Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রেস বিজ্ঞপ্তির ৬দিনের মাথায় র‍্যাবের সফল অভিযানে আটক ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:৪৯ PM
আপডেট: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯, ০৩:৫২ PM

bdmorning Image Preview


আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদকের প্রেস বিজ্ঞপ্তির ছয় দিনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নেতাদের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার চালানোর সাথে যুক্ত পাঁচ জনকে আটক করেছে র‍্যাব-২।

শুক্রবার(১১ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ফেসবুকে অফিসিয়ালি কোনও পেজ নেই। আর যেগুলো আছে সে পেজগুলোর পরিচালকরা যদি এই পেজকে আনঅফিসিয়াল ঘোষণা না দেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর পরেই বিশেষ অভিযান শুরু করে র‍্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র‍্যাব-২ এর একটি দল মগবাজার, মোহাম্মদপুর এবং সাভার, ডেমরা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফেসবুক একাউন্ট খুলে প্রতারণার ঘটনায় পাঁচ জন সাইবার অপরাধীকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার কৃতরা হলেন- মো. ওমর ফারুক, মো. সাব্বির হোসেন, মো. আল আমিন, মো. আমিনুল ইসলাম আমিন এবং মো.মনির হোসেন। সে সময় তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ভিন্ন ভিন্ন মডেলের ১২ টি মেবাইল ফোন ও ১ টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া তাদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ৬টি পেজ, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ১ টি, আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠী সহ বিভিন্ন জাতীয় নেতাদের নামে সর্বমোট ৩৬ টি পেজ উদ্ধার করা হয়।

আজ(বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যােবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান আরো বলেন, ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজে আমরা জানতে পারি কিছু কুচক্রি মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিছু ফেক ফেসবুক একাউন্ট/পেজ থেকে নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য ও সংবাদ প্রচার করছে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-২ ফেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ও তাদের মূল হোতাদের আইনের আত্ততায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।

মুফতি মাহমুদ আরো বলেন, গ্রেফতার হওয়া মো. ওমর ফারুক (৩০) পেশায় ব্যবসায়ী। তার নিজ নামে ৬টি ফেসবুক আইডি আছে। সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ৬টি পেজ ব্যবহার করত। এছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ১ টি, আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জাতীয় নেতাদের নামে সর্বমোট ৩৬টি পেজ ব্যবহার করত।

তিনি তার পরিচালিত সকল ফেসবুক পেজ এ তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করেছেন। ফেসবুক পেইজের সুত্র ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগের বিশেষ এজেন্ট দাবী করে আসন্ন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ফোন করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানাচ্ছিলেন।

আরেক অপরাধী মো. সাব্বির হোসেন (২৪) পেশায় সাইবার কমিউনিকেশন এক্সপার্ট। সাব্বির সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের কৃত ২টি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ৪টিসহ মোট ৬টি মামলার আসামি। তিনি আগে তারেক জিয়া সাইবার ফোর্স, দেশ নেত্রী সাইবার ফোরাম পেইজের এডমিন ছিলেন।

সম্প্রতি তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তারেক জিয়া সাইবার ফোর্স, দেশ নেত্রী সাইবার ফোরামের জায়গায় শেখ হাসিনার পরামর্শ ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নাম সংযোজন করে তাতে নিরাপদ সড়ক চাই ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের উস্কানিমূলক ভিডিও পোষ্ট করতেন।

সাব্বির যে কোন প্রকার নতুন ইস্যুর আগমন হলেই তা সরকার বিরোধী অপপ্রচারে রুপান্তর করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে থাকেন।

ব্রিফিং এ আরো জানানো হয়, মো. আল আমিন (২৭) পেশায় বেসরকারী চাকরীজীবী। তিনি সাইবার অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত একটি পেইজের এডমিন। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের ছবি বিকৃত আকারে প্রকাশ করেন।

এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশকে ঘিরে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করে তাতে ভুয়া ছবি সুপার এ্যানিমেশন মাধ্যমে ফেসবুকে পোষ্ট করে থাকেন।

মো. আমিনুল ইসলাম আমিন (২৫) পেশায় ছাত্র। তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের ছাত্র সংগঠনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য। তিনি ইউটিউবে বিভিন্ন কমিক আইটেম প্রচার করে থাকেন।

তার ফেসবুক একাউন্ট মোট ৪ টি ও ফেইসবুক পেইজ ৩ টি। তিনি আওয়ামী লীগের লোগো দিয়ে প্রজন্ম চেতনা ও স্পাই উদ্দিন নামে ফেসবুক পেজে গুজব ও আন্দোলন সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও পোষ্ট করে ভাইরাল আকারে প্রচার করে জনমনে অসন্তোষজনক সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাত।

মো. মনির হোসেন (২৯) পেশায় ফটকা ব্যবসায়ী। গত ৭/৮ বছর ধরে ফেসবুক ব্যবহার করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে কেরাণীগঞ্জ থানায় বেশ ক’টি মামলা রয়েছে। তার নামে ৩টি ফেসবুক আইডি ও ৪টি পেইজ রয়েছে। তিনি সত্যের বিস্ফোরণ নামে একটি পেজের এডমিন।

মনির হোসেন তার ফেসবুক আইডি ও পেইজ হতে রাজনৈতিক অপপ্রচার, রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ ও বিভান্তিমূলক তথ্য প্রচার করত।

এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ বলেন, আটক আসামিদের মধ্যে দুইজনের নামে ইতিমধ্যে থানায় একাধিক মামলা আছে, অন্যান্যরা আরো কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview