Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বই বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৫ PM
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:০৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করা হয়েছে। বইটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত।

আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্ম আলীর বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আগামী ১২ মার্চ স্বশরীরে হাজির হয়ে বইটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি কেন স্থান পায়নি এবং বইটিতে কেন ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বইটিতে ইতিহাস বিকৃতি ঘটেছে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর এই আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন, বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জুবায়ের রহমান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

এ বি এম আলতাফ হোসেন জানান, বইটি বাজার থেকে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বইটি যেন বই মেলাসহ কোথাও না পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বিবাদীদেরকে সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বইটির সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি প্রকাশিত হয়। বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং ইস্ট পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ অবস্থায় বইতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না থাকায় এবং ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাস বিকৃতি করায় বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ইকতেদার আহমেদ গত বছরের ২ অক্টোবর রিট আবেদনটি দায়ের করেন।

পরে ওই শুনানি নিয়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না থাকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। অর্থ সচিবসহ ছয়জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

ওই আদেশ অনুযায়ী গঠিত তদন্ত কমিটি হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেন আজ আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে না পাওয়ায় তা ছাপানো হয়নি মর্মে বইটির প্রণয়ন ও প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বলে কমিটি মনে করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১২৭ নম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অথচ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে স্থান পায়নি তার (জাতির পিতা) ছবি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতার ছবি ওই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্পাদনা কমিটি বলেছে গ্রন্থটিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনায়েম খানের ছবি না ছাপনোই শ্রেয় ছিল। এ দুজনের ছবি ছাপানোও ছিল সবার ভুল-একথা বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা স্বীকার করেন। তবে বইটিতে আইয়ুব খানের দমন-পীড়নের কথা রয়েছে। কিন্তু গ্রন্থটিতে তার একাধিক ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পরস্পরবিরোধী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পানা কমিটি বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতির পিতার ছবি খুঁজেছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত দল বঙ্গবন্ধুর ছবি সংগ্রহ করতে পারেনি। এ কারণে ছবি ছাপানো যায়নি। কিন্তু গ্রন্থটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংক’ এর ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। বিধায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অথবা বঙ্গবন্ধুর অন্য যেকোনো ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেত।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর শুভঙ্কর সাহার আইনজীবী জুবায়ের রহমান ভুল হয়ে গেছে উল্লেখ করে আদালতের কাছে মৌখিকভাবে ক্ষমা চান। পরে রিটকারীর আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন এর বিরোধীতা করে বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতি করেছে। ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা করা ঠিক হবে না।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘ক্ষমা চাইলেই হবে না। জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে দেখান। এটা আমরা শেষ পর্যন্ত দেখব।’ পরে শুভঙ্কর সাহাকে তলব করে ওই আদেশ দেন আদালত।

Bootstrap Image Preview