Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভালোবাসা দিবস হোক সকল মায়ের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ

জামশেদুর রহমান
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১১ PM
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১১ PM

bdmorning Image Preview


পৃথিবীর আলো আমরা প্রত্যেকেই দেখেছি দু'জন মানুষের মাধ্যমে স্রষ্টার অপার মহিমায়। আর এই দু’জন মানব-মানবী হলেন আমাদের মা বাবা। ভূমিষ্ট হওয়ার পর মাটি স্পর্শ করার আগেই যার কোলে আমাদের বসবাস তিনি আমাদের গর্ভধারীনি মা। কষ্ট শব্দটি সব সময় তার কাছে অপরিচিতই মনে হয়েছে। এই ভূমণ্ডলে আসার আগে ১০ মাস ১০ দিন তাকে অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছি আমরা। কিন্তু ভূমিষ্ট হওয়ার পর আমাদের মুখ দেখে এই মমতাময়ীর ভূবন ভুলানো হাসি তার সব কষ্ট দেয় মুছে দেয়। নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায় তার সন্তান। আর এই সন্তানের মাঝেই সে খোঁজে পায় পৃথিবীর সব সুখ।

ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতে থাকে নিজের ছেলে বা মেয়েটিকে নিয়ে। রাত-দিন সময়-অসময় কিছুই বুজে না অবুঝ সন্তান। নিজের প্রয়োজন হলেই কান্না আর মা’কে জ্বালাতেন। মায়ের মুখে কি তবুও একটু বিরক্তির চিহৃ পাওয়া যায়, নিশ্চয়ই না। কারণ এই সন্তানই যে তার কলিজার টুকরো। শত কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে তিলে তিলে এই মা। কত শীতের রাত যে ভেজা বিছানায় নিজে ঘুমায় আর কত রাত যে নিদ্রহীনভাবে কাটিয়ে দেয়। তা শুধু এই মহামানবীই বলতে পারবে। তাই পৃথিবীর সব ভালোবাসাই ছোট হয়ে যায় মা’য়ের ভালোবাসার কাছে। সেই মা’কে ভালো রাখতে আমরা কিছু প্রয়াস করতে পারি।

এই ভালোবাসা দিবস এ তার প্রিয় মানুষগুলোকে একসাথে করে তাকে সারপ্রাইজ দেয়া যেতে পারে। তার প্রিয় রং এর একটি শাড়ি কিনে আনতে পারেন তার জন্য আপনি যাই কিনে থাকেন আপনার দেয়া সব কিছুই মা এর কাছে অনেক বড় কিছু। তাহলে চলুন এই ভালোবাসা দিবসটি হোক সকল মা’য়ের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

ভালোবাসা সকল প্রাণীকূলের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ দান। আর এ ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তার সেরা জীব মানুষ থেকে শুরু করে সকল প্রাণীর মাঝেই বিরাজমান। অন্যদিকে ভালোবাসার মাঝে হিংসা, বিভেদ, ভুল বুঝাবুঝির কারণে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের প্রতিহিংসা এমন কি প্রাণহানির মত ঘটনা ঘঠে সমাজে প্রতিনিয়ত। ধ্বংস করে মানুষের মনুষ্যত্বকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান বিশ্বে ভালোবাসা দিবসের দিনে বেড়ে যায় নানা ধরনের অপসংস্কৃতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বেড়ে যায় অশ্লীলতা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী এবং চিকিৎসক ছিলেন।

ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারা রক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন। সেই থেকেই ভালোবাসা দিবস পালিত হয়ে আসছে সারা বিশ্বে।

ভালবাসা দিবসের মানে কি শুধুই প্রেমিকের প্রেমিকার প্রতি কিংবা প্রেমিকার প্রেমিকের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের দিন? অবশ্যই না। একটু অন্যভাবে দেখলে ভালবাসা দিবস মানে সকলের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের দিন। কিন্তু কালের স্রোতে সে অর্থ বদলে শুধু  প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসার বিশেষ বহিঃপ্রকাশের দিন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমরা কি পারি না সেই দৃষ্টিভঙ্গিটা বদলাতে? ভালোবাসা দিবসের শুরুতেই হাজার হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। আর দিনের শেষে সেই ফুলই আবার পদপৃষ্ঠ হয় মানুষের। এইবার না হয় সেই ফুলের টাকাটা বাঁচালেন। ওই টাকাটা কিছু অসহায় মানুষ, ছিন্নমূল শিশুকে এক বেলা পেট ভরে খাইয়ে দিন, ওদের সাথে ভালবাসা ভাগ করে নিতে না হয় খরচ করলেন। আসুন না ছেঁড়া ময়লা কাপড়ে ঘুরে বেড়ানো রাস্তার অসহায় মানুষগুলোকে নিয়ে একটু ভাবি।

ভালোবাসা হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনুভূতি, আত্মার তৃপ্তি ও মনের প্রশান্তি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাঝে অশেষ ভালোবাসা দান করেছেন। যা কোনো বিশেষ দিন বা দিবসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও উত্তম চরিত্র দ্বারা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জয় করে নিয়েছেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন ইসলামের আলো। প্রতিটি ভালোবাসা হতে হবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি সান্নিধ্য লাভের জন্য। কিন্তু যে ভালোবাসায় শুধু আবেগ আর খারাপ চিন্তাধারা নিহীত সে ভালোবাসা মানুষের সকল ভালো কর্মগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ভালবাসা অবশ্যই একদিনের জন্যে নয় তা সারা জীবনের।

তবে একটি দিনকে একটু আলাদাভাবে ভালবাসা প্রকাশ করবার জন্যে, স্বরনীয় করে রাখবার মত কিছু স্মৃতি তৈরী করার জন্যে ভালো কিছু করা উচিত সেই সাথে সুখে দুঃখে চারপাশের মানুষের সাথে মিশে থাকা। পুরো পৃথিবী চলছে ভালবাসার উপরে। যেমন, মা বাবার ভালবাসা, বন্ধু বান্ধবের ভালবাসা, ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালবাসা, বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা, অসহায় মানুষের প্রতি ভালোবাসা এই রকম হাজারো ভালবাসা নিয়েই আমাদের জীবন। আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই আমরা যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পরি। আমাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার কিংবা আমাদের নিয়ে ভাবার অনেকেই হয়ত আছে। কিন্তু ওদের নিয়ে কারা ভাবে? ভেবেছেন কখনো? ভালোবাসার চেয়ে অবহেলাটাই ওরা বেশী পায়, আমাদের একটু খানি ভালবাসা ওদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।

শুধু বিশেষ দিনে নয় সুষ্ঠধারার ভালোবাসা জাগ্রত হোক সবার মাঝে সব সময়। তাই ভালোবাসা দিবস হোক প্রিয় মা’কে ঘিরেই। পৃথিবীতে যদি কেউ বেশি ভালোবাসে সে হচ্ছে গর্ভধারিনী মা। সেই ছোট থেকেই মা আমার যত্নের কোন ত্রুটি রাখেনি। একজন মা তার সন্তানকে যতটা আগলে রাখে। আমার মা ঠিক ততটাই আগলে রেখেছে আমাদের। তাই ভালোবাসা দিবস হউক সকল মা’য়ের প্রতি বহিঃপ্রকাশ।

লেখক, মো. জামশেদুর রহমান।

Bootstrap Image Preview