Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আজ নয় রবিবার দুপুরে কবি আল মাহমুদের দাফন সম্পন্ন হবে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৩২ PM
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৯:৩২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ঢাকায় দুই দফা জানাজা শেষ করে আজ শনিবার বাদ এশা গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাফন করার কথা ছিলো সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদকে। কিন্তু আশপাশের জেলার মানুষের অনুরোধে দাফনের সময় পেছানো হয়েছে।

এ সম্পর্কে কবির পারিবারিক একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে কবির গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল মোল্লাবাড়ী গ্রামে পৌঁছতে বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া আশপাশের জেলার মানুষ কবিকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে জানাজায় শরীক হতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে দাফনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে।

দাফনের নতুন সময় সম্পর্কে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোববার দুপুরে কবির তৃতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

এদিকে শনিবার কবিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রথমে কবির লাশ বাংলা একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কবির লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। সেখানে শিক্ষাবীদ, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক ও রাজনীতিবীদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, চিত্র নায়ক হেলাল খান, জাসাস নেতা ও অভিনেতা বাবুল প্রমুখ।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কবি আল মাহমুদ ছিলেন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দেশের সর্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, সেখানে তার গুরুতপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি এই সমাজকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সে স্বপ্ন পূরণ হোক।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘উনার মতো কবি সাধারণত সবসময় সব সময় জন্ম হয়না। প্রতিটি ধারাতেই ওনার উপস্থিতি আমরা দেখেছি। এতে আমরা অভিভূত হয়েছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। সেই অনুপ্রেরণাটুকু উনি রেখে গেছেন আগামী প্রজন্মের জন্য।’

কবি আল মাহমুদের ছেলে মীর মোহাম্মদ মুনির বলেন, ‘উনার ইচ্ছা ছিল শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করবেন। আল্লাহ উনার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। তার অজান্তে কোনও ভুল করে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা।

এরপর জোহরের নামাজের পূর্বে প্রেসক্লাব থেকে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। সেখানে জোহরের নামাজের পর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে লাশ মগবাজারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে কবিকে তাঁর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ রোববার বাদ জোহর সেখানেই তাকে দাফন করা হবে বলে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই কবি রাজধানীর ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১১টার কিছু পরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আল মাহমুদের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কবি আল মাহমুদ ভর্তি ছিলেন ধানম-ির ইবনে সিনা হাসপাতালে। নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন কবি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তির পর ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। তিনি ওই হাসপাতালের নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হাইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কবির নিউমোনিয়া বৃহস্পতিবার থেকে বেড়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে প্রেসার কমে যেতে শুরু করে। তবে ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এরপর রাতে হঠাৎ করে হৃদপি- ঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তখন রক্তচাপ কমে যেতে থাকে। এতে মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন না পৌঁছালে মানুষ ক্লিনিক্যালি মারা যায়। কবির বেলাতেও সেটা হয়েছে।

সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দমন-নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে পঞ্চাশের দশকে এসে বাংলা কবিতার বাঁক বদল ঘটে। কবিতায় এ সময় রাজনীতি, আন্দোলন- সংগ্রমের পাশাপাশি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, লোকায়ত জীবন, সাম্যবাদ ইত্যাদি প্রবলভাবে উঠে আসতে থাকে। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে সোনালী কাবিন ছাড়াও লোক লোকান্তর ও কালের কলস রয়েছে। এছাড়া ডাহুকী, কবি ও কোলাহর, নিশিন্দা নারী উপন্যাস লিখেছেন আল মাহমুদ। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত ও গন্ধবণিক ।

আল মাহমুদ দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন আল মাহমুদ। স্বাধীনতার পর দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আল মাহমুদ।

Bootstrap Image Preview