বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ ফিলিপাইনের কোথায় আছে তা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, রিজার্ভে চুরির বিষয় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে করা মামলায় তিন বছর আগের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত ও সুবিধাভোগীদের আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে এক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এসব ডলার ফিলিপাইনের কোথায় আছে তা আমাদের জানা আছে।
তিনি বলেন, ফিলিপাইনের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত এবং যারা সুবিধাভোগী তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে। ৬৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন (৬ কোটি ৬৫ লাখ) ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ে এ মামলা হয়েছে।
ইন্সটিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি)-এর ১১তম পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুর রহিম ও বিআইবিএম সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে করা মামলায় ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) এবং ওই ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডজনখানেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়।
এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি ৩৪টি মেসেজের মাধ্যমে আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যমে থেকে বলা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়। ফিলরেম মানি রেমিটেন্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মেলেনি।
গভর্নর ফজলে কবির জানান, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক আমাদের সঙ্গে এগ্রিমেন্ট করেছে মামলার প্রথম থেকে শুরু করে প্রতিটা ডলার উদ্ধার পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গেই থাকবে।
কতদিনের মধ্যে এ মামলার সুরাহা হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হতে পারে। যেখানে এ মামলা করা হয়েছে এখানে সাধারণত জলদি হয়।
ফিলিপাইনে অনেক বিলম্ব হতো। ওখানে অনেক দীর্ঘসূত্রতা আছে। নিউইয়র্কে অনেক সুবিধা। আমরা আশা করছি খুব বেশি সময় লাগবে না।
বাংলাদেশের মামলাকে ভিত্তিহীন বলে আরসিবিসি কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে সম্পর্কে প্রসঙ্গে ফজলে কবির বলেছেন, আরসিবিসি এটা বললেও বুঝতে হবে যে আরসিবিসির ওখানে সব টাকা গিয়েছিল।
অর্থাৎ ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসিতেই গিয়েছিল এবং সেটি চারটা ফেইক অ্যাকাউন্টেই গিয়েছিল, যে অ্যাকাউন্টগুলো বৈধ না। এ কাজের জন্য আরসিবিসিকে ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রেকর্ড সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে।
তাদের সাজা দিয়েছিল এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) পেসো, অর্থাৎ ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজেই আরসিবিসি এটা বললেই তো হয় না।
উল্লেখ্য, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা ( আটশত আট কোটি টাকা) ডিজিটাল পদ্ধতিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয় যা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত ছিল। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বাংলাদেশ একাউন্ট থেকে চুরি হওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের জুয়া বাজারে পাওয়া গেছে। এ অর্থ পাচার ফিলিপাইনের ইতিহাসে সর্ববৃহ অর্থ পাচার ঘটনা। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ৮৭০ মিলিয়ন ডলার লেনদেন অবরোধ করে।