Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সিলেটে অবাধে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব

সিলেট প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২০ PM
আপডেট: ০৪ জানুয়ারী ২০১৯, ০৬:২০ PM

bdmorning Image Preview


সিলেটে চলছে টিলা কাটার মহা উৎসব। জৈন্তাপুরের ৭নং- গ্যাসকূপ সংলগ্ন শিকারখাঁ গ্রামে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী পাহাড় (টিলা) কাটার মহোৎসব। 

সেই সাথে নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের চারা ও গাছ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।

অভিযোগ উঠেছে, টিলা কাটায় নিরবে সায় দিয়ে যাচ্ছেন জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড)’র বিরুদ্ধে। 

জানা গেছে, বিগত দু'সপ্তাহ ধরে হরিপুর গ্যাসফিল্ডের দুই কর্মচারীর নেতৃত্বে শিকার খাঁ গ্রামের বাবলু মিয়ার পাহাড় (টিলা) কেটে নির্বিচারে পরিবেশ বিধ্বংস করে টিলার মাটি ব্যবহার করছে হরিপুর গ্যাসফিল্ড কোম্পানীর আরো একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যারাডাইস কোম্পানী লিঃ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিপুর গ্যাসফিল্ড কোম্পানী কচুঘর বিলেরপাড় এলাকায় একটি নিম্নাঞ্চল ভূমি (প্লট) প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট বরাদ্দের কাজ টেন্ডার আহবান করা হয়। ওই টেন্ডার পেয়ে যান প্যারাডাইস কোম্পানীর সেক্রেটারি তারেক। 

পরবর্তীতে প্যারাডাইস কোম্পানীর সেক্রেটারি নিয়ম বর্হিভূত পুনরায় সাব-টেন্ডার দিয়ে দেন হরিপুর গ্যাসফিল্ডের দুই কর্মচারীকে। তারা হলেন, উমনপুর গ্রামের মঈনুল ও বালিপাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিন। 

এরপর প্যারাডাইস কোম্পানীর সেক্রেটারি কৌশলে সঁড়ে দাঁড়ান। শুরু হয়ে যায় এ দুই প্রভাবশালী কর্তার পরিবেশ বিধ্বংশী অভিযান। 

গোপনে শিকার খাঁ গ্রামের বাবলু মিয়াকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড় (টিলা) হাতিয়ে নেয় তারা। শুরু হয় পাহাড় (টিলা) গাছগাছালি কেটে ফেলার মহোৎসব। যদিও এব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এলাকার শান্তিপ্রিয় সচেতন নাগরিক পাহাড় (টিলা) কাটার বিরুদ্ধে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত স্বারকলিপি দাখিল করেছেন। 

কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসন আদৌ তেমন কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। অথচ প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে একটানা রাত ৮টা পর্যন্ত তিন তিনটি এস্কোবেটর (ক্যাটার পিলার) মেশিন দিয়ে বীরদর্পে পাহাড় (টিলা) মাটি কেটে পার্শ্ববর্তী কচুঘর বিলেরপাড় নামক স্থানে নিয়ে ফেলা হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, থানা পুলিশ ও ভূমি অফিসের দায়িত্বে থাকা তহশীলদার প্রতিসপ্তাহে বড় অংকের চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

তারা এসময় অভিযোগ করে বলেন, পাহাড় (টিলা) গাছগাছালি কাটার ফলে পাহাড়ি পর্যটন এলাকা এখন হুমকির মুখে। কারণ ওই এলাকায় উৎলারপাড় অপরুপ সৌন্দর্যের অগ্নিশিখা চব্বিশঘন্টা প্রজ্জলিত আছে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রথম গ্যাসকূপ হরিপুর গ্যাসকূপে এর প্রভাব বিস্তার করছে। যেকোন সময় কালের গর্ভে এসকল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । 

উল্লেখ্য থাকে যে, বিগত ২০১৮ সালের ১৯ডিসেম্বর ২০১৮ইং তারিখে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করেন স্থানীয় এলাকার সচেতন নাগরিক । 

এ বিষয়ে গ্যাসফিল্ড কর্মচারী সাব-টেন্ডার নেওয়া ব্যক্তি জালাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগযোগ করলে তিনি কৌশলে পাশ কাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি সিলেট গ্যাসফিল্ডে চাকরি করি, এ কাজটা গ্যাসফিল্ড নিয়েছে এবং এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে কাজ করার ব্যাপারে বলেছি। মাটি কাটার ব্যাপারে কিছু জানিনা। তার উপর সঙ্গী মঈনূলকেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল দিলে রিসিভ করেননি। একইভাবে প্যারাডাইস কোম্পানী লিঃ’র সেক্রেটারীও কল রিসিভি করেননি । 

অপরদিকে জৈন্তাপুর উপজেলার তহশীলদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এরকম সংবাদ পেয়ে আমি ও আমার এসিল্যান্ড স্যার ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি অনেক গাছগাছালি আছে । তবে এটাকে টিলা বলা যাবেনা , এটা সমতল ভূমির মতো দেখতে। 

এবিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (এসিল্যান্ড) জানান, আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে আসছি, সেখানে কোন টিলা কাটা হয় নাই ।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি মোবাইল ফোনে কল করে বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলে কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি । 

জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি মাইনূল জাকির জানান, তিনি এ রকম ঘটনা সর্ম্পকে কিছু জানেন না।  


 

Bootstrap Image Preview