বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝেই রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। এর পর ঘোষোণা করা হয় ভোটের ফল। গত দুই মেয়াদের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে এবারও রেকর্ড চতুর্থ ও টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দেশীয় গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি প্রভাবশালী এবং সুপরিচিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রধান শিরোনামে স্থান পেয়েছে শেখ হাসিনার বিজয়ের খবর।
রবিবার ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিনের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং বার্তা সংস্থাগুলোতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হতে থাকে বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর। এদিন সন্ধ্যার পর থেকে নির্বাচনের বিভিন্ন আসন ও কেন্দ্রের ফলাফল আসতে শুরু করলে সেগুলোও প্রকাশ করে বেশকিছু গণমাধ্যম। এরপর রাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নরঙ্কুস বিজয় লাভ করলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রধান শিরোনামে প্রকাশিত হতে থাকে এ সংবাদ।
কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রধান শিরোনামে শেখ হাসিনার বিজয় নিয়ে লেখা হয়- হাসিনা ‘বাংলাদেশ নির্বাচন জিতেছে’ যেখানে বিরোধীরা ভোট প্রত্যাখ্যান করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম হলো- শেখ হাসিনার বিজয় সুরক্ষিত যেখানে পুনঃনির্বাচনের দাবি বিরোধীদের।
‘জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি বিরোধীদলীয় নেত্রীর অনুপস্থিতিতে শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। একই শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস। নির্বাচনে ভোট কারচুপি হচ্ছে বলে প্রথমে খবর প্রকাশ করে রয়টার্স। পত্রিকাটি জানায়, বিরোধী দলের প্রার্থীরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করছেন। ‘নির্বাচনে কারচুপিতে ভোট পড়ছে কম’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
ভারতের এনডিটিভি এবং জি নিউজ বেশ গুরুত্ব সহকারে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিজয়ের খবর পরিবেশন করে। দুইটি গণমাধ্যমের ওয়েবসাইটেই শেখ হাসিনার ‘বিজয় চিহ্ন’ সম্বলিত ছবি প্রকাশি হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে লেখা খবরে এনডিটির শিরোনাম ছিলো- নির্বাচন জয় শেখ হাসিনার। জি নিউজের খবরের শিরোনাম ছিলো- শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে; পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি বিরোধীদের।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিজয়ের খবর প্রকাশিত করলেও নির্বাচনী সহিংসতা এবং বিরোধী পক্ষের ভোট বর্জন বা পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি উঠে আসে বিবিসি এবং দ্য গার্ডিয়ানের মতো সংবাদ মাধ্যমে। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন বিবিসির শিরোনাম হলো- পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি বাংলাদেশের বিরোধীদের। শিরোনামটির ‘কলার’ অংশে লেখা হয়- এক বিরোধী নেতা নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে সমালোচনা করেন। অন্যদিকে দ্য গার্ডিয়ানের শিরোনাম ছিলো- ‘হাস্যকর’ বলে নির্বাচন বয়কট, পুনঃভোটের দাবি (বিরোধীদের)।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ডন এও। শিরোনামে না এলেও টেকনিক্যাল লিড হিসেবে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিলো- বাংলাদেশের শেখ হাসিনার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত; পুনঃনির্বাচনের দাবি বিরোধীদের।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে ২৯৮টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৫৯টি আসন, জাতীয় পার্টি ২০টি আসন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টি আসন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ২টি আসন, তরিকত ফেডারেশন ১টি এবং জাতীয় পার্টি-জেপি ১টি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ৫টি আসন ও গণফোরাম ২টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র ৩ জন প্রার্থী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।