Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাবার বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ; ঘটনাটি আসলে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৪:০৬ PM
আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৪:০৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


রাজধানীর একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে তার বাবার বিরুদ্ধেই। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) এনে এ অভিযোগ করেন শিশুটির মা। তবে এ ঘটনায় থানায় এখনও কোনও মামলা করা হয়নি।

শিশুর মা অভিযোগ করে বলেন, শিশুটির বাবার নাম সাহেদুল্লাহ চিশতী। আড়াই বছর আগে তাদের আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় থাকতেন শিশুটির মা। খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় থাকতেন বাবা সাহেদুল্লাহ। তাদের দুই সন্তান। তালাকের পর প্রায়  ৬মাস বাবার কাছে ছিল শিশু দুটি। পরে মায়ের জিম্মায় যায় তারা।

মায়ের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে বাবা সাহেদুল্লাহ শিশুটিকে বাসা থেকে গাড়িতে করে স্কুলে নিয়ে যায়। পরে দুপুরে শিশুটি একাই স্কুল থেকে বাসায় আসে। সে জানায় তার পেট ব্যাথা। কারণ জানতে চাইলে বাবাকে কিছু না বলার শর্তে মাকে জানায়, রাস্তায় গাড়ির মধ্যে বাবা তাকে নির্যাতন করেছে। এর আগেও বাসায় একাধিকবার শিশুটির সঙ্গে বাবা একই কাজ করেছে বলেও সে মাকে জানায়।

সাংবাদিকদের শিশুটির মা জানান, প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন যে শিশুটি ধর্ষণের শিকার এবং এটিই প্রথমবার নয়।

তবে শিশুটির বাবা ঢামেকে গিয়ে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, অনেক আগেই শিশুটির মার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে তার। সম্প্রতি মেয়েকে পাওয়ার জন্য কোর্টে মামলা করবেন জেনে তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতেই মিথ্যা বলছে শিশুটির মা। এদিকে ওসিসিতে নেয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শ সত্ত্বেও সেখানে শিশুটিকে ভর্তি করেননি ওই মা। এমনকি এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগও করেননি। তবে ওই মায়ের দাবি, শিশুটির বাবা আগেও শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করেছে। গতকাল স্কুলে নেয়ার নামে শিশুটিকে ধর্ষণ করে তার বাবা।

জানা গেছে, গত আড়াই বছর আগে শিশুটির মায়ের সঙ্গে তার তালাক হয়ে যায় বাবা শহিদুল্লাহ ইসলামের। এরপর থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় থাকতেন শিশুটির মা। আর খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় থাকতেন বাবা শহিদুল্লাহ। শিশুটির মায়ের অভিযোগ, গতকাল সকালে শিশুটির বাবা শিশুটিকে বাসা থেকে স্কুলে নিয়ে যান। পরে দুপুরে মেয়েটি একাই স্কুল থেকে বাসায় আসে। পরে সে মাকে জানায়, ওর বাবাই ওকে যৌন নির্যাতন করেছে। এর আগেও একাধিকবার শিশুটির সঙ্গে সে একই কাজ করেছে।

শাহেদুল ইসলাম রাতেই ঢামেকে গিয়ে জানান, চরিত্র খারাপ বলে শিশুটির মাকে ছেড়ে দেই। এরপর আমার নামে খিলগাঁও ও রামপুরা থানায় মিথ্যা মামলাও করতে গেছিল এর আগে। আমাকে হুমকি-ধমকিও দেয়। কিন্তু কিছু করতে পারেনি। যেহেতু আমার মেয়ে ওর কাছে থাকে সে জন্য আমি প্রতিদিন ওদের দেখাশোনা করি, বাজারও করে দেই। ওর মা-ই আমাকে সকালে ফোন করে ওকে স্কুলে নিয়ে যেতে বলে। আমিই স্কুলে নিয়ে যাই। সাড়ে ১২টায় স্কুলে নামিয়ে আমি চলে আসি। পরে ওর মা আমাকে ফোন করে ধমকায়। তিনি বলেন, আমি বাচ্চা পাওয়ার জন্য কোর্টে মামলা করতে যাচ্ছি জেনেই সে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এ রকম অভিযোগ করছে। সে মেয়েকে এসব শিখিয়ে দিয়েছে।

শিশুটির বাবা আরও বলেন, ‘শুনেছি আমার মেয়ের শরীরে ধর্ষনের আলামত মিলেছে। কে আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে? তার বিচার চাই। মেয়ের মা অন্য কাউকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে।’ বিষয়টি তদন্ত করে দেখতেও অনুরোধ করেন তিনি।'

তবে ঢামেকের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক পরীক্ষায় শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছেন।

বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢামেক ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম জানান, মঙ্গলবার একটি শিশু ভর্তি হয়েছে। আজ শিশুটির বয়স নির্ধারণের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সব পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান তিনি। আজই শিশুটিকে রমনা থানায় পাঠিয়ে মামলার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান এই চিকিৎসক। মামলার পর শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া জানান, শিশুটিকে শিশুটির মা গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপরে শিশুটিকে ওসিসিতে ডাক্তার দেখানো হয়। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শের পরও শিশুটির মা শিশুটিকে ওসিসিতে ভর্তি করাতে চাননি। এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগও করা হয়নি বলে জানান রামপুরা থানার ওসি এনামুল হক ও খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান।

Bootstrap Image Preview