Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বর্তমান ফিতনার এই যুগে মুসলমানদের বাঁচার উপায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:১৯ AM
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:১৯ AM

bdmorning Image Preview


বর্তমান অপসংস্কৃতির ফিতনা ফাসাদের সময়ে মুসলমানের ঈমান-আমল ঠিক রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাআলার সাহায্য ব্যতিত ঈমান-আমল ঠিক রাখার কোনো উপায় নেই। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার অন্যতম হলো, কিয়ামতের আগে রক্তপাত ও খুনাখুনি ব্যাপক হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই সত্তার কসম, যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ। তত দিন পৃথিবী ধ্বংস হবে না, যত দিন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না যে হত্যাকারীর জানা থাকবে না, কেন সে হত্যা করছে। নিহত ব্যক্তিরও জানা থাকবে না, কেন তাকে হত্যা করা হলো। প্রশ্ন করা হলো, এটা কিভাবে সম্ভব? রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রক্তপাত ও খুনাখুনি ব্যাপক হওয়ার কারণে এমন হবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭২৬৪)

ওসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর মুসলমানদের মধ্যে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সাহাবায়ে কেরাম কেউ কেউ নিজ ইজতেহাদ অনুসারে কোনো এক পক্ষে যোগ দিলেও অন্যরা কোনো পক্ষকেই সমর্থন করেননি। উসামা (রা.) আলী (রা.)-কে বলেন, ‘আপনি যদি কোনো বাঘের উদ্ধত থাবার সম্মুখেও হতেন, আমি আপনার সঙ্গ দিতাম। কিন্তু গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণকে আমি বৈধ মনে করি না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১১৩)

ফিতনা ও অন্তর্কলহ সম্পর্কে মহানবী (সা.) সতর্ক করে গেছেন। এক হাদিসে এসেছে, ‘সামনে এমন ফিতনা আসবে, যাতে উপবিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডায়মান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। দণ্ডায়মান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। চলমান ব্যক্তি ওই ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে, যে দৌড়াচ্ছে। ফিতনা যে কাউকেই গ্রাস করবে। তাই যে ব্যক্তি কোনো আশ্রয় পায়, সে যেন তা গ্রহণ করে—অর্থাৎ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৬০১)

মুসলমানদের পারস্পরিক রক্তপাতের বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া গুনাহর কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০৪৪)

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, একদল মুসলিম অন্য দলের ওপর অস্ত্রাঘাত করছে। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) ওপর অস্ত্র উঠাবে, সে আমাদের (ধর্মের) দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৮৪৪)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ক্রমেই যুগ সংকুচিত হবে, আমল কমে যাবে, কৃপণতা ও লোভ বাড়বে, ফিতনা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী জিনিস? নবী (সা.) ইরশাদ করেন, হত্যাকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড।’ (বুখারি: ৭০৬১)

ফিতনার সময় মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা হলো, যে ব্যক্তি কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পায়, সে যেন তা গ্রহণ করে, অর্থাৎ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকে। (বুখারি, হাদিস: ৩৬০১)

এই মুহূর্তে বিশ্বের সকল মুসলমান বিশেষত অপেক্ষাকৃত অধিক সংকটে নিপতিত মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রথম ও সর্বাপেক্ষা জরুরী ও কর্তব্য বিষয় হল, আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ, রুজু ইলাল্লাহ তথা একান্তভাবে আল্লাহ অভিমুখী হওয়া, তাওবা ও ইস্তিগফার করা, দুআ করা ও কাকুতি মিনতি সহকারে কান্নাকাটি করা।

কুরআন মজীদ বিষয়টাকে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে এবং বলছে- হে মুমিনগণ ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।-সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩

অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে- বরং তিনি যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনিই বিপদ আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন।-সূরা নামল, আয়াত ৬২

অন্যত্র বলা হয়েছে- মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর-বিশুদ্ধ তাওবা; তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন।-সূরা তাহরীম, আয়াত ৮

স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রীতি ছিল এই যে, যখনই তাঁর সামনে সামান্যতম উদ্বেগের কোন কিছুর আবির্ভাব ঘটত তখন তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দুআয় মশগুল হতেন।

বর্তমান এ পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরামকেও এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে সচেতন করণ, পাড়া-মহল্লায় মক্তব প্রতিষ্ঠা করণসহ স্থান ও কাল উপযোগী যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উলামায়ে কেরাম যদি তাদের কর্মপরিধিকে বিস্তৃত করেন তাহলে তাঁরা নিজেরাও নিরাপদ হবেন, দেশও নিরাপদ হবে।

Bootstrap Image Preview