Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে চা উৎপাদনে ধস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:৪৬ PM
আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৩:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


চা উৎপাদনে সিলেটের হবিগঞ্জের ব্যাপক সুনাম থাকলেও এবার চুনারুঘাটের লস্করপুর ভ্যালির চা বাগানগুলোতে আগের তুলনায় ২০১৮ সালে উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিবৃষ্টি, অতিমাত্রায় খরা ও রেড স্পাইডার, হেলোফিলিটস এবং লিফ রাস্ট রোগের কারণে ২০১৭ সালের তুলনায় চায়ের উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৫ লাখ কেজি।

লস্করপুর ভ্যালি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভ্যালির ফাঁড়িসহ ১৭টি বাগানে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৬২ কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০১৮ সালে উৎপাদন কমে হয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২ কেজি; যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ২০০ কেজি কম। শতকরা হিসেবে কমেছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বিশেষ করে চা মৌসুমের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চা উৎপাদন ধরে রাখা যায়নি।

২০১৮ সালে মৌসুমের শুরুতেই খরার কবলে পড়ে ভ্যালির ছোটবড় ১৭টি চা বাগান। এপ্রিল থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও, অতিবৃষ্টির কারণে চায়ের পাতা চয়ন কমে যায়। এর মধ্যে দেখা দেয় রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিটস মশার আক্রমণ। এ অবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় চায়ের নতুন রোগ লিফ রাস্ট। এটিকে চায়ের নতুন রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভরা মৌসুমেও চা গাছে পাতা না পাওয়ায় চা শ্রমিকরা যেমন ক্ষতির মধ্যে পড়েছিলেন, তেমনি বাগানের উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক হারে। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসেই উৎপাদিত হয় ৬০ ভাগ চা। কিন্তু জুনের শুরুতেই ভ্যালির অধিকাংশ চা বাগানে এ রোগ দেখা দেয়ায় ক্ষতির মধ্যে পড়ে বাগানগুলো।

চা বাগান ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশে চায়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০১৭ সালে লস্করপুর ভ্যালিতে রেকর্ড চায়ের উৎপাদন হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে চায়ের উৎপাদন কমে যায়। বাগান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে না হলেও পরে ঘন ঘন অতিমাত্রায় বৃষ্টি এবং অতিমাত্রায় খরা হয়েছে। অর্থাৎ যখন বৃষ্টি হয় টানা বৃষ্টি, আবার যখন খরা শুরু হয় তখন টানা খরা হয়েছে। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণে চা শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি ছিল। অতিমাত্রায় খরায় চা গাছে দ্রুত হেলোফিলিটস ও রেড স্পাইডার ছাড়াও গত বছর জুন মাসের শুরুতেই এসব বাগানে দেখা দেয় নতুন রোগ লিফ রাস্ট। ২০১৭ সালে ভ্যালিতে বৃষ্টি হয়েছে ৩০৩ দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার কিন্তু ২০১৮ সালে বৃষ্টির পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ২৩২ দশমিক ৯১ সেন্টিমিটারে। এতে উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। অতিবৃষ্টিতে চা গাছের দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ির মারাত্মক ক্ষতি হয়। অতিবৃষ্টির কারণে গাছের কুঁড়ি নষ্ট হয়। এছাড়া বালিমাটিসমৃদ্ধ চা বাগান দ্রুত ভাঙার কারণে চা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

ভ্যালির ডানকান ব্রাদার্সের দেউন্দি, লস্করপুর, নালুয়া, ন্যাশনাল টি কোম্পানির চন্ডিছড়া, জগদীশপুর, তেলিয়াপাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন দেউন্দি, লালচান্দ সুরমাসহ সব বাগানে ১২ থেকে ৪০ শতাংশ চা উৎপাদন কম হয়েছে। মূলত ২০১৮ সালে ভ্যালির কোনো চা বাগানই তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।

এ বিষয়ে চন্ডিছড়া চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক ও ভ্যালির চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চা বাগানে খরার পাশাপাশি রেড স্পাইডার, হেলোফিলিটস নামক মশার আক্রমণ এবং নতুন রোগ লিফ রাস্টের কারণে মারাত্মকভাবে চায়ের উৎপাদন কমে গেছে।

ভ্যালির দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চায়ের উৎপাদন প্রতি বছর সমানভাবে হয় না। এক বছর বেশি হলে পরের বছর উৎপাদন কমে যায়, কারণ উৎপাদিত চায়ের ওপর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এছাড়া আবহাওয়া এবং রোগাক্রান্তের কারণেও উৎপাদন কমবেশি হয়।

Bootstrap Image Preview