসজিদ গলির রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। রাত ১টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে আগুন ভয়াবহ আকারে আশপাশের ৫টি বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি ইউনিট রাত ৩টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন লেগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। পুড়ে যাওয়া লাশগুলো শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনরা।
এদিকে আগুন লাগার ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও শোক এবং সমবেদনা জানানো হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের থেকে প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. জাভেদ পাটোয়ারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।