Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভেনেজুয়েলা সংকট: পদত্যাগ করলে রাজক্ষমা করা হবে মাদুরোকে ইঙ্গিত গুয়াইদোর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:২৮ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:২৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


পদত্যাগ করলে রাজক্ষমা করা হবে বলে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা গুয়াইদো। গত মে মাসে ভেনেজুয়েলায় সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেন মাদুরো। তারপর থেকেই চরম রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা।

বিরোধীরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করে আসছে। আর এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো। বুধবার রাজধানী কারাকাসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদো বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে অবৈধ উল্লেখ করে নিজেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন।

ওই ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গুয়াইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপরই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন মাদুরো। তবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরও কয়েকটি লাতিন আমেরিকান দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

গুইাইদোর নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণার পর মাদুরোর পতন হয়ে নতুন করে নির্বাচন হবে নাকি অন্যকিছু ঘটবে দেশটিতে সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাদুরোর শাসনকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে গুয়াইদোকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের কথা তিনি বিবেচনা করছেন না। তবে যে কোন কিছুই হতে পারে।

ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ গুয়াইদোকে ভেনেজুয়েলার বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সমর্থন দিয়েছে কানাডা, কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনাও। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন করে নির্বাচনের দাবী জানিয়েছে। তবে, তাদের সমর্থনও গুয়াইদোর দিকেই গেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অদ্ভুত ঘোলাটে রূপ নিয়েছে।

ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটির এই সংকটকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো।

এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ু যুদ্ধের ছায়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। চলমান আন্দোলনের মধ্যে, বুধবার দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা জুয়ান গুয়াইদো নিজেকে নিজেই রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করায় রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক সংকটের ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে রাশিয়া ও চীনের অংশগ্রহণে। ক্ষমতাধর এই দুই দেশই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে তীব্র সমর্থন জানিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের মতই মাদুরোকে সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক, ইরান, মেক্সিকো, কিউবা ও আরো কয়েকটি দেশ।

একদিকে, গুয়াইদো দেশটির আত্ম-স্বীকৃত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অন্যদিকে, তাকে প্রকাশ্যে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় আত্ম-স্বীকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে ইঙ্গিত করে রাশিয়া বলছে, এর ফলে ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি অরাজকতা ও রক্তক্ষয়ের দিকে যাবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনার পরিণতি হবে সর্বনাশা। একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর অনধিকার হস্তক্ষেপ বা নাক গলানোর বিষয়ে তারা ঘোর বিরোধী। ভেনেজুয়েলার জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতাকে সুরক্ষা দিতে চীন ভেনেজুয়ালের পাশে আছে বলেও জানানো হয়েছে।

নিকোলাস মাদুরোকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সমর্থন জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ান তাকে ভাই মাদুরো বলে সম্বোধন করে তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন ইংরেজিতে উই আর মাদুরো বা আমরা মাদুরো লিখে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন।

অপরদিকে ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে একে অপরকে দোষ চাপানোর বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন সকল কূটনীতিককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভেনেজুয়েলা ছেড়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন মাদুরো।

এই নির্দেশের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ভেনেজুয়ালার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার্থে তারা আর মাদুরো সরকারের সঙ্গে নয় বরং গুয়াইদো মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন।

ভেনেজুয়েলায় সামরিক উপায় গ্রহণের বিষয়ে ২০১৭ সালে প্রথমবার উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প। এবার এই চলমান সংকটে আবারও একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখনি কোনো কিছুর পাকা সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি কিন্তু সম্ভাব্য সকল উপায়ের কথাই ভেবে দেখা হচ্ছে।

মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প হয়তো ভেনেজুয়েলার উপর তেল নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন।
কারণ ভেনেজুয়েলার রাজস্বের প্রধান উৎস তেল ক্ষেত্র। গত মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে বড় অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভেনেজুয়েলা। এই চুক্তিতে রাশিয়া থেকে গম রপ্তানি এবং ভেনেজুয়েলার তেল ও মাইনিং খাতের উপরে জোর দেয়া হয়েছে।

ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ক্ষমতাধর দুই পরাশক্তি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তবে, ভেনেজুয়েলার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো ভূমিকা নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সরাসরি দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গুয়াইদোকে আঞ্চলিক নেতারা যেভাবে সমর্থন জানিয়েছেন তাতে করে এটিকে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবার বেশ আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ার দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তুলেছিলেন মাদুরো। তাকে সরাতে এই দুই দেশের প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যেই অভিযোগ এনেছিলেন।

এমনকি সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের বৈঠকেও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান ডিকিউ বলেন, মাদুরোকে সরিয়ে ভেনেজুয়েলার মানুষকে মুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। ভেনেজুয়েলার বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করনীয়? সামরিক হস্তক্ষেপই কি উপায়? এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্টের কাছে। উত্তরে, সামরিক হস্তক্ষেপ নয় কূটনৈতিক পদক্ষেপের কথা ভাবছেন বলে জানান তিনি।

ব্রাজিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যামিলটন মোরাও বলেছেন, তার দেশ কোনো দেশে সামরিক হস্তক্ষেপে অংশগ্রহণ করে না।
তবে, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নির্বাচনী প্রচার কাজের সময় তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলাতে ব্রাজিলের সেনা মোতায়েন করা উচিত।

Bootstrap Image Preview