Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আখাউড়ার সাড়ে ৩শ মাদক স্পট থেকে কোটি টাকা মাসোহারা, ওসি ক্লোজড

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:২৯ PM
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৮:২৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


সীমান্তে চোরাকারবারিদের সহযোগিতা ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আখাউড়া থানার সেই বিতর্কিত ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদারকে অবশেষে ক্লোজ করা হয়েছে।

শনিবার রাতেই তাকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া থানায় ওসি হিসেবে ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর যোগদান করার পর বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন মোশাররফ হোসেন তরফদার। ক্রসফায়ায়ের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এই থানার একটি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নে শতাধিক স্পট থেকে মাসে প্রায় কোটি টাকা মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর, চট্টগ্রাম ডিআইজি কার্যালয় ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করায় জেলায় ১৬ পুলিশ সদস্যের মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রমাণ পায়। তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদার। এত শত অভিযোগ থাকার পরও আখাউড়ার একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে দীঘদিন তিনি স্বপদে বহাল তবিয়তে ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, ৩ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়ে যায় ‘তুই তোকারি’র। আখাউড়াকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। তাকে ক্লোজড করার খবরে আখাউড়ার মানুষ উচ্ছসিত।

এদিকে ওসি মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আখাউড়া পৌর এলাকার সচেতন নাগরিকদের নামে ৩ পৃষ্টার একটি অভিযোগ দেওয়া হয় পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে। ওই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। আখাউড়ার ৫টি ইউনিয়নে সাড়ে ৩শ মাদক স্পট চলার সুযোগ দিয়ে ওসি প্রতিমাসে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা মাসোহারা তুলেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। তাকে টাকা দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়িয়েছে একাধিক মাদক মামলার আসামি।

ক্রসফায়ার এবং এক হাজারটি মাদক মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে ওসি মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এক বছরের বেশি সময় আখাউড়ার অর্ধশত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ওসি ৩৪ ধারায় চালান দিয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা, মামলার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে ওই অভিযোগে।

একাধিক মাদক মামলার আসামি কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আখাউড়ার শৌনলোহঘরের সুজন মিয়া, রাজাপুরের উজ্জল মিয়া, বাহার মিয়া, ইকবাল মিয়া, আমির হোসেন, দেবগ্রামের উজ্জল মিয়া-২, হুসেন মিয়া, বচিয়ারার আশরাফুল মুন্সি, বীরচন্দ্রপুরের জামাল মিয়া, রেলওয়ে পূর্ব কোলনীর শাহাব উদ্দিন, মনিয়ন্ধ দক্ষিনপাড়ার শাহআলম, ইমন আলী, মো: রুবেল, মো: আবুল কাশেম, আনোয়ার হোসেন, শ্যামল মিয়া, চান্দির জয়নাল মিয়া, আজমপুরের জহিরুল ইসলাম, নূরপুরের মিন্টু মিয়া, নারায়নপুরের সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ৩৪ ধারায় চালান দেন ওসি।

ওই অভিযোগে আরো বলা হয়, ওসি নিজে একটি বিকাশ নাম্বারে এবং আর্থি টেলিকম, কলেজপাড়া কামাল প্রফেসরের দোকান, দুলাল ঘোষের দোকান, রেলস্টেশন সংলগ্ন সুমনের দোকান থেকে বিকাশে মাদক কারবারীদের টাকা গ্রহণ করতো তার লোকজন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন, কনস্টেবল সামদানী, মেস ম্যানেজার শামীম, এসআই মোশাররফ ও হালিম এবং এখান থেকে বদলী হয়ে যাওয়া এএসআই সাদেকুর রহমান।

আখাউড়ার র্শীষ মাদক ব্যবসায়ী হান্নান মেম্বারের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টিও আলোচিত। হান্নান মেম্বারকে গ্রেফতারে নির্দেশ থাকলেও ওসি মোশাররফ তাকে গ্রেফতার করেনি। অভিযান চালিয়ে ছোটখাট মাদক ব্যবসায়ীদেরই গ্রেফতার করে চালান দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তার ক্রসফায়ার নিয়েও আছে অভিযোগ। মানিক সুত্রধর নামে এক যুবককে ক্রসফায়ার করার ঘটনা এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

থানার ওসি (তদন্ত) আরিফুল আমিন জানান, ‘ওসি দোতলার একটি রুমে থাকতেন। আমরা কিছু দেখিনি, জানিও না। কতো জনে কতো কিছু বলছে।’ তিনি বলেন, ‘ওসি মোশাররফ হোসেনকে জনস্বার্থে বদলি করা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে আখাউড়া থানার সদ্য সাবেক ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক না। জনস্বার্থে আমাকে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া আখাউড়া থানায় তো অনেকদিন চাকরি করলাম।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, ওসি মোশাররফ হোসেন তফরদারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview